জন্মস্থানের নামেই বিশ্বে পরিচিতি পায় এই খাবারটি

Odd বাংলা ডেস্ক: সকালের নাস্তা কিংবা স্কুলের টিফিনে সবচেয়ে সহজ আর মজাদার খাবার কোনটি। এর তালিকা করলে স্যান্ডউইচের নাম থাকবে সবার উপরে। দুই টুকরো পাউরুটির মাঝে মাংস কিংবা ডিম, সালাদ আর মেয়োনিজ! ব্যস তৈরি আপনার প্রিয় স্যান্ডউইচ। পৃথিবী জুড়ে এই জনপ্রিয় বিদেশি খাবার নিয়ে পরীক্ষা-নিরীক্ষাও কম হয় না। বিখ্যাত ফুড চেনের মেনুগুলোতেও তাই রাখা হয় স্যান্ডউইচ। স্কুলের ক্যান্টিন থেকে শুরু করে ছোট বড় সবধরনের রেস্তোরাঁর মেনুতে এই খাবারটি থাকবেই। স্থান ভেদে এর দামে কিছুটা তারতম্য দেখা যায়।

একদিকে চটজদলি তৈরি করা যায়, অন্যদিকে খরচের বেলায় খুবই কম হওয়ায় স্যান্ডউইচের জনপ্রিয়তা বিশ্বজুড়ে। অল্প সময় আর অল্প উপকরণে তৈরি এই খাবারটি যেমন স্বাস্থ্যকর, তেমনি মুখরোচকও। সহজে ঝামেলা ছাড়া, ভ্রমণের সময়,অফিসের লাঞ্চে, স্কুলের টিফিনে কিংবা ব্যস্ত দিনের শেষে রাতের খাবারে স্যান্ডউইচের জুড়ি মেলা ভার। তবে এই খাবারটির নাম কেন অন্য কিছু নয়? যেমন হটডগের সঙ্গে কুকুরের কোনো সম্পর্ক নেই। তেমনি এক খাবারটির নামকরণ করা হয়েছে এর জন্মস্থানের নামানুসারেই। 

সব বয়সী মানুষের প্রিয় এই খাবারের নামটি এসেছে ইংল্যান্ডের একটি শহর স্যান্ডউইচের নামে। আর এই স্যান্ডউইচ উদ্ভবের পেছনের রয়েছে মজার ইতিহাস। প্রথবার স্যান্ডউইচ তৈরির গল্প জানতে পেছাতে হবে আঠারো শতকের ইংল্যান্ডে। ইংল্যান্ডের স্যান্ডউইচ শহরের চতুর্থ লর্ড জন মন্টেগু ছিলেন একজন দক্ষ ও নামকরা জুয়াড়ু। জুয়া খেলায় তিনি এতটাই ব্যস্ত থাকতেন যে আহার করার পর্যাপ্ত সময়ও বের করতে পারতেন না। খেলার মাঝেই খাওয়ার সময় হলে ভৃত্য তাকে খাবারের জন্য ডাকে। কিন্তু মন্টেগু খেলায় এতোটাই মগ্ন হয়ে গিয়েছিলেন যে ভৃত্য খেলার আসরেই সহজে খাওয়া যায় এমন খাবার পরিবেশন করতে বলেন।

তখন লর্ডের রাঁধুনী বুদ্ধি করে রাতের খাবারের জন্য বানানো মাংসের টুকরো, সালাদ মিশিয়ে দুই টুকরো পাউরুটির মধ্যে ঠেসে খেলার আসরে পাঠিয়ে দেয়। খেয়ে লর্ড আর তার বন্ধুরা ভীষণ তারিফ করতে থাকেন ওই রাঁধুনীর। এভাবেই জন্ম হয় বিশ্বের অন্যতম এই জনপ্রিয় খাবারের। স্যান্ডউইচ শহরের নামানুসারে খাবারটির নাম রাখা হয় স্যান্ডউইচ। স্যান্ডউইচ নামকরণের আগে অবশ্য খাবারটি রুটি-মাংস বা রুটি-চিজ নামেই পরিচিত ছিল। আর স্যান্ডউইচের বাংলা অর্থ করলে হয় বালুময় শহর। 

পিয়েরে জিনের বই 'ট্যুর টু লন্ডন'-থেকে প্রাপ্ত তথ্যমতে স্যান্ডউইচের নামকরণ করা হয়েছে জন মন্টাগুর নামানুসারে, যাকে বলা হয় ‘ফোর্থ আর্ল অফ স্যান্ডউইচ’।  মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে স্যান্ডউইচ প্রথমে নৈশভোজ হিসাবে খাওয়ার প্রচলন শুরু হয়েছিল। বিংশ শতাব্দীর গোড়ার দিকে রুটি আমেরিকান খাদ্যতালিকায় একটি প্রধান উপকরণ হয়ে উঠায় স্যান্ডউইচ'ও ব্যাপক জনপ্রিয়তা লাভ করে। পশ্চিমা বিশ্বে হাতে বহনযোগ্য জলখাবার হিসাবে স্যান্ডউইচের ব্যুৎপত্তি হয়েছিল, যদিও সময়ের সঙ্গে সঙ্গে খাবারটি বিশ্বব্যাপী প্রচলিত রয়েছে। 

অন্যদিকে বছর জুড়ে দিবসের শেষ নেই। আর এই অদ্ভুত তালিকা থেকে বাদ যায়নি জনপ্রিয় ফাস্টফুড স্যান্ডউইচও। প্রতিবছর ৩'রা নভেম্বরকে জাতীয় স্যান্ডউইচ দিবস হিসেবে পালন করা হয়। স্যান্ডউইচপ্রেমীরা খাবারটির প্রতি তাদের ভালোবাসা প্রকাশের একটি দিন ঠিকই বের করে নিয়েছেন। এর পেছনে রয়েছে আরেক ইতিহাস।

আমেরিকানদের পছন্দের খাদ্যের মধ্যে স্যান্ডউইচ অন্যতম। ঝামেলাহীন ও সহজে তৈরি করা যায় বলে এটি আমেরিকানদের খুবই পছন্দের একটি খাবার। বিস্ময়কর হলেও সত্যি স্যান্ডউইচ তাদের এতোটাই পছন্দের যে প্রতিবছর ৩ নভেম্বরকে জাতীয় স্যান্ডউইচ দিবস উদযাপন করা হয় আমেরিকায়। আমেরিকার যেসব খাবারের দোকান স্যান্ডউইচ বিক্রি হয় সেখানে ক্রেতাদের জন্য দিবসটি উপলক্ষে নানান আকর্ষণীয় অফার দেওয়া হয়

সময়ের সঙ্গে সঙ্গে আজ অবশ্য স্যন্ডউইচ পরিবেশনের ধরণ, উপকরণের ভিন্নতা অনুযায়ী নামেও অনেক পরিবর্তন এসেছে। যেমন- ক্লাব স্যান্ডউইচ, চিজ স্যান্ডউইচ, সাবমেরিন স্যান্ডউইচ, ডেলি স্যান্ডউইচ,পিনাট বাটার অ্যান্ড জেলি স্যান্ডউইচসহ আরো নানা রকম স্যান্ডউইচই এখন রেস্টুরেন্টগুলোতে পরিবেশন করা হয় ভিন ভিন্ন স্বাদ ও স্টাইলে। তবে সেই পুরনো ধাঁচের স্যান্ডউইচই ইংল্যান্ড এবং আমেরিকায় জনপ্রিয় হয়ে আছে।

কোন মন্তব্য নেই

Blogger দ্বারা পরিচালিত.