জন্মের পর থেকেই মেয়েকে ১৩ বছর ঘরে বন্দী রেখে নির্যাতন করেছে বাবা!

Odd বাংলা ডেস্ক: একটি সন্তানের কাছে তার বাবা-মা হলো সবচেয়ে নিরাপদ আশ্রয়স্থল। পৃথিবীর সব বাবা-মা চায় তার সন্তান থাকুক দুধে-ভাতে। নিজে না খেয়ে হলেও তারা সন্তানকে খাওয়ায় জীবনের শেষ রক্তবিন্দু বেঁচে হলেও! 

তবে কখনো কি শুনেছেন, জন্মদাতা পিতা যখন নিজের মেয়েকে জন্মের পর থেকে ১৩টি বছর অন্ধকার ঘরে আটকে রেখেছে? ছোট্ট শিশুটির উপর করেছে অমানুষিক অত্যাচার। এমনকি মা নিজের সন্তানকে আদর পর্যন্ত করতে পারেনি নিষ্ঠুর স্বামীর অত্যাচারের ভয়ে। এমনই এক ভয়ঙ্কর সত্য ঘটনা নিয়েই আজকের লেখা-  

জেনি উইলি ক্যালিফোর্নিয়ার লস অ্যঞ্জেলেসে ১৯৫৭ সালের জন্মগ্রহণ করে। সে জন্মের পর থেকেই ভয়াবহ নির্যাতন এবং অবহেলার শিকার হতে শুরু করে। এর ফলে সে একাকীত্বকে সঙ্গে নিয়েই বেড়ে উঠছিল। 

কারণ জেনির বাবা ক্লার্ক উইলি শিশুদের একেবারেই পছন্দ করতেন না। কথায় আছে, যে মানুষ শিশু ও ফুলকে ভালোবাসে না তার মত নৃশংস ব্যক্তি নেই! আসলেই জেনির বাবা তেমনই এক নৃশংস ব্যক্তি ছিলেন। তিনি কখনো চাননি তার ঘরে কোনো সন্তানের জন্ম হোক। তারপরও একটি নয় বরং চার সন্তানের পিতা হন নিষ্ঠুর ক্রার্ক। জেনির মায়ের নাম ছিল স্ত্রী ডরোথি আইরিন। 

ক্লার্ক উইলির চার সন্তানের মধ্যে দুইজনের বয়স দুই বছর হওয়ার আগেই মারা যায়। নিষ্ঠুর পিতার অত্যাচার থেকে বাদ যায়নি দুধের শিশুগুলো। অত্যাচার এবং অবহেলার কারণেই তারা মারা গিয়েছিল। তবে ক্লার্কের স্ত্রী স্বামীকে হারানোর ভয়ে কখনো এসব নির্যাতনের বিষয়ে পুলিশকে অভিযোগ করেননি। এর ফলাফল হয় খুবই করুণ ও ভয়ঙ্কর। ক্লার্ক আরো বেপরোয়া হয়ে উঠেন। স্ত্রী ও সন্তানদের উপর শাররীরিক ও মানসিক নির্যাতন করে যেন সে অত্যাধিক আনন্দ পেতে শুরু করে। পরিবারের সদস্যদের উপর তার নির্যাতনের মাত্রা বাড়তেই থাকে।  

জেনি উইলির শৈশব ছিল বিভীষিকাময়। আরএইচ অসম্পূর্ণতা ব্যাধি নিয়ে তার জন্ম হয়। তার শরীরের ওজন অনেক কম ছিল। জেনির বাবা তার কান্নার শব্দ খুবই অপছন্দ করত। এজন্য জেনির আবাসস্থল হয়ে ওঠে একটি অন্ধকার ঘর। তাকে সেখানেই আটকে রাখা হত। ক্লার্কের ধারণা ছিল, তার মেয়ে বুদ্ধি প্রতিবন্ধী। এজন্য তাকে একাকী আটকে রাখাই ক্লার্ক সামাধান হিসেবে ভেবেছিল। 

ক্লার্ক কখনো জেনিকে তার মা ডরোথি আইরিন উইলি এবং ভাইয়ের সঙ্গে কোনো কথাবার্তা কিংবা যোগাযোগ করতে দেয়নি। জেনিকে ১৩ বছর ধরে অস্থায়ী স্ট্রেইট জ্যাকেটে একটি চেয়ারের সঙ্গে বেঁধে রাখা হয়। অল্প কিছু খাদ্য, মাঝে মধ্যে সিদ্ধ ডিম এবং তরল খাবার খেতে দেয়া হত জেনিকে।   

ক্লার্ক এতোটাই মানসিকভাবে বিকারগ্রস্থ ও নৃশংস ছিল যে, তার পুত্রকে দিয়ে জেনির উপর নির্যাতন করানো হত। জেনি ছোট থেকেই ওই বন্দী ঘরে বেড়ে উঠছিল। বাইরের জগত তার কাছে সম্পূর্ণ অচেনা ছিল। পৃথিবীতে থেকে প্রকৃতির আলো দেখেনি সে। একই সঙ্গে অমানবিক নির্যাতনের শিকার হতে থাকে জেসি। যে কারণে তার মৌলিক মানবিক দক্ষতাগুলো বিকশিত হয়নি। এমনকি কারো সঙ্গে মেলামেশা না করায় সে কথা পর্যন্তও বলতে শেখেনি।

১৯৭০ সালে জেনির বয়স ১৩ বছর পূর্ণ হয়। তার উপর যে অমানবিক অত্যাচার হচ্ছিল তার মা ডরোথি আর সহ্য করতে পরছিলেন না। সে ক্লার্ক উইলির সঙ্গে বিবাদে জড়িয়ে পড়ে এ বিষয়ে। অবশেষে ডরোথি তার মেয়ে জেনিকে নিজের বাবার বাড়িতে নিয়ে যায়। এর তিন সপ্তাহ পর ডরোথি তার মেয়ে জেনির সেবা যত্ন করতে থাকে। বছরের পর বছর ধরে ক্লার্কের হাতে অত্যাচারের শিকার হয়ে জেনি আংশিক অন্ধত্ব বরণ করেছিল।  

একদিন জেনিকে নিয়ে ডরোথি কাকতালীয়ভাবে একটি সোশ্যাল সার্ভিস অফিসের সামনে দিয়ে যাচ্ছিল। এসময় প্রতিষ্ঠানটির কর্মীরা জেনিকে দেখতে পায়। তারা বুঝতে পারে মেয়েটি শারীরিকভাবে খুবই অসুস্থ। দ্রুত তাকে ক্যালিফোর্নিয়ার লস অ্যাঞ্জেলেসের শিশু হাসপাতালে স্থানান্তরিত করা হয়। সে খুবই দুর্বল, অপুষ্ট এবং নোংরা ছিল। সে নিজে খেতেও পারত না। 

চিকিৎসকরা বেশ কিছু পরীক্ষা নিরীক্ষা করে। এসব পরীক্ষার পর চিকিৎসকরা সিদ্ধান্তে পৌঁছান, জেনির বয়স ১৩ বছর হলেও সে মানসিকভাবে এখনো এক বছরের শিশুর ন্যায়। সে শারীরিক এবং মানসিকভাবে খুবই ক্ষতিগ্রস্ত। তার মানসিক পরিস্থিতি বিশ্বব্যাপী মনোবিজ্ঞানীদের দৃষ্টি আকর্ষণ করে। তারা আশা করেছিলেন, জেনি কথা বলা এবং অন্যান্য বিষয় শেখার দক্ষতা অর্জন করলে তার অবস্থার উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি হবে। 

কয়েক মাস উন্নত থেরাপি দেয়ার পর জেনির সামান্য অগ্রগতি হলেও চিকিৎসকরা পুরো সফলতা পাননি। অবশেষে চিকিৎসকরা তার বিষয়ে আগ্রহ হারিয়ে ফেলে। জেনিকে পরবর্তীতে বিশেষ যত্নে রাখার ব্যবস্থা করা হয়। বড় পরিবার খুঁজে পালক হিসেবে জেনিকে বিভিন্ন পরিবারে দেয়া হয়। 

শিশু হাসপাতালে ভর্তির পরপরই জেনির পিতামাতাকে শিশু নির্যাতনের জন্য বিচারের ব্যবস্থায় আনা হয়। তবে বিচার শুরু হওয়ার দিন তার বাবা ক্লার্ক উইলি নিজেই গুলি করে আত্মহত্যা করেন। জেনির মায়ের বিরুদ্ধে অভিযোগ দায়ের করা হয়েছিল। তবে তার অন্ধত্বের কারণে নির্যাতনের বিষয়ে অনেক কিছুই না জানার কথা বলে জানান তিনি। 

এ কারণে তার উপর থেকে শিশু নির্যাতনের অভিযোগ খারিজ হয়। তবে সে পরবর্তী সময়েও জেনিকে সঠিকভাবে যত্ন নিতে পারেনি। কারণ তিনি চোখে ঠিকমতো দেখতেন না আবার দারিদ্রতাও ভর করেছিল। এজন্যই জেনিকে দত্তক দেয়া হয় বিভিন্ন পরিবারে। তবে সে যেহেতু কথা বলত না আর ভাষাও শেখেনি এজন্য কোনো পরিবারই তাকে দীর্ঘদিন রাখেনি। 

জেনি বর্তমানে ক্যালিফোর্নিয়ার একটি অ্যাডাল্ট ফোস্টার কেয়ারে বসবাস করে। বর্তমানে সেই ভয়াবহ সময় পার করে কিছুটা শান্তি খুঁজে পেয়েছে জেনি। পূর্ণ বয়স্ক হওয়ার পর সে কিছুটা ভাষা শিখেছে। ২০০১ সালে জেনির জীবনের ভয়াবহ গল্প অবলম্বনে ‘মকিংবার্ড ডোন্ট সিং’ চলচ্চিত্র নির্মিত হয়। 

কোন মন্তব্য নেই

Blogger দ্বারা পরিচালিত.