আপনি আপনার শারীরিক গড়ন নিয়ে সন্তুষ্ট তো?

Odd বাংলা ডেস্ক: করোনা মহামারিতে আমাদের সবার জীবনেই এসেছে ব্যাপক পরিবর্তন। এক বছরেরও বেশি সময় ধরে এক ধরনের গৃহবন্দী জীবনের ফলে শারীরিক ও মানসিক পরিবর্তন আসা কোনো অস্বাভাবিক বিষয় নয়।

এই দেড় বছর পর বিশ্বের কিছু স্থানে কোভিড সংক্রান্ত বিধিনিষেধ উঠে গেছে, আবার কিছু স্থানে এখনো মুক্ত চলাফেরার উপর নিষেধাজ্ঞা থেকেই গেছে। তবে কোভিডের সাথে মানিয়ে নিয়ে জীবনের পথচলা এরই মধ্যে শুরু হয়ে গিয়েছে।

হয়তো কেউ কেউ অফিসে আবার কাজ করা শুরু করেছেন কিংবা বন্ধুদের সাথে দেখা সাক্ষাৎ হচ্ছে। হয়তো করোনার আগে আপনার বন্ধু আপনাকে যেমন দেখেছিল, মাঝের সময়টাতে তার চাইতে অনেকখানি বদলে গেছেন আপনি। হয়তো আগের চাইতে বেশি পরিশ্রান্ত দেখতে লাগে আপনাকে কিংবা আপনি আগের চাইতে মোটা হয়েছেন, অথবা শুকিয়েছেন। তাই দেড় বছর আগের নিজেকে ফিরে না পাওয়ার বিষণ্ণতা বা দুঃখ অনেকের মনেই জন্মাতে পারে। কিন্তু নিজের সম্পর্কে দ্বিধা-লজ্জা কাটিয়ে উঠে নিজেকে আত্মবিশ্বাসী তো করতেই হবে।

কিভাবে করবেন? তা জানতেই বিশেষজ্ঞদের পরামর্শে আপনার জন্য থাকছে ১০টি টিপস; যা মহামারি ছাড়াও অন্য যেকোনো সময়েই আপনার মধ্যে ইতিবাচক অনুভূতি তৈরি করবে।

১. নিজের প্রতি সহানুভূতিশীল হন

আমাদের শরীরের ওজন ওঠানামা করাটা খুবই স্বাভাবিক এবং প্রাকৃতিক বিষয়। তবু মানুষের মাঝে নিজের শারীরিক গঠন নিয়ে উদ্বেগ থাকাটা সহজাত, স্বাভাবিক। করোনাকালে আমরা প্রত্যেকেই কিছু দুঃসহ সময় পার করেছি, তাই সেই সময়ে কোনো কারণে ওজন বেড়ে যাওয়া নিয়ে দুশ্চিন্তার কিছু নেই। কখনোই স্বাভাবিক কোনো প্রক্রিয়ার জন্য নিজেকে দায়ী করতে যাবেন না।


২. আপনিই সবার মনোযোগের কেন্দ্রবিন্দু নন

আপনাকে অবশ্যই বুঝতে ও বিশ্বাস করতে হবে যে বর্তমানে প্রতিটি মানুষই নিজের জীবন নিয়ে ব্যস্ত। তাই আপনাকে কেমন দেখাচ্ছে তা নিয়ে খুব কম লোকেরই মাথাব্যথা রয়েছে। মনে রাখবেন, আপনাকে কেমন দেখাচ্ছে তা নিয়ে বাইরের মানুষের চাইতে আপনার নিজের চিন্তা সবচেয়ে বেশি। তাই সবাই আপনার দিকে তাকিয়ে নেতিবাচক কিছু ভাবছে- এমনটা মনে করার কোনো কারণ নেই।


৩. সমালোচনা অগ্রাহ্য করুন 

অধিকাংশ মানুষই আপনার বাহ্যিক সৌন্দর্য্য নিয়ে মাথা না ঘামালেও; গুটিকয়েক মানুষ থাকবেই, যারা সবসময় বিরূপ মন্তব্য করবে শুধুমাত্র আপনাকে কষ্ট দেওয়ার জন্য। কেউ যদি আপনাকে ভুলভাবে বিচার করতে চায়, তার মানে তারা নিজের কুন্ঠা-সংকোচকে আপনার উপর চাপিয়ে দিতে চাইছে।


৪. সত্যিকার গুরুত্বের জায়গা খুঁজুন 

আপনি যদি বৃহৎ অর্থে চিন্তা করেন, তাহলে বিশ্বজুড়ে চলমান একটা মহামারির কাছে আপনার 'চিকন হওয়া'র তেমন কোনো গুরুত্বই নেই। অসংখ্য মানুষ নিজেকে আকর্ষণীয় করে তোলার বা চিকন হওয়ার জন্য দিনরাত পরিশ্রম করে যাচ্ছে। কিন্তু আপনাকে চিন্তা করতে হবে যে এই সময়ে এটাই কি প্রথম গুরুত্ব হওয়া উচিত? নাকি পরিবারের সাথে আরও ঘনিষ্ঠ হওয়ার পেছনে সময় দেওয়া উচিত? নিজেকে মানসিকভাবে আরও ফিট করে তোলা উচিত? শরীর নিয়ে উদ্বিগ্ন হওয়ার বদলে এসব বিষয়ে মনোযোগ সরিয়ে আনুন।


৫. কাজই হোক লক্ষ্য 

আপনি আপনার শরীরের মাধ্যমে কতখানি কর্মক্ষম হয়ে উঠতে পারছেন, সেটিই মুখ্য; শরীরের বাহ্যিক সৌন্দর্য্য নয়। কর্মক্ষেত্রে সহকর্মীরা আপনাকে দেখে কি মন্তব্য করছে, তার উপর মন না দিয়ে, নিজের কাজকে আরও অসাধারণ করে তোলার দিকে লক্ষ্যস্থির করুন।


৬. আত্মবিশ্বাস একদিনে আসে না

আপনি একদিন সকালে ঘুম থেকে উঠলেন, আর হুট করে নিজেকে শতভাগ সুন্দর মনে হলো- এমনটা কখনো সম্ভব নয়। মন-মানসিকতা ও চিন্তাধারার পরিবর্তন আনার সাথে সাথে নিজের মধ্যে আত্মবিশ্বাস বাড়ে, আর এটাই আপনার আসল শক্তি।


৭. স্বস্তিদায়ক পোশাক পরুন

এমন কোনো পোশাক পরবেন না, যা আপনাকে স্বাধীনভাবে চলাফেরায় বাধা দেয়। ওয়ার্ডরোবে এমন মানানসই পোশাক রাখুন, যা পরলেই চট করে স্বস্তি অনুভব হয়, যা দিয়ে আপনার শরীর নিয়ে সংকোচের ভাবটা কেটে যায়।


৮. সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমকে শুদ্ধ রাখুন

সব বিশেষজ্ঞরাই মনে করেন, সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে আসা কন্টেন্ট দ্বারা আমরা প্রতিনিয়ত প্রভাবিত হচ্ছি। আপনি যে কন্টেন্ট গ্রহণ করছেন, তা ইতিবাচক হওয়াটা জরুরি। গণমাধ্যম বা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম দ্বারা নির্ধারিত ধারণা অনেক সময় নিজের বডি ইমেজ নিয়ে দ্বিধা বোধ করায় আমাদের। বাণিজ্যিক বিজ্ঞাপন বা নির্দিষ্ট কোনো গোষ্ঠীর দ্বারা ভুল বার্তা পাওয়া কিংবা 'বডি শেমিং' আমাদের আত্মবিশ্বাস কমিয়ে দেয়। তাই সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ব্যবহারে সতর্ক হতেই হবে।


৯. মাথা থেকে নেতিবাচক চিন্তা ঝেড়ে ফেলুন 

কখনো যদি মনের মধ্যে নেতিবাচক চিন্তা ঘুরতে থাকে, নিজেই নিজেকে প্রশ্ন করুন- এরকম বাজে মন্তব্য কি আমি আমার কোনো বন্ধুকে করেছি? কিংবা তাকে নিয়ে এমন ভেবেছি? যদি না হয়, তাহলে নিজেকে নিয়ে কেন ভাববো?


১০. কৃতজ্ঞতা স্বীকার করুন 

অসংখ্য মানুষ মহামারিতে কষ্ট পেয়ে, রোগে ভুগে মারা গেছে অথবা নিজের স্বজন হারিয়েছে। সে তুলনায় নিজের অবস্থান চিন্তা করুন, নিজের শারীরিক অবস্থা নিয়ে কৃতজ্ঞতা স্বীকার করুন। ভাবতে শিখুন যে, এই শরীর নিয়েই আপনি এখনো সুস্থভাবে বেঁচে আছেন এবং দৈনন্দিন কাজ করতে পারছেন। এ ধরনের ইতিবাচক চিন্তাই আপনাকে মানসিক সন্তুষ্টি দিবে এবং সুস্থ জীবন যাপন করতে সাহায্য করবে। 

কোন মন্তব্য নেই

Blogger দ্বারা পরিচালিত.