আমাজনের গহন অরণ্যেও করোনার হানা, ক্রমেই বাড়ছে মৃত্যুর সংখ্যা


Odd বাংলা ডেস্ক: ব্রাজিলের ইনডিজেনাস পিপলস অ্যাসোসিয়েশন জানিয়েছে, এখন পর্যন্ত আমাজনের সাত হাজার সাতশো জন আদিবাসী করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন। মারা গেছেন ৩৫০ জন। তবে আদিবাসীদের মধ্যে রোগ ছড়ানোর প্রবণতা এই প্রথম নয়। এর আগেও হাম, ইনফ্লুয়েঞ্জার মতো রোগের ভাইরাস হানা দিয়েছে মূল জনপদ থেকে বিচ্ছিন্ন থাকা আদিবাসীদের ডেরায়। সেসব ভাইরাসের বিরুদ্ধে লড়াই করার ক্ষমতা তৈরি হয়েছিল আদিবাসীদের মধ্যে। তবে করোনা একেবারে আলাদা জাতের শত্রু। অনেক বেশি মারাত্মক। এই ভাইরাসের বিরুদ্ধে এখন পর্যন্ত কার্যকরী ভূমিকা নিতে পারেনি বিজ্ঞানও। আদিবাসীরা তাই ভাইরাসের আক্রমণ ঠেকাতে হিমশিম খাচ্ছেন। প্রাণঘাতী ভাইরাসের হাত থেকে বাঁচতে তাই তারা নতুন পথ ধরেছেন।

করোনায় আক্রান্ত হয়ে মারা গেছেন আমাজন জঙ্গলের অন্যতম রক্ষাকর্তা, পরিবেশবন্ধু ও আদিবাসী নেতা পাউলিনহো পাইয়াকান। ব্রাজিলের উত্তরাঞ্চলীয় পারা অঙ্গরাজ্যের একটি হাসপাতালে তার মৃত্যু হয় বলে জানা গেছে। আদিবাসী জনগণের অধিকার লংঘনের প্রতিবাদে ২০১৭ সালে ব্রাজিলের ব্রাসিলিয়ায় যে বিক্ষোভ আন্দোলন হয়েছিল তিনি ছিলেন তার নেতৃত্বে। এছাড়া তিবি আমাজন বনাঞ্চলের সুরক্ষায় দীর্ঘদিন ধরে লড়াই চালিয়ে আসছিলেন। ১৯৮০ সালে ব্রাজিলের বেলো মন্টে বিশ্বের তৃতীয় দীর্ঘতম হাইড্রোইলেকট্রিক ড্যাম প্রজেক্টের প্রতিবাদে সামিল হয় বহু পরিবেশ সংগঠন। কায়াপো জনগোষ্ঠীর নেতা কায়াপো সেই আন্দোলনে নেতৃত্ব দিয়ে প্রথম আন্তর্জাতিকভাবে নজরে আসেন। ওই বাঁধ নির্মাণের বিপক্ষে তীব্র আন্দোলনের কারণে দীর্ঘতম বাঁধ নির্মাণ প্রকল্পে অর্থায়ন বন্ধ করে দেয় বিশ্ব ব্যাংক। তবে থামানো যায়নি সেই বাঁধ নির্মাণকাজ।

জানা গেছে, ব্রাজিলের জনপদের কাছাকাছি থাকা আদিবাসী গ্রামগুলো এখন ফাঁকা। সেখানকার হাজার হাজার আদিবাসীরা গভীর জঙ্গলে পালিয়ে যাচ্ছে। করোনা থেকে বাঁচলেও গভীর জঙ্গলের অন্য অনেক বিপদ তাদের প্রাণসংশয়ের কারণ হয়ে উঠতে পারে। এমনটাই মনে করা হচ্ছে। আমাজনে আদিবাসীদের একটি গ্রাম ক্রুজইরিনহো। সেই গ্রাম এখন ফাঁকা। করোনা মহামারির হাত থেকে রক্ষা পেতে ওই গ্রামের সবাই আমাজনের গভীরে পালিয়ে চলে গেছেন। আরেকটি গ্রাম উমারিয়াকাও। ক্রুজইরিনহো থেকে সেখানে নৌকায় যেতে সময় লাগে প্রায় এক সপ্তাহ। মিজুরানা উপজাতিদের বাস সেখানে। মোট ৩২টি পরিবারের মধ্যে ২৭টি আরো গভীর জঙ্গলে পালিয়ে গেছে। করোনার প্রকোপ শুরু হওয়ার পর থেকে ওইসব অঞ্চলে কিছু স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন আদিবাসীদের স্বাস্থ্য সুরক্ষার দিকে খেয়াল রেখেছিল। কিন্তু এখন ব্রাজিলে ভাইরাসের প্রকোপ বেড়েছে কয়েকগুণ। ফলে সেইসব স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনের সদস্যদের দেখা পাওয়া যাচ্ছে না। এমন সময় আদিবাসীরা ভীত-সন্ত্রস্ত হয়ে পড়েছেন। তাই গভীর অরণ্যে পালিয়ে যাওয়া ছাড়া আর কোনো উপায় নেই তাদের কাছে। পেরু ও কলম্বিয়া সীমান্তের কাছে থাকা উত্তর ব্রাজিলের পাঁচ হাজার হেক্টর এলাকাজুড়ে ছড়ানো আদিবাসী গ্রামগুলো প্রায় ফাঁকা। গ্রামে ঢোকার পথে রাস্তার ওপর টানিয়ে দেওয়া হয়েছে হাতে আঁকা চিহ্ন। সেই চিহ্ন বুঝিয়ে দিচ্ছে, আদিবাসী এলাকায এখন অনির্দিষ্টকালের জন্য ফাঁকা।
Blogger দ্বারা পরিচালিত.