কেবল মানুষ নয়, দুঃখে আত্মহত্যা করে পশু-পাখিও, প্রতিবেদনটি পড়ে আপনি অবাক হবেন



Odd বাংলা ডেস্ক: ২০১১ সালে চাইনিজ একটি মিডিয়া দাবি করে, একটি বাইল ফার্মে (Bile Farm- পিত্ত থলি থেকে পিত্ত রস সংগ্রহ করার ফার্ম) আটকে রাখা একটি ভালুক তার সন্তান এবং নিজেকে হত্যা করে ঐ অত্যাচারপূর্ণ পরিবেশ থেকে মুক্ত হতে। ২০১২ সালে সাইকোলজি-টুডের (Psychology Today) একজন ব্লগার একটি গাধার উপর প্রবন্ধ লেখেন। যেখানে তিনি দাবি করেন, বাচ্চা মারা যাওয়ার পর গাধাটি ইচ্ছাকৃতভাবে জলে ডুবিয়ে নিজেকে হত্যা করে। গত বছর আমার একজন বন্ধু আমাকে লুসি (Lucy) নামক একটি কুকুরের গল্প শুনিয়েছিল, যেটি তার মালিক মারা যাওয়ার পর খাবার খাওয়া বন্ধ করে দেয় এবং ৩ সপ্তাহ পর ইচ্ছাকৃত অনাহারে মারা যায়।

প্রাণীরাও কি আত্মহত্যা করতে পারে? যদিও অনেকেই প্রশ্নটি তুচ্ছভাবে দেখে থাকেন এবং আত্মহত্যা শুধুমাত্র মনুষ্য বিষয় হিসেবে মনে করে থাকেন। আমরা এই প্রশ্নটিতে একটু থামতে চাই এবং এই বিষয়ে একটু গভীর পর্যালোচনা করতে চাই। প্রশ্নটিকে তুচ্ছভাবে দেখার পিছনে আমাদের যে বিশ্বাসটি কাজ করে তা হলো, প্রাণীদের মধ্যে আত্ম-সচেতনতা (Self-Reflective), উদ্দেশ্যমূলক আচরণ (Purposeful Behavior) ইত্যাদি অনুপস্থিত, যেগুলো মূলত মানুষের আত্মহত্যার জন্য দায়ী। নিজেকে হত্যা করা বিবর্তনের একটি মূল সূত্র ‘নিজ-অস্তিত্ব রক্ষা’র (Impulse of Self Survival) বিপক্ষে চলে যায় এবং আত্মহত্যা করতে এই সূত্রের বিপক্ষে স্বাধীনভাবে সিদ্ধান্ত (Free Will) নিতে হয়। এখানে মৃত্যুর সম্পর্কে ধারনা থাকাটাও জরুরী এবং আমরা বিশ্বাস করি যে প্রাণীদের মধ্যে এগুলো অনুপস্থিত। কিন্তু, প্রাণীদের বুদ্ধিমত্তা নিয়ে গবেষণাপত্রসমূহ এবং এদের মৃত্যু সম্পর্কিত আচরণ নিয়ে যে ডাটাবেস গড়ে উঠেছে সেদিকে আলোকপাত করলে আমাদের এই অন্ধ বিশ্বাসটি অনেকাংশেই হ্রাস পাবে।

প্রাণীরাও কি আত্মহত্যা করতে পারে?

সম্প্রতি অ্যানিম্যাল সেন্সিয়েন্স (Animal Sentience) এ প্রকাশিত একটি গবেষণাপত্রে, সান ফ্রান্সিসকো স্টেট ইউনিভার্সিটির দর্শনের অধ্যাপক ডেভিড পেনা গুজম্যান (David Peña-Guzmán) বিশদভাবে তুলে ধরেছেন, প্রাণীরাও সচেতনভাবে এমন আচরণ করতে পারে যাতে তাদের ক্ষতি এমনকি মৃত্যুও ঘটতে পারে। মানুষের আত্মহত্যার সাথে এর বৈজ্ঞানিক এবং দার্শনিকভাবে কোন পার্থক্য নেই। পেনা গুজম্যান কিছু বিষয় ধরে নেন যেসব বিষয় থেকে বলা যেতে পারে প্রাণীরা আত্মহত্যা নাও করতে পারে। উদাহরণস্বরূপ, মানুষেরই যে শুধু আত্মসচেতনতা, সামাজিক অবস্থান বুঝতে পারার সামর্থ্য আছে সেই বৈজ্ঞানিক ডাটাবেস নিয়ে গবেষণা করেন, যেগুলোকে মূলতঃ মানুষের আত্মহত্যার কারণ হিসবে দেখা হয়। কিন্তু, বিষয়টি এরকম নয়। গবেষণায় দেখা জাচ্ছে, মানুষ এবং বিভিন্ন প্রাণীদের মনের পার্থক্যের চেয়ে মিলই বেশি এবং এজন্যই বন্দী প্রাণীরা বিষাদপূর্ণ চিৎকার করে থাকে। ক্যাথি (Kathy) নামের এক ডলফিন সারাজীবন বন্দী দশায় থাকায় এতোই বিষাদগ্রস্ত হয়ে পড়ে যে, বেশ কয়েকবার আত্মহত্যার চেষ্টা করে (ক্যাথিকে নিয়ে ২০০৯ সালে বানানো “The Cove” নামক তথ্যচিত্রটি দেখে নিতে পারেন)। জেমস অ্যান্ডারসন (James Anderson) তার কিছু সহযোগী কর্তৃক চালানো একটি গবেষণায় দেখা যায়, শিম্পাঞ্জিদের কেউ মারা গেলে তাদের মধ্যে যে আচরণ দেখা যায় তা অনেকটা মানুষের মতোই। তারা আত্মার চিহ্ন নিশ্চিৎ হওয়ার চেষ্টা করে। মৃতদেহের সামনে মনমরা হয়ে দাঁড়িয়ে থাকে এবং তাদের সঙ্গীর বিদায়ে আর্তনাদ করে। যদি প্রাণীদের মৃত্যু সম্পর্কে ধারনা এবং আত্মহত্যা করার মতো আত্মসচেতনতা আমরা নিচ্চিত হতে পারি, তাহলে তা বন্দী প্রাণীদের জন্য অনেক বেশি সুফল বয়ে আনবে বলে আশা করা যায়। বর্তমানে আমরা শুধু বন্দী প্রাণীদের প্রজাতি ভিত্তিক বিষয়গুলো নিয়েই আলোচনা করে থাকি, তাদের বিষণ্ণতা এবং আত্মহত্যার প্রবণতার মতো বিষয়গুলোও আলোচনায় যুক্ত করা যেতে পারে। সর্বশেষ, ‘বন্দীদশা প্রাণীদের আত্মহত্যার কারণ হয়ে উঠছে কিনা’- গুজম্যান আমাদের দিকে এ প্রশ্নই ছুড়ে দিয়েছেন। কারণ, বন্দী প্রাণীদের মধ্যে অনেক সময় নিজেকে কামড়ানো, নিজেই নিজেকে বিকলাঙ্গ করে ফেলা, নিজেই নিজেকে বিপদে ফেলার মতো অনেক কিছুই করতে দেখা যায়। আমাদের উচিত এসব আচরণ দেখা মাত্র, প্রাণীদের তাদের নিজস্ব প্রাকৃতিক পরিবেশ ফিরিয়ে দেওয়া।
Blogger দ্বারা পরিচালিত.