মাথার খুলিতে ড্রিল করে অপারেশন করা হত!



 ODD বাংলা ডেস্ক:  মানব সভ্যতা বিকাশের পাশাপাশি চিকিৎসা শাস্ত্রও ক্রমাগত উন্নতি লাভ করেছে। বর্তমান সময়ের অত্যাধুনিক চিকিৎসা বিজ্ঞানের পেছনে রয়েছে সুদীর্ঘ এক ইতিহাস। প্রাচীন মিশর, ভারত, গ্রিস এবং রোমে চিকিৎসা শাস্ত্রের সূচনা হয়েছিল। 

অনেক রোগ ব্যাধি আছে যা শুধু ওষুধ দিয়ে নিরাময় সম্ভব নয়। প্রয়োজন পড়ে শরীর কাঁটা ছেঁড়ারও। চিকিৎসা বিজ্ঞানের ভাষায় যাকে সার্জারি বা শল্য চিকিৎসা বলা হয়। প্রাচীনকাল থেকেই যার প্রচলন ছিল। শল্য চিকিৎসার ইতিহাস নিয়েই আজকের লেখা-


৮০০০ খ্রিষ্টপূর্বে মিশরে প্রথম ট্রেফিনেশনের মাধ্যমে শল্য চিকিৎসা করার নিদর্শন পাওয়া যায়। সাধারণ যন্ত্রপাতির মাধ্যমে মাথার খুলিতে ড্রিল করে শল্য চিকিৎসার নামই ট্রেফিনেশন। তখন এ চিকিৎসার জন্য কোনো বিশেষ যন্ত্রপাতি কিংবা কক্ষও ছিল না। প্রাচীন ব্যাবিলনীয় সভ্যতার হাম্বুরাবি কোড তৈরির সময়েও শল্য চিকিৎসা প্রচলিত ছিল বলে প্রমাণ পাওয়া যায়। প্রত্নতাত্ত্বিক নিদর্শন থেকে ট্রেফিনেশনের প্রমাণ মেলে। 


৬৫০০ খ্রিষ্টপূর্বাব্দের ফ্রান্সের একটি সমাধিস্থল থেকে প্রাপ্ত ১২০টি মাথার খুলির মধ্যে ৪০টিতে শল্য চিকিৎসার চিহ্ন পাওয়া গেছে। প্রাচীন ভারতেও নিখুঁত অস্ত্রোপচার প্রচলন ছিল। খ্রীষ্টপূর্ব ৬০০ অব্দে চিকিৎসা শাস্ত্রের বিখ্যাত গ্রন্থ- সুশ্রুত সংহিতা সংকলিত হয়। গ্রন্থটির রচয়িতা ছিলেন প্রাচীন ভারতীয় চিকিৎসা বিজ্ঞানী এবং দার্শনিক মহর্ষি সুশ্রুত। তিনি শল্যচিকিৎসায় বিশেষ পারদর্শী ছিলেন। তবে মেডিসিনেও তার অগাধ জ্ঞান ছিল।  


তার গ্রন্থে শল্যচিকিৎসার পদ্ধতির পাশাপাশি প্রসূতিবিদ্যার নানাবিধ সমস্যা নিয়ে আলোচনা করা হয়েছে। চীনা শল্যচিকিৎসাবিদ হুয়া তু ১৯০ খ্রিষ্টপূর্বাব্দে অ্যানেস্থেসিয়া সম্পর্কে ধারণা প্রদান করেন। যাতে শল্য চিকিৎসার ক্ষেত্রে নতুন দিগন্ত সূচনা হয়। তবে গ্রিক শল্যচিকিৎসকরা প্রথম এক্ষেত্রে প্রশিক্ষণ কর্মসূচি প্রচলন করেছিল। তারা একটি সেমি-স্কুল পরিচালনা করে অস্ত্রোপচারের চর্চার ব্যবস্থা করে। 


মুসলিম চিকিৎসকরা সার্জিকাল স্যুট এবং ইনফেকশন নিয়ন্ত্রণে রাখার জন্য কোয়ারেন্টাইন পদ্ধতির প্রচলন ঘটায়। রোমানরা আনুমানিক ৬৫ খ্রিষ্টাব্দে অপারেটিং টেন্টের (তাবু) প্রচলন করেন, যেখান থেকে বর্তমানের অপারেশন রুমের ধারণা পাওয়া যায়। রোমানদের অপারেটিং টেন্ট প্রথম দিকে বাইরে স্থাপিত হত। মধ্য যুগে এসে তা অন্দরে প্রতিষ্ঠিত হয়। যেখানে একটি কাঠের টেবিলের উপর অস্ত্রোপাচার করা হত। 


সময়ের সঙ্গে হাসপাতাল ট্রেন্টের পদ্ধতি উঠে যায়। তবে নেপোলিয়ানের সেনাবাহিনীর সার্জন ডোমিনিক জ্যান নেপোলিয়োনিক যুদ্ধের সময় পুনরায় রোমান-স্টাইলের হাসপাতাল টেন্ট (তাবুর মধ্যে চিকিৎসা সেবা দেয়া হত) চালু করেন। সে সময় যুদ্ধাহত সৈন্যদের ঘোড়ার গাড়িতে এই টেন্টে অস্ত্রোপচার এবং আনুষঙ্গিক চিকিৎসার জন্য আনা হত। 


আমেরিকার গৃহযুদ্ধের সময়েও সার্জনরা রোমান ঘরানার হাসপাতাল টেন্ট তৈরি করেছিল। তারাও নেপোলিয়নের সেনাবাহিনীর সার্জন ডোমিনিকের আদলে অ্যম্বুলেন্স তৈরি করেছিল। তারা অপারেশন থিয়েটারকে অস্ত্রোপচার এবং প্রশিক্ষণ দুই কাজেই ব্যবহার করত। পরবর্তীতে আঠার এবং উনিশ শতকে ইউরোপ ও আমেরিকায় অপারেশন থিয়েটার, হাসপাতাল অনেকটা প্রাতিষ্ঠানিক রূপ লাভ করে। 


প্রথম বিশ্বযুদ্ধের পর অস্ত্রোপচার রুমে গ্লাভস, গাউন, মাস্ক, অ্যান্টিসেপ্টিক প্রভৃতি সুবিধাদি যুক্ত হয়। বর্তমান সময়ে রোগী কিংবা চিকিৎসক সবার জন্যই অপারেশন রুমে স্বয়ংক্রিয় এবং অত্যাধুনিক সব জিনিপত্র ও যন্ত্রপাতির ব্যবস্থা থাকে।

কোন মন্তব্য নেই

Blogger দ্বারা পরিচালিত.