পৌষ মাসে একদল কিশোর-তরুণ বাড়ি থেকে চাল-ডাল ডিম হাঁড়ি নিয়ে কোন খোলা জায়গায় অথবা গাছের নিচে বসে রান্না করে খাওয়ার প্রচলন ছিল। যা দেশের অঞ্চল, এলাকাভেদে পুষ্ণা, পুষলা, পুষলি, পুষালি বা পুষরা নামে পরিচিত। এই শব্দগুলোও নতুন প্রজন্মের কাছে অচেনা।
কোথাও কোথাও একে টোপাপাতি, ভুলকাভাতও বলা হয়ে থাকে। কালের কড়ালচক্রে সেই চুড়ুইভাতি বা টোপাপাতি থেকে বনভোজন বা পিকনিকের প্রচলন এসেছে। কালে কালে বনভূমিতে গিয়ে প্রীতি সম্মিলনে প্রীতি উৎসবের সঙ্গে চুলা জ্বালিয়ে রান্নাবান্না করে প্রীতিভোজন। ভোজনের পর বিচিত্রানুষ্ঠান। প্রীতিপ্রদ উৎসবের নাম এভাবেই হয়ে যায় বনভোজন।
শাব্দিক অর্থ বিশ্লেষণ ও রূপান্তর
পিকনিক একটি ফ্রেঞ্চ শব্দ। এর অর্থ প্রকৃতির কোলে বসে খাওয়া-দাওয়া আর হৈ হুল্লোড় করা। খাওয়া-দাওয়া বলতে রোজকার সাধারণ খাবারের পরিবর্তে একটু অন্য ধরনের খাওয়ার কথাই এখানে বিবেচ্য। নদী তীর, পার্ক, গ্রামের প্রান্তে একটুকরো ময়দান অথবা সবুজে ঘেরা বনভূমিই চড়ুইভাতি অথবা বনভোজনের আদর্শ জায়গা। বিগত কয়েক দশক ধরে আমরা বাঙালিরা পিকনিক বলতে বুঝি একটা শীতকালীন গেটটুগেদার। আত্মীয়-স্বজনের পিকনিক, পড়ার ব্যাচের পিকনিক, বন্ধুদের পিকনিক। আমাদের ছেলেবেলার সেই চড়ুইভাতির এখন কতোই না রকমফের!
পিকনিক প্রথার শুরু ১৬৯২ সালের দিকে। সেকালে কয়েকজন মিলে শীতকালে কোন সরাইখানায় গিয়ে খানাপিনা, পরে যুক্ত হলো আড্ডা। এই পিকনিক ছিল শুধু রাজকীয় আয়োজনে। পরে সাধারণ মানুষ বিকল্প আয়োজন শুরু করল। এককালে রাজা-বাদশার ছেলেপুলে সৈন্যসামন্ত নিয়ে বনে-জঙ্গলে ভোজনের আয়োজন করতেন। বনভোজনের রেওয়াজ শুরু তখন থেকেই। সময়ের পরিবর্তনের সঙ্গে সঙ্গে পাল্টে গেছে রূপ বৈচিত্র্য। এখন বনভোজন হয় করপোরেট আদলে। বছরের শুরুতেই বিভিন্ন স্কুল-কলেজে, অফিসে রীতিমতো হুড়োহুড়ি লেগে যায় বনভোজন আয়োজনে। এ সময় পিকনিক স্পট, ক্যাটারিং কোম্পানি, যাতায়াত ব্যবস্থা করতে হিমশিম খেতে হয় অনেককেই।
পিকনিকের আতুঁড়ঘর
পিকনিকের আঁতুড়ঘরের ফরাসী বিপ্লবের রাজপুরুষরা ফ্রান্স ছেড়ে পালিয়ে অস্ট্রিয়া, প্রুশিয়া, আমেরিকায় জড়ো হয়। বেশিরভাগ পাড়ি দেয় ইংল্যান্ড। ফ্রান্স জার্মানী সুইডেন ঘুরে পিকনিক চলে আসে ইংল্যান্ডে। ১৭৬৩ সালে লেডি মেরি কোক বোনকে লেখা চিঠিতে পিকনিক পার্টির কথা উল্লেখ করেছেন। উনিশ শতকের শুরুতে ইংল্যান্ডে একত্রে বসে খাওয়ার ‘পিকনিক সোসাইটি’র উদ্ভব ঘটে। ভিক্টোরিয়ান ব্রিটেনে পিকনিক ছিল সামন্ত প্রভুদের এস্টেটের আউটডোরে খাওয়া-দাওয়ার অলস অবসর। পরে মধ্যবিত্তের জীবনে আসে পিকনিক অবকাশ। ইনডোরের বদলে আউটডোরে পিকনিক হয়ে ওঠে জনপ্রিয়।





Post a Comment