পিতৃপক্ষ এবং দেবীপক্ষ এতটা গুরুত্বপূর্ণ কেন, কী বলা আছে পুরাণে, জানুন


Odd বাংলা ডেস্ক: রাত পোহালেই কাল মহালয়া। শাস্ত্রবচন অনুসারে, পক্ষকাল ধরে চলে আসা পিতৃপক্ষের কালই শেষ দিন। নিয়ম অনুসারে মহালয়ার দিন ভোরবেলা থেকে হিন্দু ধর্মাবলম্বীরা গঙ্গার ঘাটে এসে প্রয়াত পূর্বপুরুষদের উদ্দেশে তর্পণ করেন। অমাবস্যাঅন্তে আগামীকাল, প্রতিপদ তিথি থেকে দেবীপক্ষের সূচনা, যা চলে লক্ষ্মীপুজো পর্যন্ত।

পিতৃপক্ষ এবং দেবীপক্ষ বিশেষ তাত্‍পর্য্যপূর্ণ। আশ্বিনের কৃষ্ণ পক্ষের তিথীকে বলা হয় মহালয়া। এই কৃষ্ণ পক্ষকে বলা হয় পিতৃপক্ষ। পিতৃপক্ষে স্বর্গত পিতৃপুরুষের উদ্দেশে শ্রাদ্ধ ও তর্পন করা হয়। এ সময় পিতৃ পুরুষেরা যমালয় থেকে মর্ত্যলোকে আসেন। তাদেরকে আত্মার তৃপ্ত করার জন্য তিল, জল, দান করা হয় এবং তাহাদের যাত্রাপথকে আলোকিত করার জন্য উল্কাদান করা হয়।

মহাভারতে বলা আছে যে, কর্ণের আত্মা স্বর্গে গেলে সেখানে তাঁকে খেতে দেওয়া হল শুধুই সোনা আর ধনরত্ন। কর্ণ প্রশ্ন করলেন ইন্দ্রকে 'ব্যাপার কী?' ইন্দ্র বললেন, 'তুমি সারাজীবন সোনাদানাই দান করেছ, পিতৃপুরুষকে জল দাও নি। তাই তোমার জন্যে এই ব্যবস্থা।' কর্ণ বললেন, 'আমার কী দোষ? আমার পিতৃপুরুষের কথা তো আমি জানতে পারলাম যুদ্ধ শুরুর আগের রাতে। মা কুন্তী আমাকে এসে বললেন, আমি নাকি তাঁর ছেলে। তারপর যুদ্ধে ভাইয়ের হাতেই মৃত্যু হল। পিতৃত্বর্পণের সময়ই তো পেলাম না।'  ইন্দ্র বুঝলেন, কর্ণের দোষ নেই। তাই তিনি কর্ণকে ১৫দিনের জন্য মর্ত্যে ফিরে গিয়ে পিতৃপুরুষকে জল ও অন্ন দানের অনুমতি দিলেন। ইন্দ্রের কথা মতো এক পক্ষকাল ধরে কর্ণ মর্ত্যে অবস্থান করেন এবং পিতৃপুরুষকে অন্নজল দিলেন। তাঁর পাপ স্খলন হলো এবং যে পক্ষকাল কর্ণ মর্ত্যে এসে পিতৃপুরুষকে জল দিলেন সেই পক্ষটি পিতৃপক্ষ নামে পরিচিত হল।

অমাবস্যায় পিতৃপূজা সেরে পরের পক্ষে দেবীপূজায় প্রবৃত্ত হতে হয়। তাই দেবীপূজার পক্ষকে বলা হয় দেবীপক্ষ বা মাতৃপক্ষ, মহালয়া হচ্ছে পিতৃপক্ষের শেষ দিন এবং দেবী পক্ষের শুরুর পূর্ব দিনে পিতৃপক্ষে আত্নসংযম করে দেবী পক্ষে শক্তি সাধনায় প্রবেশ করতে হয়। দেবী শক্তির আদিশক্তি, তিনি সর্বভূতে বিরাজিতা। তিনি মঙ্গল দায়িনী করুনাময়ী। সাধক সাধনা করে দেবীর বর লাভের জন্য, দেবীর মহান আলয়ে প্রবেশ করার সুযোগ করেন বলেই এ দিনটিকে বলা হয় মহালয়া। মহালয়ার পর প্রতিপদ তিথি থেকে দেবী বন্দনা শুরু হয়।
Blogger দ্বারা পরিচালিত.