ফুল ও ভ্রমরের মধ্যে হয় ‘কথোপকথন’!

Odd বাংলা ডেস্ক: মানুষ যেভাবে নিজেদের মধ্যে যোগাযোগ স্থাপন করে, তেমনি অনেক কীট-পতঙ্গ এমনকি পশু-পাখিরাও করে? যোগাযোগের ক্ষেত্রে তারা ভিন্ন উপায় অবলম্বন করে। জানেন কি? সম্প্রতি এক গবেষণায় উঠে এসেছে ভ্রমর ও ফুলের কুঁড়ির মধ্যকার ভিন্ন মাত্রার যোগাযোগের সম্পর্ক রয়েছে।
কোটি কোটি বছর ধরে পোকামাকড় ও ফুলের মধ্যে পরস্পরের জন্য লাভজনক এক সম্পর্ক গড়ে উঠেছে। মৌমাছি ও ভ্রমর জাতীয় পোকা নেকটার ও পরাগ পায়। তার বদলে পোকাগুলো পরাগায়নের দায়িত্ব পালন করে।

ভ্রমর ও ফুলের মধ্যে নানা আদান-প্রদান চলে। আক্ষরিক অর্থেই পোকামাকড় ও ফুলের মধ্যে বিশেষ এক ধরনের আকর্ষণ কাজ করে। ভ্রমর কোনো ফুলের উপর নামলে পরাগ সঙ্গে সঙ্গে খাড়া হয়ে ওঠে এবং সূক্ষ্ম রোমগুলো জোরালোভাবে চেপে ধরে।
ব্রিস্টল বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ডানিয়েল রোব্যার্ট ফুল ও পরাগবহনকারীদের মধ্যে এই ‘জাদুময় সংযোগ’ পরীক্ষা করছেন। তার মতে, বেশ কিছুক্ষণ ধরে ফুলগাছগুলোর দিকে তাকিয়ে থাকলে বোঝা যায় ভ্রমর মোটেই যে কোনো ফুলের উপর নামে না। 

যেসব ফুলে সবে অন্য পোকা বসেছিল, সেটি এড়িয়ে চলে। অনেক সময় ধরে যেসব ফুলে কোনো অতিথি আসেনি, ভ্রমর সেগুলোর খোঁজ করে। সেসব ফুল নেকটার বা মিষ্টি রসের আধার ভরার যথেষ্ট সময় পেয়েছে। আমার মনে হয়, ভ্রমর সেটা টের পায়, এমনটিই জানান অধ্যাপক ডানিয়েল রোব্যার্ট।

ভ্রমরের সঙ্গে ‘কথোপকথন’ শুনতে বিজ্ঞানীরা ফুলের কুঁড়ির মধ্যে অতি সংবেদনশীল পরিমাপ যন্ত্রের তার বসিয়ে পরীক্ষা-নিরীক্ষা করেন। যেটি ইলেকট্রিক ভোল্টেজকে শব্দে ‘অনুবাদ’ করে। 
ব্রিস্টল বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্লারা মন্টগোমারি বলেন, এটা আমাদের জাদুকাঠির মতো। অতি সাধারণ প্লাস্টিকের কাঠি। সবাই জানে, ফোলানো বেলুন ঘষলে চুল খাড়া হয়ে যায়। চুলের উপর এই কাঠি ঘষলে যে চার্জ হয়, তা অনেকটা উড়ন্ত ভ্রমরের চার্জের মতো। এভাবে আমরা পরিমাপ যন্ত্রের পরীক্ষার জন্য ভ্রমর সিমুলেট বা নকল করছি৷

দূরত্ব অনুযায়ী শব্দ বেড়ে বা কমে যায়। সব যন্ত্রই ঠিকমতো কাজ করছে, এবার আসল ভ্রমর কাজে লাগানোর পালা। সেই পরীক্ষায় দেখা যায়, ভ্রমর ফুলের উপর অবতরণ করলেই ফুলের সঙ্গে সেটির চার্জ ব্যালেন্স হয়ে যায়।

এর ফলে বাকি সব ভ্রমর বুঝতে পারে, এই কুঁড়িতে এরই মধ্যে অতিথি এসেছিল। অর্থাৎ সেখানে আর নেকটার নেই। নতুন করে নেকটার তৈরি করতে ফুলের সময় লাগে। সেই প্রক্রিয়ার সময়ে আবার নেগেটিভ চার্জ চলতে থাকে। 
নিউরো বায়োলজিস্ট হিসেবে প্রোফেসর ডানিয়েল রোব্যার্ট বলেন, এখন সবচেয়ে জরুরি প্রশ্ন হলো, ঠিক কোন ইন্দ্রিয় দিয়ে ভ্রমর এই বৈদ্যুতিক ক্ষেত্রের অস্তিত্ব টের পায়? সেটা জানতে আমরা একটি ভ্রমরকে অজ্ঞান করে তার মাথার পাশে কিছু তার বসায়। সেগুলোর মধ্যে অতি কম মাত্রার ভোল্টেজ চালানো হয়৷

ল্যাবের বিচ্ছিন্ন এক ঘরে এই পরীক্ষা চালানো হয়। অর্থাৎ বাইরের কোনো কম্পনের প্রভাব সেখানে নেই। এক লেজার রশ্মির সাহায্যে প্রোফেসর রোব্যার্ট এমনকি অতি ক্ষুদ্র ন্যানো মাত্রার নড়াচড়াও পরিমাপ করতে পারেন। 

তিনি বলেন, রোম ও অ্যান্টেনা ভোল্টেজের পার্থক্য অনুযায়ী প্রতিক্রিয়া দেখায়। এই যে ভাইব্রেশন বা কম্পন দেখা যাচ্ছে, তা এতই কম যে সফটওয়্যারের সাহায্যে তা ফুটিয়ে তুলতে হয়, যাতে আমরা সেটা দেখতে পাই। বাস্তবে এসব রোম ও অ্যান্টেনা নিজস্ব মাপের ভগ্নাংশের মাত্রায় কম্পন ঘটায়। আমদের চোখে সেই মাত্রা ধরা না পড়লেও পোকামাকড় অব্যর্থভাবে তা টের পায়।
এমন সামান্য নড়াচড়া বুঝতে ভ্রমরের শরীরে ঠিক কোথায় প্রয়োজনীয় ইন্দ্রিয় রয়েছে, তা এখনো পুরোপুরি জানা যায়নি। তবে ভ্রমর ও ফুলের কুঁড়ির মধ্যে ‘জাদুময় আকর্ষণ’ যে সত্যি কাজ করে, সে বিষয়ে আর কোনো সন্দেহ নেই।

প্রোফেসর রোব্যার্ট মনে করেন, ফুল ও পরাগবহনকারীর মধ্যে যোগাযোগের সম্পূর্ণ নতুন এক মাত্রা নিয়ে গবেষণার সুযোগ পাওয়া যাচ্ছে। মানুষ সেই ডাইমেনশন টেরই পায় না। 

হয়তো অন্যান্য পোকামাকড় ও গাছপালার মধ্যে অথবা বড় প্রাণীর মধ্যেও অন্য কোনোভাবে এমন যোগাযোগ ঘটে। আমরা এবার জানতে চাই, যে ইলেক্ট্রো-স্ট্যাটিক ক্ষেত্র বোঝার ক্ষমতা পোকামাকড় ও ফুলের কুঁড়ির বাইরেও দেখা যায় কিনা।
ভ্রমর, মৌমাছি ও সেই জাতীয় প্রাণীর ক্ষেত্রে এই ইলেক্ট্রো-স্ট্যাটিক ফিল্ড অবশ্যই দিক নির্ণয়ের সূচক হিসেবেও সাহায্য করে। সেটির সাহায্যে এসব প্রাণী সরাসরি নেকটারের উৎসে পৌঁছে যায় এবং ওড়ার পরিশ্রম সার্থক হয়।

ভ্রমর যে ইলেক্ট্রো স্ট্যাটিক ক্ষেত্র টের পায়, প্রোফেসর রবার্ট গবেষণাগারে তা প্রমাণ করতে পেরেছেন। বিশ্ববিদ্যালয়ের নিজস্ব ভ্রমরের কলোনিকে সেই পরীক্ষায় শামিল করা হয়েছিল।

গবেষকরা অতি ক্ষুদ্র নেগেটিভ চার্জ তৈরি করে নেকটার ভরা ফুলের নকল করেছিলেন। ভ্রমর এত সূক্ষ্ম তারতম্য সত্ত্বেও প্রতিক্রিয়া দেখিয়েছে। নিউরো বায়োলজিস্টরা এমনকি ফুল ও ভ্রমরের মধ্যে ‘কথোপকথন’ শ্রবণযোগ্য করে তুলতে পারেন।

কোন মন্তব্য নেই

Blogger দ্বারা পরিচালিত.