সুইডিশ প্রতিরক্ষা ব্যবস্থার ওপর যুক্তরাষ্ট্রের গুপ্তচরবৃত্তির অভিযোগ

Odd বাংলা ডেস্ক:  মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র স্ক্যান্ডিনেভিয়াভুক্ত দেশ ডেনমার্কের সহায়তায় বেশ কয়েকজন সুইডিশ রাজনীতিবিদ এবং একাধিক ইউরোপীয় শীর্ষ রাজনীতিবিদদের বিরুদ্ধে গুপ্তচরবৃত্তি করেছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। সুইডিশ রাষ্ট্রীয় টেলিভিশন-এসভিটি, ডেনমার্ক রেডিও, এনআরকে, এনডিআর, ডাব্লুডিআর, সাদডিউশচে জেইতুং এবং লে ম্যান্ডের সঙ্গে যৌথভাবে একটি অনুসন্ধানমূলক ডকুমেন্টারিতে সম্প্রতি এই তথ্য প্রকাশ করা হয়েছে। 

ডেনিশ ডিফেন্স ইন্টেলিজেন্স সার্ভিস (এফই) ‘অপারেশন ডানহ্যামার’ কোড নামে একটি তদন্ত করে যেখানে জানা যায়, ডেনমার্কের গোপন সহায়তায় আমেরিকান গোয়েন্দা সংস্থা-এনএসএ সুইডিশ রাজনীতিবিদদের বিরুদ্ধে গুপ্তচরবৃত্তি করেছিল।

ড্যানমার্ক রেডিওর এক প্রশ্নের জবাবে গোপন একটি সূত্র সুইডেনের গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিদের ওপর নজরদারি সম্পর্কে বলেন, ‘মার্কিন যুক্তরাষ্টের গোয়েন্দা সংস্থা-এনএসএ, ডেনমার্কের ডিফেন্স ইন্টেলিজেন্স সার্ভিস-এফই-এর সহযোগিতার মাধ্যমে সুইডিশ ব্যবসায়িক স্বার্থসংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের ওপর ছাড়াও সুইডেনের বিভিন্ন রাজনীতিবিদদের ওপর গুপ্তচরবৃত্তি করার বিষয়টি আমি আগেই টের পেয়েছিলাম।’

ঠিক কতজন সুইডিশ রাজনীতিবিদ বা কর্মকর্তার বিরুদ্ধে গুপ্তচরবৃত্তি করা হয়েছিল এবং কতজনের টেলিফোনে আড়িপাতা হয়েছিল তা উদ্ঘাটন করা সম্ভব হয়নি বলে জানায় সুইডিশ টেলিভিশন-এসভিটি। 

ডকুমেন্টারিতে মাত্র কয়েকজনের নাম প্রকাশ করা হয়, যেখানে রয়েছে জার্মান চ্যান্সেলর অ্যাঞ্জেলা মার্কেল এবং দেশটির সাবেক পররাষ্ট্রমন্ত্রী ফ্রাঙ্ক-ওয়াল্টার স্টেইনমিয়ারের মতো শীর্ষ স্থানীয়রা। এছাড়া উঠে আসে আরো বেশ কয়েকজন উচ্চ পর্যায়ের রাজনীতিবিদের নাম, যাদের বিরুদ্ধে নিয়মিত গুপ্তচরবৃত্তি করেছিল মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, জানায় তদন্তে অংশগ্রহণকারী ডেনমার্ক রেডিও।

সুইডেনের প্রতিরক্ষামন্ত্রী পিটার হাল্টকভিস্ট জানিয়েছেন, তিনি মাত্র এক সপ্তাহ আগে এসভিটির মাধ্যমে মার্কিনীদের গুপ্তচরবৃত্তি সম্বন্ধে অবহিত হয়েছেন। সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘আমি ডেনমার্কের প্রতিরক্ষা মন্ত্রীর সঙ্গে যোগাযোগ করেছি এবং সরাসরি জানতে চেয়েছি যে, ডেনমার্কের এমন কোনো কর্তৃপক্ষ বা সংস্থা রয়েছে কি যাদের মাধ্যমে বা সহযোগিতায় সুইডেনের বিভিন্ন ব্যক্তির ওপর আড়িপাতা হয়েছে?’ এর সরাসরি জবাব না দিয়ে ডেনমার্কের মন্ত্রী শুধু বলেন, মিত্রদের ওপর গুপ্তচরবৃত্তি বা আড়িপাতা ‘অগ্রহণযোগ্য’। তবে অভিযোগটি যদি সত্য হয়, তাহলে তা অবশ্যই গুরুতর। হল্টকভিস্ট সংবাদ মাধ্যমকে বলেন, সুইডিশ রাজনীতিবিদ ও কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে গুপ্তচরবৃত্তি এবং আড়িপাতা আমরা তা মানতে পারি না’ বলে জানান সুইডেনের প্রতিরক্ষামন্ত্রী।

ডেনমার্কের প্রতিরক্ষামন্ত্রী ট্রাইন ব্রামসেন ২০২০ সালের আগস্টেই এই তথ্য পেয়েছিলেন বলে জানা যায়। তবে এসভিটি এবং ডেনমার্ক রেডিও যখন গত নভেম্বরে সুইডিশ সমরাস্ত্র-কারখানা এবং যুদ্ধবিমান প্রস্তুতকারক এসএএবি এবং জেএএস গ্রিপেন-এর বিরুদ্ধে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের এনএসএ কর্তৃক গুপ্তচরবৃত্তির খবর প্রকাশ করে, তখন বিষয়টি প্রথম সবার গোচরে আসে। এপর্যন্ত সুইডিশ প্রতিরক্ষা গোয়েন্দা সংস্থার উচ্চ পর্যায়ের পাঁচজন অফিসারকে তাঁদের কর্মস্থল ছাড়তে বাধ্য করা হয়েছে। তবে ডেনমার্কের সরকার গণমাধ্যমের দেওয়া তথ্যের ওপর আস্থাশীল নয় বলে তা ‘অগ্রহণযোগ্য’ বলে মন্তব্য করেছে। এ পর্যন্ত পাওয়া খবরে জানা যায়, শুধু সুইডেন জার্মানিই নয়, এমনকি নরওয়ে এবং ফ্রান্সের ওপরেও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের এনএসএ গুপ্তচরবৃত্তি ছাড়াও আড়ি পেতেছে।

কোন মন্তব্য নেই

Blogger দ্বারা পরিচালিত.