সমুদ্রের দৈত্যাকার এক প্রাণী, তিমির চেয়েও দ্বিগুণ!
ODD বাংলা ডেস্ক: বিশালাকার এক প্রাণী। তিমির চেয়েও দ্বিগুণ আকৃতির। সমুদ্রের দীর্ঘতম প্রাণী হিসেবে বিবেচিত এটি। ভাবছেন, এ আবার কেমন প্রাণী? এটি এক প্রজাতির জেলিফিশ। ১৫০ ফুটেরও বেশি দীর্ঘ হয়ে থাকে এই মাছ।
সম্প্রতি শ্মিট ওশান ইনস্টিটিউটের কয়েকজন গবেষক অস্ট্রেলিয়ার পশ্চিম প্রান্তে গভীর জলে সাবমেরিনে অবস্থান করছিলেন। সেখানে তারা সমুদ্রের ওই অঞ্চলের প্রাণীদের নিয়ে একটি গবেষণা চালাচ্ছিলেন। ওয়েস্টার্ন অস্ট্রেলিয়ান যাদুঘরের সিনিয়র গবেষণা বিজ্ঞানী ড. নেরিদা উইলসন কম্পিউটার স্ক্রিনে সবসময় নজর রাখছিলেন।
হঠাৎই ড. উইলসনের কম্পিউটার স্ক্রিনে কিছু একটা দেখে চোখ আটকে গেল। তিনি সেখান থেকে একেবারেই চোখ সরাতে পারছিলেন না। সমুদ্রের প্রায় দু্ই হাজার ফুট নিচে রোবট দিয়ে পর্যবেক্ষণ করছিলেন গবেষকরা। সেখানে তারা দেখতে পান প্রায় ১৫০ ফুট দীর্ঘ এক সিফোনোফোর্স। যেটি সেখানে গোল হয়ে ঘুরছিল। এটি একটি তিমির থেকেও দীর্ঘ ছিল। এটি এক ধরনের জেলিফিশ।
ওয়ার্ল্ড রেজিস্টার অব মেরিন স্পেসিফিক্স অনুসারে, সমুদ্রে প্রায় ১৭৫ প্রজাতির সিফোনোফোর্স রয়েছে। এদের দেহ লম্বা, পাতলা এবং স্বচ্ছ হয়ে থাকে। আকার এবং বৈশিষ্ট্য অনুসারে এদের তিনটি ভাগে ভাগ করা হয়েছে। সেগুলো হল সাইস্টোনেক্টা, ফিজোনেক্টা এবং ক্যালিকোফোরায়ে। সাধারণত সিফোনোফোর্সের দৈর্ঘ্য ১২০ ফুট পর্যন্ত হয়ে থাকে। তবে এই সিফোনোফোর্সটির দৈর্ঘ্য ছিল ১৫০ ফুট। যা তিমির চেয়ে দ্বিগুণ দীর্ঘ এবং একটি হ্যাম্পব্যাক তিমির চেয়ে তিনগুণ দীর্ঘ।
ছোট সিফোনোফোর্স কম এবং উষ্ণ জলে বসবাস করে। আর বড় সিফোনোফোর্সরা গভীর সমুদ্রে বাস করে। এরা এক জায়গায় খুব কম সময়ই থাকে। ঘন ঘন এরা এদের জায়গা বদল করে। সাধারণত এরা মাংসাশী প্রাণী। এরা বিভিন্ন ধরনের কোপপড, ছোট ক্রাস্টেসিয়ান এবং ছোট মাছ শিকার করে থাকে। শিকারকে আকৃষ্ট করতে শরীর থেকে লাল আলো নির্গত করে।
তবে কয়েকটি প্রজাতি আছে যারা নীল এবং সবুজ আলোও নির্গত করে। যখন সম্ভাব্য শিকারের মুখোমুখি হয়, তখন তারা তাদের টেম্পলেটগুলো ব্যবহার করে শিকারের চারপাশে ৩০ থেকে ৫০ সে.মি পর্যন্ত একটি জাল তৈরি করে। জালে আটকা পড়া শিকার এরা খাবার হিসেবে গ্রহণ করে। সিফোনোফোর্স প্রজনন পদ্ধতি একেক প্রজাতির মধ্যে একেক রকম তবে ডিমের মাধ্যমেই এদের প্রজনন ঘটে থাকে।
অস্ট্রেলিয়ার গভীর সমুদ্রে অন্বেষণকারী বিজ্ঞানীরা প্রায় ৩০ টি নতুন সামুদ্রিক প্রজাতি আবিষ্কার করেছেন। এর মধ্যে এটিই এখন পর্যন্ত সবচেয়ে দীর্ঘতম প্রাণী। আর এটাই সমুদ্রের দীর্ঘতম প্রাণী বলে ধারণা করছেন বিজ্ঞানীরা। গবেষকরা রোবটের সাহায্যে একটি স্ক্রাবিং ব্রাশ দিয়ে সিফোনোফোর্সটির ডিএনএ সংগ্রহ করেন। যা ওয়েস্টার্ন অস্ট্রেলিয়ান যাদুঘরে প্রদর্শিত হবে।
গবেষক দলটি তাদের গবেষণায় প্রায় ১৮১ ঘণ্টা ফুটেজ ধারণ করেন। তারা সাবমেরিনে থেকে রোবটের সাহায্যে তাদের গবেষণা পরিচালনা করেন। রোবটটি সমুদ্রের ১৫ হাজার ফুট গভীরে সমুদ্রের প্রাণীদের চিত্র ধারণ করতে সক্ষম। শ্মিট ওশান ইনস্টিটিউটের নির্বাহী পরিচালক জ্যোতিকা বিরমানি বলেছেন, তাদের এ অভিযানের লক্ষ্য ছিল সমদ্রের নতুন প্রাণী আবিষ্কার করা। সেই সঙ্গে সমুদ্রের জলের তাপমাত্রা এবং পিএইচ স্তর পরিমাপ করা।





Post a Comment