জল খাবার নেই, তবুও আনন্দেই বেঁচে আছেন এই দ্বীপের বাসিন্দারা! কিভাবে জানেন?
ODD বাংলা ডেস্ক: কোনো হ্রদ, নদী বা ঝরনা কিছুই নেই। এককথায় জলের বড়ই অভাব। তা সত্ত্বেও বিশ্বের অন্যতম জনবহুল দ্বীপ এটি। এই দ্বীপে হাজার হাজার মানুষ বসবাস করে। বছরের পর বছর ধরে কীভাবে জল সঞ্চয় করে জীবন নির্বাহ করে চলেছেন এই দ্বীপের মানুষ, তা সত্যিই একটি বিস্ময়। এই দ্বীপের নাম বারমুডা।
দ্বীপটির বিস্তৃতি মাত্র ৫৩ বর্গ কিলোমিটার। আটলান্টিক মহাসাগরের বুকে জেগে থাকা এই দ্বীপটি। এই দ্বীপে ২০২০ সালের ওয়ার্ল্ড ব্যাঙ্কের সমীক্ষা অনুযায়ী জনসংখ্যা ৬৪ হাজার। বারমুডায় গিয়ে থাকলে যে বিষয়টি প্রথমেই চোখে পড়বে তা হলো, এর ঘর-বাড়ির স্থাপত্য। নতুন-পুরোনো মিলিয়ে প্রতিটি বাড়িই দেখতে একইরকম। সাদা রঙের চুনাপাথরের ছাদ। চতুর্দিকে ঢাল থাকা সেই ছাদে খাঁজকাটা নক্সা করা। যাতে সহজেই জল গড়িয়ে পড়তে পারে।
জলের সমস্যা দূর করার জন্য স্থানীয়েরা এ ভাবেই বৃষ্টির জল সঞ্চয় করে রাখেন। সারা বছর এই সঞ্চিত বৃষ্টির জল পরিশ্রুত করেই জলের সঙ্কট দূর করেন তারা। পাশাপাশি জলের অপচয় না করারও কথা দিনভর মেনে চলেন। পশ্চিমি দুনিয়ায় অন্যতম জল সচেতন হিসেবেই চিহ্নিত বারমুডার মানুষ। সেই ১৭ শতক থেকেই ঘর-বাড়িতেও জলের অপচয় রোধের চিহ্ন টাই স্পষ্ট। প্রতিটি বাড়ির নক্সা কেমন হবে তা সে দ্বীপের আইনেও উল্লেখ করা হয়েছে। আইন অনুযায়ী, বাড়ির ছাদ এমন ভাবেই নির্মাণ করতে হবে যাতে তার মাধ্যমে বৃষ্টির জল ভূগর্ভস্থ জলাধারে সঞ্চিত হয়।
সেখানকার বাসিন্দারা বাড়ির এই নক্সা বছরের পর বছর ধরেই অনুসরণ করে আসছেন। ফলে ২০০ বছরের পুরোনো বাড়ির পাশেই গড়ে ওঠা নতুন বাড়ির ছাদও একই রকম দেখতে। ঐ দ্বীপের ১৬৮০ সালের বাড়িটিও দেখতে একই রকম। প্রতিটি বাড়ি এই নক্সায় গড়ে তোলাও বাধ্যতামূলক। চুনাপাথর-নির্মিত ছাদ বেয়ে জল নীচের দিকে গড়িয়ে আসে। তারপর পাইপ দিয়ে ভূগর্ভের জলাধারে প্রবেশ করে বৃষ্টির জল। জল সঞ্চয়ের জন্য প্রতিটি ঘরের নীচেই ১০০ গ্যালনের জলাধার থাকা বাধ্যতামূলক।
দৈনন্দিন জীবনেও বারমুডার প্রতিটি মানুষ জলের অপচয় রোধে সদা সতর্ক। যতটা সম্ভব জলের খরচও কম করে থাকেন তারা। শিশুদেরও ছোট থেকেই এ বিষয়ে সচেতন করা হয়। এত চেষ্টার পরও অনেক সময়ই জল সঙ্কটে ভুগতে হয় তাদের। বিশেষ করে ২০ শতকে বারমুডার পর্যটন শিল্প ফুলেফেঁপে ওঠায় জলের সঙ্কট তৈরি হয়েছিল। তা কাটাতে ঐ সময়ই দ্বীপের প্রথম ডিস্যালিনেশন প্ল্যান্ট গড়ে ওঠে। সমুদ্রের নোনা জল পরিশ্রুত করে তা পানীয় জল হিসেবে ব্যবহার শুরু হয়।
সরকারি তরফে ডিস্যালিনেশন প্ল্যান্ট গড়ে তোলা হলেও বারমুডার বেশিরভাগ মানুষ আজও বৃষ্টির জল ধরে রেখে তা ব্যবহারের পক্ষপাতী। জীবন বাঁচাতে জলের জন্য যে লড়াই তারা চালাচ্ছেন, তাদের কাছে সরকারি পানি নেয়ার অর্থ সেই লড়াইয়ে হার মানা। ঐ দ্বীপের মানুষ জীবনযুদ্ধে হার মানতে রাজি না।





Post a Comment