১৩৪ বছর পর প্রথম প্রকাশ্যে এলো ভ্যান গঘের আঁকা এই ছবি

Odd বাংলা ডেস্ক: কাঠ-খড়ের বেড়ায় ঘেরা ছোট্ট একটি জমি। তাতে মাথা উঁচু করে দাঁড়িয়ে রয়েছে একটা বাড়ি, উইন্ডমিল আর কিছু গাছ। সামনের রাস্তা ধরে হেঁটে চলেছে ঘনিষ্ঠ যুগল, খেলা করছে শিশুরা। আর পুরো দৃশ্যটাকেই যেন ধুয়ে দিয়ে যাচ্ছে বিকেলের কমলা রোদ। এই দৃশ্য আজকের নয়। উনিশ শতকের শেষ দিকের সময়ে মন্টমার্ট্রে শহরে এভাবেই গড়িয়ে পড়ত বেলা। এই দৃশ্য দেখা আসলে ভ্যান গঘের চোখ দিয়েই। এবার প্রথমবারের জন্য প্রকাশ্যে আসছে সেই ঐতিহাসিক ছবি।

ছবিটি মৃত্যুর মাত্র তিন বছর আগে একেছিলেন ভ্যান গঘ। আজ থেকে প্রায় ১৩৪ বছর আগে হবে। ১৮৮৭ সাল, তখন প্যারিসে তার ভাই থিও-র সঙ্গেই থাকেন ভ্যান। ভ্যান গঘের জীবনে নেমেছে অবসাদ, বিতৃষ্ণা আর ব্যর্থতা। ঠিক স্টারি নাইটের মতোই অন্ধকার তার আকাশ। প্যারিস শহরের মায়াবী বিভিন্ন রাস্তা নিয়ে সেই সময়ে একটি সিরিজ এঁকেছিলেন ভ্যান গঘ। মৃত্যুর সময় ভ্যানের মানসিক অবস্থা খুবই খারাপ ছিল। নিজেই নিজের মাথায় গুলি করে আত্মহত্যা করেছিলেন। নিজেকে নিজেই মুক্তি দিয়েছেন বিস্বাদ পৃথিবী থেকে।

তবে এই ছবিটি আঁকার সময়টাতে ভ্যান গঘের এতোটা খারাপ অবস্থা ছিল না। তখন মাঝেমধ্যেই পিঠে ক্যানভাস আর রং-তুলি নিয়ে বেরিয়ে পড়তেন তিনি। কখনও প্যারিস, কখনও প্যারিস সংলগ্ন নিরিবিলি অঞ্চলগুলোতে। সেখানে ঘণ্টার পর ঘণ্টা ধরে পর্যবেক্ষণ করতেন বিকেলের পরিণত হওয়ার দৃশ্য। তারপর দ্রুত তুলির টানে ক্যানভাসে ধরে রাখতেন তাদের। সেই সিরিজেরই অন্তর্গত ছবি এটি।

জীবিত অবস্থায় খুব কম সংখ্যক ছবিরই পরিণতি দেখে গিয়েছিলেন ভ্যান গঘ। জীবদ্দশায় তার অধিকাংশ ছবিই ক্রেতার অপেক্ষায় ছিল। তবে মন্টমার্ট্রের রাস্তার এই ছবিটি কিনে নিয়েছিলেন প্যারিসের এক ব্যক্তি। সেই ফরাসি পরিবারেই এক শতকের বেশি সময় ধরে সংরক্ষিত ছিল ছবিটি। এই ছবির মধ্যে দিয়েই উঠে আসে তখনও পর্যন্ত ‘আধুনিকতা’স্পর্শ করতে পারেনি প্যারিস সংলগ্ন এই শহরটিকে। প্রযুক্তির দিক থেকে ফ্রান্সের অন্যান্য অংশের থেকে অনেকটাই পিছিয়ে সে। উইন্ডমিলটিই সাক্ষী তার। সেইসঙ্গে ছবিতে ধরা পড়া নির্মায়মান বাড়িটি আজকের অতি বিখ্যাত স্যাক্রে-ক্রুর চার্চ।

ভ্যান গঘের আঁকা এই ছবিটির কথা এতদিন শুধু উল্লেখিত হয়ে এসেছিল ক্যাটালগে। ছিল না কোনো প্রতিকৃতিও। এবার বিক্রি হওয়ার তাগিদেই প্রথমবারের জন্য সামনে এল শতাব্দীপ্রাচীন বিখ্যাত এই ছবিটি। নিলাম কোম্পানি সোথবি-র মতে আনুমানিক ৮ মিলিয়ন ইউরো পর্যন্ত পৌঁছাতে পারে এই ছবির দাম। তবে নিলামের আগে এক মাস ধরে প্যারিস, আমস্টারডাম এবং হংকংয়ে সোথবির বিভিন্ন নিলামঘরে প্রদর্শিত হবে ছবিটি। শুধু অবিশ্বাস্য রঙের খেলাই নয়, ছবিটির উজ্জ্বল্য এবং ইতিহাসই এখন মূল আকর্ষণ হয়ে দাঁড়িয়েছে সংগ্রাহকদের কাছে।

শিল্পের ইতিহাসে এক রহস্যময় চরিত্র ভিনসেন্ট ভ্যান গঘ। তেমনই রহস্যে ঢাকা তার জীবন। কিন্তু মৃত্যুর ১৩০ বছর পরেও তাকে নিয়ে আগ্রহের শেষ নেই। মাত্র ৩৭ বছর বয়সে আচমকাই আত্মহত্যা করেছিলেন। যদিও তার বেশ কয়েক বছর আগে থেকে ভ্যান গঘ মানসিকভাবে অনেক ভেঙে পড়েছিলেন। নিজের কান নিজেই কেটে ফেলেছিলেন। এতে বোঝাই যায় নীল আলোর পেছনে তার জীবন কতটা বিশাদের কালো মেঘে ঢেকে ছিল।

কোন মন্তব্য নেই

Blogger দ্বারা পরিচালিত.