ট্রেনে চড়ে চলে আসে আস্ত আদালতভবন


Odd বাংলা ডেস্ক: প্রযুক্তির কল্যাণে বিভিন্ন পরিবহনের সাহায্যে মানুষ সহজেই প্রয়োজনীয় অনেক ভারী জিনিসও এক স্থান থেকে অন্য স্থানে স্থানান্তরিত করতে পারে। এক দেশ থেকে অন্য দেশে নৌ, বিমান, স্থল পথের বাহনে টন টন ওজনের জিনিস স্থানান্তর করা যায়। তবে একটি আস্ত ভবন রেলপথে এক স্থান থেকে অন্য স্থানে বহন করে নেয়া হয়- এমন ঘটনা সবাইকেই বিস্মিত করবে। এমনই বিস্ময়কর এক ঘটনা নিয়ে এই লেখা।

ঘটনাটি ১৮৯০-এর দশকের। যুক্তরাষ্ট্রের নেব্রাস্কার বক্স বাট কাউন্টির কাউন্টি সিটের (প্রশাসনিক কেন্দ্র) কোর্টহাউস ছিল হেমিংফোর্ডে। তবে সেখানকার বাসিন্দারা তাদের কোর্টহাউসের স্থান নিয়ে বেশ অস্বস্তিতে ছিলেন। ১৮৯৯ পর্যন্ত তাদের কাউন্টি সিটের কোর্টহাউস কোথায় প্রতিষ্ঠা করবেন তা ঠিক করতে পারেননি। ১৮৮৬ সালে দক্ষিণ ডাউস কাউন্টি থেকে নতুন একটি কাউন্টি গঠন করার পরও নেব্রাস্কার বক্স বাট কাউন্টির অ্যালায়েন্স অঞ্চলের বাসিন্দাদের সমস্যা থেকেই যায়। তাদের প্রশাসনিক, বিচারিকসহ অন্যান্য কাজের প্রাণকেন্দ্র কোর্টহাউস বেশ দূরেই থেকে যায়।

এ সমস্যা সমাধানের জন্য, ১৮৯০ সালে বক্স বাট কাউন্টির নতুন কাউন্টি সিট নির্ধারণ করতে একটি নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। এ নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বী ছিল অ্যালায়েন্স এবং হেমিংফোর্ড অঞ্চল। এ সময় হেমিংফোর্ডের কাউন্টি সিট সুরক্ষিত হয়। এরপর সেখানে একটি কোর্টহাউস তৈরি করা হয়েছিল। তবে অ্যালায়েন্সের সমস্যা থেকেই যায়। কিন্তু এখানকার বাসিন্দারা হাল ছাড়েননি। তারা চেষ্টা চালিয়ে যাতে থাকেন। অবশেষে, ১৮৯৯ সালে অ্যালায়েন্সের অধিবাসীরা তাদের কোর্টহাউস প্রতিষ্ঠার অনুমতি পায়।

তবে কাউন্টি কমিশনাররা কোর্টহাউস প্রতিষ্ঠা নিয়ে নতুন বিড়ম্বনার সম্মুখীন হয়েছিলেন। কারণ, হেমিংফোর্ডের কোর্টহাউসটি ১০ বছরেরও কম সময় আগে নির্মিত হয়েছিল। আর ভবনটির কাঠামোগত মান তখনও অক্ষুণ্ন ছিল। সে কারণেই সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছিল যে, হেমিংফোর্ডের কোর্টহাউসটি অ্যালায়েন্সে স্থানান্তরিত করা হবে। এই দুই স্থানের মধ্যে দূরত্বও একেবারে কম ছিল না। প্রায় ২০ মাইল দূরত্ব ছিল এই দুই স্থানের মধ্যে।

কোর্টহাউস ভবনটি স্থানান্তরিত করার জন্য প্রথম প্রচেষ্টায় ঘোড়ায় টানা রোলার কাঠামোর কথা ভাবা হয়েছিল। তবে সেটি মোটেও বাস্তবসম্মত ছিলনা। ঘোড়াগুলো দশ দিনে ভবনটি মাত্র ১৫ ফুট সরাতে পেরেছিল। ফলে সংশ্লিষ্টরা এ পদ্ধতি পরিত্যাগ করতে বাধ্য হয়েছিলেন।

এরপর বার্লিংটনের ওয়াইমিং বিভাগের সুপারিনটেনডেন্ট জে আর ফেলান ভবনটিকে রেলপথে স্থানান্তরের প্রস্তাব করেছিলেন। তার প্রস্তাব অনুযায়ী, ৯৫ টন ওজনের ৪৫ ফুট বাই ৫৪ ফুট ও ৪০ ফুট উচ্চতার কাঠামো, নয় জোড়া রেলরোড কারে ওঠানো হয়েছিল। ৭৫ জন ট্রেন ক্রুসহ প্রয়োজনীয় জনবল এই কাজে নিয়োজিত করা হয়। ট্রেনটি প্রতি ঘণ্টায় ১০​ মাইল গতি এগিয়ে যায়। কোর্টহাউস ভবনটি স্থানান্তরের পুরো কাজ মাত্র ৬ ঘণ্টা সময়ে সম্পন্ন হয়েছিল। ১৮৯৯ সালের ৩ জুলাই ট্রেনে আস্ত ভবন নেয়ার ঘটনরা একটি ছবি প্রচারিত হয়। সে সময় এই ঘটনা বেশ আলোড়ন সৃষ্টি করেছিল।

কোন মন্তব্য নেই

Blogger দ্বারা পরিচালিত.