এই মহাভয়ঙ্করী দেবী তুষ্ট হন এঁটো-কাঁটা আর নোংরায়, এটাই মা কালীর সবচেয়ে ভয়ঙ্কর রূপ



Odd বাংলা ডেস্ক: দশ মহাবিদ্যার নবম মহাবিদ্যা মাতঙ্গী সম্পর্কে সবিশেষ কথা ভারতীয় পরম্পরায় উল্লিখিত হয় না। অথচ তিনি এক অতি চেনা দেবীরই রূপভেদ। মাতঙ্গীকে দেবী সরস্বতীরই আর এক রূপ বলে স্বীকার করে তন্ত্র ধর্ম। তিনি বিদ্যা ও সঙ্গীতের দেবী। কিন্তু দেবী সরস্বতীর স্নিগ্ধতা তাঁর মধ্যে নেই। অথচ ‘দশমহাবিদ্যাতন্ত্র’-য় তাঁকে পরমতম জ্ঞানের অধিষ্ঠাত্রী হিসেবে কল্পনা করা হয়েছে। এহ বাহ্য। মাতঙ্গী দেবীকে ঘিরে এক মহারহস্য আবর্তিত হয় ভারতীয় পরম্পরায়। মাতঙ্গীকে ‘উচ্ছিষ্ট-চণ্ডালিনী’ বলে উল্লেখ করে অসংখ্য তন্ত্রগ্রন্থ। তাঁর পূজা ও ভোগ প্রদানের যে বিধান শাস্ত্রে রয়েছে, তা এই প্রকার— অপরিষ্কার হাতে এঁটো খাবার তাঁকে নিবেদন করতে হবে। অথচ ভারতীয় পরম্পরায় এমন অপরিচ্ছন্নতা কোনও দেবতার বেলাতেই কাঙ্ক্ষিত নয়। মাতঙ্গীর দেহবর্ণ সবুজ, তাঁর এক হাতে বীণা, অন্য হাতে তরবারি, মহাখর্পর এবং বরাভয়। তাঁর সঙ্গী হিসেবে টিয়াপাখিকে কল্পনা করা হয়। 

এখন প্রশ্ন, কেন মাতঙ্গীকে তুষ্ট করতে উচ্ছিষ্ট ব্যবহারের বিধান দিয়েছে শাস্ত্র? ‘প্রাণতোষিণী তন্ত্র’ অনুসারে, একদা পার্বতী তাঁর বাপের বাড়ি যাওয়ার জন্য শিবের কাছে আর্জি জানান। শিব নিমরাজি হয়ে শর্ত দেন, দেবী কয়েক দিনের মধ্যে ফিরে না এলে তিনি স্বয়ং তাঁকে আনতে যাবেন। পার্বতী তাতে রাজি হন। কিন্তু বাপের বাড়ি থেকে ফিরতে তিনি দেরী করেন। শিব এক অলঙ্কার বিক্রেতার ছদ্মবেশে হিমালয়-গৃহে পৌঁছন এবং পার্বতীকে একটি শাঁখা বিক্রয় করেন। এবং সেই সঙ্গে তিনি পার্বতীর সঙ্গে দেহমিলন প্রার্থনা করেন। পার্বতী ক্ষিপ্ত হয়ে তাঁকে শাপ দিতে উদ্যত হন। কিন্তু অচিরেই তিনি শিবকে চিনতে পারেন। এবং জানান, যথা সময়ে তাঁদের মিলন সম্ভব হবে। এই মিলনের অভিপ্রায়ে পার্বতী চণ্ডালিনীর বেশ ধরেন এবং মিলিত হন। শিব তুষ্ট হয়ে তাঁকে বর প্রার্থনা করতে বলেন। দেবী চণ্ডালিনী রূপে পূজিতা হওয়ার বর চান। শিব তাঁকে তা-ই দান করেন। 

শিব সেই প্রার্থনা পূরণ করেন। বারাণসীর লোককথা অনুযায়ী, মাতঙ্গী দেবীর উপাসনা যুক্ত ছিল চণ্ডাল সম্প্রদায়ের সঙ্গে। সে কারণে, তাঁর চণ্ডালিনী রূপটি গড়ে ওঠে। তাঁকে শ্মাশানবাসী, ভস্ম মাখা শিবের যোগ্য শক্তি বলে মনে করা হয়। এই কারণেই তিনি উচ্ছিষ্ট ভক্ষণকারিণী, অপরিচ্ছন্না। কিন্তু মাতঙ্গীর উপাসনা মানুষকে ক্লিন্নতা থেকে মুক্ত করে। যদিও এই দেবীর পূজা পদ্ধতি অতি গোপন এবং ভয়াবহ। ‘গূহ্যাতিগূহ্য তন্ত্রম্’ অনুসারে মাতঙ্গী উপাসনা ডামরীশক্তিকে জাগ্রত করে, সাধকের পক্ষে সেই ভায়নক শক্তিকে সামলানো সব সময়ে সম্ভব হয় না। ডামরীকে মাতঙ্গীর উপদেবী বলে অনেকেই মনে করেন। ডামরীও অপরিচ্ছন্না এবং অনেক সময়েই উচ্ছিষ্টসেবী।
Blogger দ্বারা পরিচালিত.