একই শরীর নিয়ে যেভাবে জীবন কাটাচ্ছেন দুই বোন

 


ODD বাংলা ডেস্ক:  তাদের দু’জনেরই পৃথক হৃদয়, পেট, মেরুদণ্ড, ফুসফুস আছে। তবুও এক শরীররই তাদের অবলম্বন। এক শরীর হলেও দুই মাথা নিয়ে জন্মায় জমজ দুই বোন অ্যাবিগাইল লরাইন হেনসেল এবং ব্রিটনি লি হেনসেল। ১৯৯০ সালে মার্চে জার্মানির মিনেসোটায় জন্ম হয় এই দুই বোনের। এক শরীর হলেও তাদের মাথা ও ঘাড় আলাদা। দুই পায়ে ভর করে চলেন তারা। এমনকি তাদের হাতও দুটি।


অ্যাবি ও ব্রিটনি সংযুক্ত জমজ। তাদের শরীরের ভেতরের অঙ্গ-প্রত্যঙ্গমূহ সবই আলাদা এমনকি তাদের মাথাও। তবে তারা দু’জনে একসঙ্গে সংযুক্ত। ডাইসফ্যালিক প্যারাপ্যাগাস যমজ হিসেবে বিবেচিত এই দুই বোন। দুই বোনই তাদের একটি করে হাত ও পা পেয়েছেন।


তাদের মতো সংযুক্ত জমজদের সংখ্যা বিশ্বব্যাপী অনেক কমই আছেন। ৫০ হাজারের মধ্যে মাত্র একজন এমনভাবে জন্মাতে পারে। এদের মধ্যে ৪০ থেকে ৬০ শতাংশ সংযুক্তারা বাঁচলেও অন্তত ৩৫ শতাংশই জন্মের পরপরই মারা যায়।


তারা মূলত ডিসেফুলাস টুইনস। তাদের মাথা, ঘাড়, হৃৎপিণ্ড, পিত্তথলি এবং পাকস্থলী আলাদা। অন্যদিকে তাদের ফুসফুস তিনটি। সেইসঙ্গে দুইটি কিডনি ও একটি করে লিভার, জরায়ু, ডিম্বশয়, যৌনাঙ্গ ও মূত্রাশয় আছে এই জমজদের। তিনটি হাত নিয়ে জন্মেছিলেন তারা। তবে সেটি তারা সেভাবে ব্যবহার করতে পারত না। এজন্যই তা পরবর্তীতে কেটে অপসারণ করেন চিকিৎসক।


ছোট থেকেই দুই মাথা ও এক শরীর নিয়ে বড় হয়েছেন অ্যাবি ও ব্রিটনি। এই বোনদের মস্তিষ্ক আলাদা হওয়ায় তাদের পছন্দ-অপছন্দ, ভালো লাগা, জ্ঞান সবই ভিন্ন। তারা নিজেদের হাত দিয়ে আলাদা লিখতেও পারেন। এমনকি দৌড়, সাঁতার, চুল আঁচড়ানোসহ গাড়ি চালানোর মতো ক্রিয়াকলাপগুলো সমন্বিতভাবে করতে পারেন অ্যাবি ও ব্রিটনি।


তারা কম্পিউটারেও আলাদাভাবে টাইপিং করতে পারেন। তাদের দু’জনের উচ্চতা সমান না হওয়ায় চলাফেরা করতে অসুবিধা হয়। অ্যাবির উচ্চতা ৫ ফুট ২ ইঞ্চি আর বিটনির ৪ ফুট ১০ ইঞ্চি।


২০০৬ সালের ডিসেম্বরে দ্য লার্নিং চ্যানেলে এই দুই বোনের সাক্ষাত্কার প্রকাশ করা হয়। তাদের দৈনন্দিন জীবন এবং ভবিষ্যতের পরিকল্পনা নিয়ে আলোচনা করা হয়েছিল।


সাক্ষাৎকারে তারা বলেন, জন্মের পরপরই তার বাবা-মা দুই বোনকে আলাদা করার জন্য চিকিৎসকের পরামর্শ চেয়েছিলেন। তবে চিকিৎসক নিষেধ করে বলেছিলেন, তাদের আলাদা করায় মৃত্যুঝুঁকি ছিল। যদিও অনেক সংযুক্ত জমজদের আলাদা করার ঘটনা আছে। তবে অ্যাবি ও ব্রিটনির ক্ষেত্রে সে সুযোগ মেলেনি।


জানলে অবাক হবেন তারা দু’জনেই আলাদাভাবে গাড়ি চালাতে পারেন এবং উভয়েরই ভিন্ন ড্রাইভিং লাইসেন্স আছে। অ্যাবি ড্রাইভারের আসনের ডানদিকে থাকা ডিভাইসগুলো নিয়ন্ত্রণ করে; আর ব্রিটানি বাম দিকের। তারা একসঙ্গে স্টিয়ারিং হুইল নিয়ন্ত্রণ করে।


২০০৮ সালে উচ্চশিক্ষার জন্য অ্যাবি ও ব্রিটনি বেথেল ইউনিভার্সিটিতে ভর্তি হন। ২০১২ সালে তারা স্নাতক সম্পন্ন করেন। তারা দু’জনে ভিন্ন বিষয়ের উপর পড়ালেখা করেছেন। এখন যুক্তরাষ্ট্রের একটি স্কুলের পঞ্চম শ্রেণির শিক্ষক। তবে তারা একজনের বেতন পান বলে জানা গেছে।


অ্যাবি বলেন, একসঙ্গেই যেহেতু আমরা শ্রম দিয়ে থাকি এজন্য হয়তো একজনের বেতন পাই। দুই বোনের একজন ইংরেজি পড়ান অন্যজন গণিত। যমজ দুই বোন তাদের নিজেদের সব কাজ নিজেরাই করে থাকেন। তারা আলাদা মানুষকে বিয়ে করারও স্বপ্ন দেখেন। তাদেরও ইচ্ছে আছে সংসার ও সন্তান লালন-পালন করার।

কোন মন্তব্য নেই

Blogger দ্বারা পরিচালিত.