সোনার খনি থাকার পরও ‘গরিব’ এশিয়ার এই দেশ

Odd বাংলা ডেস্ক: পাহাড় আর সবুজ প্রকৃতির দেশ কিরগিজস্তান। অপরূপ সৌন্দর্যের কারণে দেশটিকে বলা হয় মধ্য এশিয়ার সুইজারল্যান্ড। আধুনিক যুগের সবাই যখন শহরের দিকে ছুটছে, তখন এখানকার মানুষেরা ছুটছে গ্রামের দিকে। দেশটির রাজধানীর নাম বিশকেক। এই দেশটির মাত্র ৩৬ ভাগ মানুষ শহরে বাস করে। কিরগিজরা একই সঙ্গে যাযাবর এবং যোদ্ধা জাতি হিসেবে পরিচিত।

পশুপালন তাদের প্রধান পেশা। এ কারণে তাদের খাবার-দাবারের তালিকায় রয়েছে গরু, ভেড়া আর ঘোড়ার মাংস। ঘোড়ার মাংস তাদের প্রিয় খাবার। ঘোড়ার দুধ দিয়ে তৈরি একটি খাবার, যার নাম কুমিস। এই খাবারটি দেশটিতে খুবই জনপ্রিয়। সব খাবার ছাপিয়ে বস্তুত পিঠা কিরগিজদের ঐতিহ্যের অংশ হয়ে টিকে আছে। এটি তাদের কাছে পবিত্র পিঠা। বাসায় অতিথি এলে তাদের পাতে এই পিঠা থাকবেই। এই পিঠা শুধু জীবিতদের নয়, মৃতদেরও খাবার।

কিরগিজদের কেউ মারা গেলে সেদিন থেকে শুরু করে এক বছর পর্যন্ত প্রতি বৃহস্পতিবার এই পিঠা বানানো হয়। মৃতদের জন্য পিঠা বানানোর এই সংস্কৃতিকে তারা বলে জিত চাইগারু। এর অর্থ হলো গন্ধের নিঃসরণ। এই অনুষ্ঠানের দিন হরেক রকম পিঠা বানিয়ে টেবিলে সাজিয়ে রাখা হয়। টেবিলের পাশে বসে বিবাহিত পুরুষ ও নারীরা প্রার্থনা করে।

কিরগিজরা বিশ্বাস করে প্রার্থনা সঙ্গে সঙ্গে পিঠার গন্ধও মৃতদের কাছে পৌঁছায়। এছাড়াও তাদের কিছু আজব সংস্কৃতি রয়েছে। প্রতিদিন সকালে ঘুম থেকে উঠে তারা সবার আগে পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে হ্যান্ডশেক করে। কর্মস্থলে একজনের সঙ্গে অন্যজনের যতবারই দেখা হয়, ততবারই হ্যান্ডশেক করে তারা। এখানকার মানুষেরা পানির চেয়ে চা বেশি পান করে। আবার আগ্রাবাদ জাতি হিসেবেও তাদের সুখ্যাতি রয়েছে। 

মধ্য এশিয়ার দেশগুলোর মধ্যে একমাত্র কিরগিজস্তানই একনায়কতন্ত্রের প্রভাব কম। এখানে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্টের বাসভবনের মতো একটি হোয়াট হাউজ রয়েছে। এটি কিরগিজস্তানের প্রেসিডেন্টের অফিস। অবাক করা ব্যাপার হলো সোনার খনি থাকার পরও দেশটি মধ্য এশিয়ার দ্বিতীয় গরিব দেশ। কুমোটোর নামের খনিতে পৃথিবীর দ্বিতীয় সর্বোচ্চ সোনার মজুদ রয়েছে এখানে। স্থলবেষ্টিত এই দেশটির বুক চিরে ছোট-বড় দুই হাজার ৪৪টি নদী বয়ে গেছে। 

এখানে রয়েছে পৃথিবীর সপ্তম বৃহত্তম হৃদ ইসবগুল। এটিকে পারলোব তিয়েন শান বলা হয়। তীব্র শীতেও এই হ্রদের পানি বরফে পরিণত হয় না। দৃষ্টিনন্দন কোনো স্থাপনা না থাকার পরও প্রতিবছর অসংখ্য পর্যটক কিরগিজস্তান ভ্রমণ করেন। পাহাড়-পর্বত, মাটি, প্রকৃতি ও ফুলের আকর্ষণে ছুটে যান তারা। এজন্য অনেকে এটিকে মনোমুগ্ধকর ঝর্ণা ও ফুলের দেশ বলে অভিহিত করেছেন।

দেশটিতে ইউনেস্কো ঘোষিত তিনটি ওয়ার্ল্ড হেরিটেজ সাইট রয়েছে। যেগুলো হলো- তিয়েন শান পাহাড়, সিল্ক রুটের পথ, সুলায়মান পাহাড়। লোকশ্রুতি আছে যে, সুলায়মান পাহাড়ের চূড়ায় যে নারী পৌঁছাতে পারে সে বীর সন্তান জন্ম দেয়। এটি এশিয়ার পবিত্রতম পাহাড় হিসেবে পরিচিত। মুসলিম প্রধান দেশটি মসজিদ ও অন্যান্য ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান তৈরিতে রেকর্ড গড়েছে।

১৯৯১ থেকে ২০১৯ সাল পর্যন্ত আড়াই হাজারের বেশি মসজিদ নির্মিত হয়েছে এখানে। এখানে প্রতি বছর গড়ে ৯০টি করে মসজিদ বানানো হয়। এর বাইরে অন্যান্য ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানও তৈরি হয়েছে। এসব কারণে দেশটির মসজিদ ও ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান নির্মাণের বাতিঘর হিসেবে স্বীকৃতি পেয়েছে।

কোন মন্তব্য নেই

Blogger দ্বারা পরিচালিত.