একজন পুরুষ, রূপই ছিল তার অস্ত্র, ধর্ষণ ও খুন ছিল নেশা

Highlights:

✔ টেড বান্ডি ছিলেন ভীষণ সুন্দর

✔ তাঁর সৌন্দর্য্যকে তিনি ব্যবহার করতেন মেয়েদের লোভ দেখিয়ে ধর্ষণ করার ক্ষেত্রে 

✔ টেডের সৌন্দর্য্যের ফাঁদে মেয়েরা পা দিয়ে দিত অজান্তেই তারপর তাদের পরিণতি হত মৃত্যু

Odd বাংলা ডেস্ক: সিনেমার জগতে তো কত শত খলনায়কের সঙ্গে দেখা হয় আমাদের। তবে যদি বাস্তবে এমন চরিত্রের দেখা মেলে। কি করবেন তখন? নিশ্চয় পালানড় পথই খুজবেন। আর যদি সাহসী হয়ে থাকেন, তবে একবার প্রতিরোধ করার চেষ্টা করে দেখবেন। তবে বাস্তবে কি এর কোনোটার সুযোগ পান ভুক্তভুগী! আচ্ছা চলুন আজ তেমনই বাস্তবের এক খলনায়কের গল্প জানাবো আপনাদের। যা যে কারোরই ভয় ধরিয়ে দিবে মনে। যিনি ছিলেন একজন ধর্ষক এবং খুনি। মাঝে মধ্যে হত্যার পর নারীর শরীরের বিভিন্ন অঙ্গ ভক্ষণও করতেন। 

বলছিলাম আমেরিকার কুখ্যাত সিরিয়াল কিলার টেড বান্ডির কথা। ১৯৪৬ খ্রিষ্টাব্দের ২৪ নভেম্বর আমেরিকার ভারমন্ট অঙ্গরাজ্যের বার্লিংটনে জন্ম নেন তিনি। জন্মের সময় নাম ছিল থিওডোর রবার্ট কোয়েল। তার মায়ের নাম ইলিনর লুইস কোয়েল। তবে তার বাবার আসল পরিচয় কখনোই জানা যায় নি। টেডের জন্ম সনদে লয়েড মার্শাল নামক বিমান বাহিনীর অবসরপ্রাপ্ত এক সৈনিককে বাবা হিসেবে দেখানো হয়েছে। পরবর্তীতে তার মা দাবি করেন যে, জ্যাক ওর্থিংটন নামক এক নাবিকের সঙ্গে মিলনের ফলে থিওডোরের জন্ম। যদিও পরবর্তীতে অনুসন্ধানে জানা যায় এই নামে নৌবাহিনীতে কেউ ছিলই না! এমন কী থিওডোরের পরিবারের অনেকে সন্দেহ করতো যে, তার বাবা আর কেউ না, তারই আপন নানা স্যামুয়েল কোয়েল! এমনই পিতৃপরিচয়হীন এক পরিবেশে নানা-নানির কাছে বড় হতে থাকে টেড। 

ছোটবেলা টেড অন্য আর দশজন শিশুর মতোই ছিল 

জন্মের পর টেডের মা তাকে তার দাদু-দিদার কাছে রেখে চলে যান। সেখানেই বড় হচ্ছিল টেড। ছোটবেলায় টেড আর দশজন শিশুর মতো স্বাভাবিকভাবেই বেড়ে উঠছিলেন। নিয়মিত চার্চে যেতেন, বিভিন্ন সামাজিক কর্মকান্ডের সঙ্গে জড়িত থাকতেন। আমেরিকান বয় স্কাউটে যোগ দিয়েও নিজের প্রতিভার স্বাক্ষর রেখেছিলেন তিনি। খেলাধুলায়ও টেড ছিলেন সমানভাবে দক্ষ। ১৯৫০ খ্রিষ্টাব্দে একটি ভালো চাকরির সন্ধানে তার মা চলে আসেন ওয়াশিংটন অঙ্গরাজ্যে। সেখানে জনি বান্ডি নামক ম্যাডিগান আর্মি হাসপাতালের এক বাবুর্চিকে বিয়ে করেন তিনি। টেড তার মায়ের নামের সঙ্গে মিলিয়ে নিজের নামেও ‘বান্ডি’ যোগ করে নেয়। সেই থেকে হয়ে ওঠেন টেড বান্ডি 

যখন টেড বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হলেন। তখনই তার সাধারণ জীবনে ভাঁটা পড়ে কিছুটা। তিনটি বিশ্ববিদ্যালয় পাল্টানোর পর অবশেষে রিপাবলিকান পার্টির পক্ষে ক্যাম্পেইন ওয়ার্কারের কাজ করতে থাকেন তিনি। ১৯৭১ সালে স্বেচ্ছাসেবক হিসেবে যোগ দেন সিয়াটল রেপ ক্রাইসিস সেন্টারে। সেখানেও তার চপলতা, মোহনীয়তা, আকর্ষণীয় ব্যক্তিত্ব দিয়ে সবার মন জয় করে নেন তিনি। তার সহকর্মীদের মতে, একজন দক্ষ আইনজীবী, রাজনীতিবিদ এমনকি সিনেটর হওয়ার যোগ্যতাও ছিল তার মাঝে। তবে টেড এসবের কিছুই হননি। তিনি হয়েছিলেন আমেরিকার সবচেয়ে ভয়ংকর সিরিয়াল কিলারদের একজন। 

ছয় ফুট লম্বা, বাদামী চুল আর নীল চোখা মানুষটির প্রেমে পড়ে যেতেন যেকোনো নারী

টেড বান্ডি ছিলেন প্রায় ছয় ফুট লম্বা। সেই সঙ্গে ঢেউ খেলানো বাদামী চুল, অদ্ভুত সুন্দর নীল চোখ তার ব্যক্তিত্বে এক অনন্য মাত্রা যোগ করেছিল। তার মতো একজন সুপুরুষকে ফিরিয়ে দেয়াটা মেয়েদের জন্য ছিল বেশ কষ্টকর। আর এ ব্যাপারটিকেই কাজে লাগিয়েছিলেন তিনি। নিজের ব্যক্তিত্বকে কাজে লাগিয়ে নারীদের নিজের শিকারে পরিণত করতেন তিনি। এভাবে তার শিকারে পরিণত হন শতাধিক তরুণী!

অফিসিয়ালি বান্ডির সিরিয়াল কিলিং মিশনের সময়কাল ছিল চার বছরের মতো। কিন্তু বান্ডির মতে, তিনি প্রথম অপহরণ করেন ১৯৬৯ খ্রিষ্টাব্দে আর প্রথম খুন করেন ১৯৭২ খ্রিষ্টাব্দে। টেড বান্ডির দ্বারা আক্রান্ত নারীদের মাঝে সন্ধান পাওয়া প্রথমজন হলেন ওয়াশিংটন বিশ্ববিদ্যালয়ের ২১ বছর বয়সী ছাত্রী লিন্ডা অ্যান হিলি। ১৯৭৪ সালের ১লা ফেব্রুয়ারি তিনি দরজা ভেঙে লিন্ডার ঘরে ঢোকেন, আঘাত করে তাকে অজ্ঞান করেন, তাকে জিন্স এবং শার্ট পড়ান এবং শেষে বিছানার চাদরে মুড়ে নিয়ে পালিয়ে যান। পরদিন তার বন্ধুরা এসে কেবল বালিশে এক ইঞ্চি লম্বা রক্তের দাগই পেয়েছিল। এরপর প্রায় প্রতি মাসেই একজন করে ছাত্রী নিখোঁজ হতে থাকে। প্রতিবারই বান্ডি একই কৌশলের আশ্রয় নিতেন। তিনি হাতে প্লাস্টার করে তার ভক্সওয়াগন বিটল গাড়িটি নিয়ে বেরিয়ে পড়তেন। তারপর সুবিধাজনক জায়গায় কোনো তরুণীকে পেলে তার কাছে গাড়িতে মালামাল তুলে দেয়ার জন্য সাহায্য চাইতেন ভাঙা হাতের অজুহাত দিয়ে। তরুণীটি যখনই সরল মনে তাকে সাহায্য করতে গাড়িতে উঠতো তখনই সে বান্ডির শিকারে পরিণত হতো।

শুধুমাত্র মাঝে সিঁথি করা নারীদের টার্গেট করতেন টেড 

সেই বছরেরই ১৪ই জুলাই তিনি সিয়াটলের লেক সামামিশ স্টেট পার্কে যান একই বেশভূষায় সজ্জিত হয়ে। সেদিন ওখানে প্রায় ৪০ হাজারের মতো মানুষ সাঁতার কাটা এবং সূর্যস্নানে মগ্ন ছিল। এমনই এক পরিবেশে বান্ডি ২২ বছর বয়সী জ্যানিস গ্রাহামের কাছে সাহায্য চান। তিনি জ্যানিসকে অনুরোধ তার গাড়িতে নৌকাটা তুলে দেয়ার ব্যাপারে একটু হাত লাগাতে। বান্ডির অবস্থা দেখে জ্যানিসের মায়া হয়। সেই সঙ্গে বান্ডির আকর্ষণীয় ব্যক্তিত্ব তো আছেই। তাই তিনি রাজি হয়ে যান। তবে গাড়ির কাছে এসে জ্যানিস আর কোনো নৌকা দেখতে পান না। এতে তিনি আশ্চর্য হলে বান্ডি বলেন যে, নৌকাটা পাহাড়ের উপরেই তার এক আত্মীয়ের বাসায় আছে। এমন কথায় জ্যানিসের সন্দেহ হয়। তিনি তাই স্বামীর সঙ্গে দেখা করার অজুহাত দিয়ে সেখান থেকে সরে যান। 

জ্যানিসই পরে পুলিশের কাছে বান্ডির সঠিক বর্ণনা দিতে সক্ষম হন। একজন শিকারকে হারিয়ে বান্ডি কিন্তু দমে যান নি। সেদিনই ঐ এলাকা থেকে জ্যানিস অট (২৩) এবং ডেনিস নাসলুন্ড (১৮) নামের দুই তরুণী নিখোঁজ হন। দু’মাস পর তাদের মৃতদেহ পাওয়া যায়। সেগুলো ছিল নগ্ন। দেখে বোঝাই যাচ্ছিলো যে ধর্ষনের পর তাদের খুন করা হয়েছে।

খুনের সময় ব্যবহৃত ভক্সওয়াগন বিটল গাড়িটি

প্রত্যেক সিরিয়াল কিলারেরই হত্যার একটি ধরণ থাকে। বান্ডির খুন করার প্রকৃতি ছিল একেবারেই আলাদা। তিনি শুরুতেই তরুণীটিকে শক্ত কিছু দিয়ে আঘাত করে অচেতন করতেন, এরপর গলা টিপে তাকে মেরে ফেলতেন। কখনো কখনো তিনি ধর্ষণ করতেন। কখনো আবার মৃতদেহের সঙ্গেও মিলিত হতেন।

১৯৭৫ খ্রিষ্টাব্দের ১৬ই আগস্ট পুলিশের হাতে প্রথমবারের মতো ধরা পড়েন টেড বান্ডি। হাইওয়ে পুলিশ রবার্ট হেওয়ার্ডের সামনে দিয়ে বান্ডি দ্রুত বেগে লাইট বন্ধ করে গাড়ি চালিয়ে গেলে তিনি তাকে ধাওয়া করেন। বারো ব্লক পরে বান্ডি গাড়ি থামাতে বাধ্য হন। হেওয়ার্ড তার গাড়ি সার্চ করে স্কি মাস্ক, গ্লাভস, ক্রোবার, হ্যান্ডকাফ এবং এরকম আরো কিছু জিনিস পান যাতে তাকে তিনি ডাকাত বলে সন্দেহ করেন। পরে তার বাসা সার্চ করেও সন্দেহজনক কিছু না পাওয়ায় তাকে ছেড়ে দেয়া হয়। এবার ভাগ্য আসলেই বেশ ভালো ছিল বান্ডির। কারণ পাশেই একটি রুমেই তিনি তার হাতে খুন হওয়া তরুণীদের ছবি লুকিয়ে রেখেছিলেন।

তবে এরপর থেকেই গোয়েন্দাদের নিয়মিত নজরদারিতে থাকেন তিনি। গোয়েন্দারা তার খুন সংঘটিত হওয়া এলাকার আশেপাশের মানুষদের জিজ্ঞাসাবাদ করে খুনীর যে বর্ণনা পেতেন তা অনেকটাই মিলে যাচ্ছিল বান্ডির সঙ্গে। ফলে নিয়মিত বিভিন্ন কারণে আদালতে হাজিরা দেয়া বা পুলিশের জেরার মুখোমুখি হতে থাকেন তিনি। অবশেষে ১৯৭৬ খ্রিষ্টাব্দের ৩০ জুন থেকে তাকে ১৫ বছরের কারাদন্ড দেয়া হয়। এরপর বান্ডির জীবন মোড় নেয় আরেকদিকে।

টেডের গাড়িতে পাওয়া হত্যায় ব্যবহৃত বিভিন্ন সরঞ্জাম 

১৯৭৭ খ্রিষ্টাব্দে টেড বান্ডিকে স্থানান্তরিত করা হয় অ্যাসপেনে। সেখানে বিচারকার্যে তিনি কোনো উকিলের সহায়তা নিতে রাজি হন নি বরং নিজেই নিজের পক্ষে লড়াই চালানোর সিদ্ধান্ত নেন। এমন এক পরিস্থিতিতে একদিন তিনি আদালতের লাইব্রেরিতে নিজের কেসের জন্য বই খোঁজার কথা বলে যান। তখন কোনো হাতকড়া বা পায়ে লাগানো শেকল থেকে মুক্ত ছিলেন বান্ডি। আর এই সুযোগটাকেই তিনি পুরোপুরি কাজে লাগান। আস্তে করে তিনি একটি বইয়ের তাকের পেছনে থাকা জানালা খুলে দোতলা থেকে ঝাঁপিয়ে পড়েন। এত ওপর থেকে লাফ দেয়ায় তার ডান পা মচকে যায়। এরপর আর দেরি না করে বেশভূষা পাল্টে সোজা চলে যান দক্ষিণে অ্যাসপেন পর্বতে। সেখানে ছয়দিন থাকার পর শহরে আসার পরপরই আবার তিনি পুলিশের হাতে ধরা পড়েন।

এরপর বান্ডি আবারো পালানোর পথ খুঁজতে থাকেন। তিনি কারাগারের ভেতরের কারো কাছ থেকেই একটি হ্যাক্‌স ব্লেড জোগাড় করেন। তারপর প্রতিদিন সন্ধ্যায় অন্যান্য কয়েদীরা যখন গোসল করায় ব্যস্ত থাকতো তখন তিনি সিলিং-এ গর্ত করতে ব্যস্ত থাকতেন। এভাবে কিছুদিনের মাঝেই প্রায় এক ফুটের মতো একটি গর্ত করে ফেলেন তিনি। এর মাঝে তিনি নিজের ওজনও কমান ১৬ কেজির মতো। এবার সেই গর্ত দিয়ে চিলেকোঠায় উঠে তিনি পালানোর রাস্তা খুঁজতে লাগলেন। দুর্ভাগ্যজনকভাবে চিলেকোঠাটি সবগুলো রুমের সঙ্গেই যুক্ত ছিল। তাই বান্ডি যখন উপরে চলাচল করতেন তখন নিচে কম-বেশি শব্দও হতো। কারাগারেরই কেউ অফিসারদের এই ব্যাপারটা জানালেও তারা পাত্তা দেন নি। আর এটাই বান্ডির জন্য শাপে বর হয়ে দাঁড়ায়। 

এরপর আসলো ডিসেম্বরের ৩০ তারিখ। অফিসাররা সবাই তখন আছে বড়দিনের আমেজে। বন্দীরাও পরিবারের লোকদের সঙ্গে দেখা করতে ব্যস্ত। বান্ডি তখন তার রুমে থাকা বই আর ফাইলগুলোকে কম্বলের নিচে এমনভাবে রাখলেন যাতে মনে হয় কম্বলের নিচে তিনি ঘুমাচ্ছেন। তারপর সিলিং ভেঙে লাফিয়ে নামলেন খোদ চিফ জেলারের রুমে! বান্ডির ভাগ্য এবারো সুপ্রসন্ন। জেলার তখন তার স্ত্রীকে নিয়ে ইভিনিং শোতে ছিলেন। বান্ডি এবারো আগের মতো করে বেশভূষা পাল্টে বেরিয়ে পড়লেন রাস্তায়। পরদিন প্রায় ১৭ ঘন্টা দেরিতে যখন বান্ডির পালানোর বিষয়টি ধরা পড়লো ততক্ষণে বান্ডি শিকাগোতে মুক্তির স্বাদ নিতে ব্যস্ত!

একশর বেশি নারীকে হত্যা করেছেন এবং মাঝে মাঝে নারীদের বিভিন্ন অঙ্গ খেয়েছেনও

শিকাগো থেকে মিশিগান, আটলান্টা হয়ে অবশেষে জানুয়ারির ৮ তারিখে ফ্লোরিডার টালাহাসিতে ক্রিস হ্যাজেন ছদ্মনামে একটি রুম ভাড়া নেন টেড বান্ডি। তার এই নতুন আবাসস্থলটি ফ্লোরিডা স্টেট বিশ্ববিদ্যালয় থেকে মাত্র দেড় ব্লক দূরে অবস্থিত ছিল। এরপর থেকে নিয়মিত বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাম্পাসে, নানা কর্মকান্ডে ক্রিস হ্যাজেন নামক এক লোককে দেখা যেতে লাগলো। কিন্তু কেউই জানতো না এই হ্যাজেনের আড়ালে লুকনো বান্ডির কথা।

এরপরই এলো সেই বিভীষিকাময় রাত। সেদিন রাত প্রায় তিনটার দিকে কম্বিনেশন লক খুলে কাই ওমেগা সরোরিটি হাউজে প্রবেশ করলেন সিস্টার নিটা নিয়ারি। বেশ রাত হয়ে যাওয়ায় নিঃশব্দে হাঁটছিলেন তিনি। হঠাৎ করে ওপর তলা থেকে বেশ জোরে কারো দৌড়ানোর শব্দ পেলেন তিনি। এর পরপরই তার সামনে দিয়ে পালিয়ে যান বান্ডি। তার মাথায় ছিল কালো টুপি, গায়ে কালো কোট আর হাতে কাঠের তৈরি শক্ত কোনো জিনিস। নিয়ারি ভয় পেয়ে তাড়াতাড়ি তার রুমমেট ন্যান্সি ডাউডিকে জাগিয়ে তোলেন। এরপর দু’জনে মিলে হাউজের প্রেসিডেন্ট জ্যাকি ম্যাকগিলকে ঘুম থেকে ওঠান। হঠাৎ করে সরোরিটি হাউজেরই আরেক সিস্টার কারেন চ্যান্ডলার টলতে টলতে তার রুম থেকে বেরিয়ে আসেন। তাকে দেখে ভয়ে পেছনে সরে আসেন তিনজন। কারণ চ্যান্ডলারের পুরো মাথা ভেসে যাচ্ছিলো রক্তে। তারা দৌড়ে গেলেন তাকে সাহায্য করতে। 

চ্যান্ডলারের রুমে প্রবেশ করে তারা আবারো ধাক্কা খেলেন। সেই রুমেরই আরেক বাসিন্দা ক্যাথি ক্লেইনার হতবুদ্ধি হয়ে বসে আছেন খাটের কিনারায়। চ্যান্ডলারের মতো তারও সারা মাথা ভেসে যাচ্ছে রক্তে। তাড়াতাড়ি ডাকা হলো পুলিশকে। পুলিশ এসে সবগুলো রুম সার্চ করতে লাগলো। কিন্তু একটি রুমে গিয়ে ডাকাডাকি করেও কোনো সাড়া পাওয়া গেলো না। অফিসাররা রুমে ঢুকে সেই রুমের বাসিন্দা লিসা লেভিকে পেলেন শরীর উপুড় করে চাদর দিয়ে মোড়ানো অবস্থায়। তার সারা শরীর রক্তে ভেসে যাচ্ছিলো। একজন অফিসার তার গায়ের চাদর সরাতেই দেখা গেলো তার নিতম্বে কেউ যেন কামড়ে দিয়েছে। লেভি আর তখন বেঁচে ছিলেন না। হঠাৎ করে কেউ কেউ বলাবলি করতে থাকলেন হাউজের আরেক সিস্টার মার্গারেট বোম্যানকে পাওয়া যাচ্ছে না। পুলিশ এবার মার্গারেটের রুমে প্রবেশ করলো। পুরো রুমে তখন রক্ত, দেয়াল জুড়ে ছিল রক্তের ছোপ ছোপ দাগ। মার্গারেটকে এতটাই নির্মমভাবে মারা হয়েছিল যে দেখে মনে হচ্ছিলো তার শিরশ্ছেদ করা হয়েছে। ক্লেইনার এবং চ্যান্ডলার বেঁচে যান। কিন্তু আজীবন মানসিক এবং শারীরিকভাবে তাদেরকে সেই রাতের স্মৃতি বয়ে বেড়াতে হয়।

বেশ কয়েকবার পুলিশের কাছে ধরা পড়েছেন এবং পালিয়েছেনও অনেকবার 

দেড় ঘন্টা পরে ছয় ব্লক দূরের ৪৩১ ডানউডি স্ট্রিটে বান্ডি আবারো আঘাত হানেন। এবার তার শিকার ছিলেন চেরিল থমাস নামক এক তরুণী। তার কান্নার আওয়াজ শুনে পাশের অ্যাপার্টমেন্টের বাসিন্দা তাকে ফোন করেন। ফোনের শব্দে ভয় পেয়ে পালিয়ে যান বান্ডি। দ্রুত খবর দেয়া হয় পুলিশে।

সময় কেটে যেতে লাগলো। বান্ডিকেও হন্যে হয়ে খুঁজতে লাগলো পুলিশ। অবশেষে এলো সেই দিন। ১৯৭৮ খ্রিষ্টাব্দের ১৫ই ফেব্রুয়ারি অফিসার ডেভিড লী পেনসাকোলার সার্ভেন্টেস স্ট্রিটে গাড়ি নিয়ে টহল দিচ্ছিলেন। হঠাৎ করে একটি রেস্টুরেন্টের পেছনে দাঁড় করানো হলুদ রঙের একটি ভক্সওয়াগন দেখতে পান তিনি। রেস্টুরেন্টটি ততক্ষণে বন্ধ হয়ে গিয়েছিল। অফিসারের তাই সন্দেহ হলো। তিনি গাড়ি নিয়ে ভক্সওয়াগনটিকে অতিক্রম করে গেলেন। কিন্তু রিয়ারভিউ মিররে নজর রাখতে থাকলেন গাড়িটির ওপর। বান্ডিও মনে হয় বুঝতে পেরেছিলেন ব্যাপারটি। তাই তিনি গাড়ি নিয়ে দ্রুত সেখান থেকে সটকে পড়তে চাইলেন। 

এরইমধ্যে বান্ডির গাড়ির নাম্বার পুলিশ স্টেশনে জানিয়ে লী জানতে পেরেছিলেন যে, গাড়িটি চুরি করা। তাই লীও ভক্সওয়াগনটিকে অনুসরণ করতে লাগলেন। দ্রুত বেগে গাড়ি চালিয়ে টেড বান্ডি পুলিশ অফিসার ডেভিড লীর হাত থেকে মুক্তি পেতে চাইলেন, কিন্তু পারলেন না। একটু পরই বান্ডি তার গাড়িটি থামাতে বাধ্য হন। কোমরে থাকা পিস্তলটি হাতে নিয়ে খুব সাবধানে বান্ডির দিকে এগোতে থাকলেন লী। বান্ডি তার স্বভাবসুলভ ধূর্ততা দিয়ে লীর চোখ ফাঁকি দিতে চাইলেন, কিন্তু পারলেন না। এরপর হঠাৎ করেই তিনি লীকে আক্রমণ করে পালাতে চাইলেন। কিন্তু লীর দক্ষতায় সেটি আর সম্ভব হলো না। ধরা পড়লেন টেড বান্ডি, তাকে নিয়ে আসা হলো পুলিশ স্টেশনে। বান্ডির ছদ্মনামের কারণে পুলিশ আসলে তখনো জানতেই পারেনি কত বড় এক মাছ তাদের জালে সেদিন ধরা পড়েছে!

অবশেষে ১৯৮৯ খ্রিষ্টাব্দের ২৪ জানুয়ারি সকাল ৭টা বেজে ৬ মিনিটে তার মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করা হয়

এরপরের ঘটনা দ্রুততার সঙ্গে এগোতে লাগলো। বান্ডির বিরুদ্ধে যেসব খুনের অভিযোগ আনা হতে লাগলো তার প্রায় সবই প্রমাণিত হতে লাগলো। তার মৃত্যুদন্ডাদেশ নিশ্চিত করেন বিচারপতি এডওয়ার্ড ডি কাওয়ার্ট। এত দোষে দোষী হওয়া সত্বেও বান্ডির কাছে সুন্দরী তরুণীদের থেকে নিয়মিত চিঠি আসতো। সেখানে তারা তাকে সাপোর্ট দিতো, এমনকি তাকে বিয়ের প্রস্তাবও দিতো। কেউ কেউ তো বিশ্বাসই করতে পারতো না যে, তার মতো একজন সুপুরুষের পক্ষে এসব করা সম্ভব!

অবশেষে ১৯৮৯ খ্রিষ্টাব্দের ২৪ জানুয়ারি সকাল ৭টা বেজে ৬ মিনিটে তার মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করা হয়।  তবে টেডির সঙ্গে হারিয়ে গেছে কিছু প্রশ্ন। কেন বেছে বেছে শুধুমাত্র মাঝখানে সিঁথি করা ঘন চুলের নারীরাই টেড বান্ডির আক্রমণের শিকার হয়েছিলেন? কেনই বা টেড এই কাজ করলেন।  

কোন মন্তব্য নেই

Blogger দ্বারা পরিচালিত.