বাংলার এই অঞ্চলগুলি ভৌতিক বলেই পরিচিত, যাবেন নাকি এখানে?
পশ্চিমবঙ্গে এমন অনেক স্থান রয়েছে যেগুলিকে ভুতুড়ে বা প্রেতাত্মাদের বাসস্থান হিসেবে বিবেচনা করা হয়। এই স্থানগুলো স্থানীয় লোককাহিনি, ভৌতিক অভিজ্ঞতা এবং রহস্যময় ঘটনাগুলির জন্য পরিচিত। নিচে পশ্চিমবঙ্গের কিছু বিখ্যাত ভুতুরে স্থান নিয়ে আলোচনা করা হলো:
১. হেস্টিংস হাউস, কলকাতা:
হেস্টিংস হাউস কলকাতার অন্যতম ভুতুড়ে স্থান হিসেবে পরিচিত। এই হাউসটি ব্রিটিশ আমলে গভর্নর-জেনারেল ওয়ারেন হেস্টিংসের বাসস্থান ছিল। লোককাহিনিতে বলা হয়, হেস্টিংসের মৃত্যুর পর তাঁর আত্মা এই বাড়িতে ঘুরে বেড়ায়। কিছু মানুষ দাবি করেন যে, তাঁরা রাতের বেলা হেস্টিংসের আত্মাকে ঘোড়ায় চড়ে বাড়ির চারপাশে ঘুরতে দেখেছেন। এছাড়াও, হাউসের ভেতরে অদ্ভুত আওয়াজ এবং ঘটনা অনুভব করেছেন এমন দাবিও রয়েছে।
২. দক্ষিণেশ্বর মন্দিরের শ্মশানঘাট, কলকাতা:
দক্ষিণেশ্বর মন্দিরের শ্মশানঘাট পশ্চিমবঙ্গের অন্যতম ভুতুড়ে স্থান হিসেবে বিবেচিত হয়। এই স্থানটি শ্মশানঘাট হওয়ায় এখানে অনেকেরই আত্মা ঘুরে বেড়ানোর কথা শোনা যায়। অনেকে বলেছেন, তারা এখানে রাতে অদ্ভুত আওয়াজ এবং প্রেতাত্মার উপস্থিতি অনুভব করেছেন।
৩. রাইটার্স বিল্ডিং, কলকাতা:
কলকাতার রাইটার্স বিল্ডিং শুধু ব্রিটিশ যুগের ঐতিহাসিক একটি স্থান নয়, এটি ভুতুড়ে ঘটনাগুলির জন্যও পরিচিত। স্থানীয়রা বলে থাকেন যে, এই বিল্ডিংয়ের কিছু নির্দিষ্ট অংশে রাতের বেলা অদ্ভুত আওয়াজ শোনা যায় এবং সেখানে কেউ থাকলে সে অস্বস্তি অনুভব করে। ব্রিটিশ শাসনের সময় এখানে অনেক নৃশংসতা সংঘটিত হয়েছিল, যা এই বিল্ডিংকে ভুতুড়ে বানিয়েছে বলে মনে করা হয়।
৪. ঘুটিয়ারি শরিফ, কলকাতা:
ঘুটিয়ারি শরিফ পশ্চিমবঙ্গের অন্যতম রহস্যময় স্থান। এটি মূলত একটি ধর্মীয় স্থান হলেও, এখানে ভৌতিক অভিজ্ঞতার কথা শোনা যায়। বলা হয়, এই স্থানে কিছু অতিপ্রাকৃত শক্তির উপস্থিতি রয়েছে এবং এখানে অনেকেই ভুতুড়ে ঘটনার সম্মুখীন হয়েছেন। বিশেষ করে রাতের বেলা এখানে অদ্ভুত আওয়াজ ও ছায়া দেখা যায় বলে মানুষজন দাবি করে।
৫. নর্থব্রুক হল, মুর্শিদাবাদ:
মুর্শিদাবাদে অবস্থিত নর্থব্রুক হলও একটি ভুতুড়ে স্থান হিসেবে পরিচিত। এটি একটি পুরানো ব্রিটিশ যুগের স্থাপনা, যেখানে অনেকের মৃত্যুর ঘটনা ঘটেছিল। এখানে রাতে অনেক অদ্ভুত ঘটনা ঘটেছে বলে স্থানীয়রা দাবি করেন, যেমন অদ্ভুত আওয়াজ, দরজা নিজে থেকে খুলে যাওয়া এবং অদৃশ্য ছায়া দেখা।
৬. জোড়াসাঁকো ঠাকুরবাড়ি, কলকাতা:
রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের পৈতৃক বাসভবন জোড়াসাঁকো ঠাকুরবাড়ি। যদিও এটি মূলত একটি সাংস্কৃতিক এবং ঐতিহাসিক স্থান, তবে এই বাড়ির কিছু অংশ ভুতুড়ে বলে বিবেচিত হয়। স্থানীয়রা বলে থাকেন, এখানে ঠাকুর পরিবারের কিছু মৃত সদস্যের আত্মা বাস করে এবং বিশেষ করে রাতের বেলা সেখানে অদ্ভুত আওয়াজ শোনা যায়।
উপসংহার:
পশ্চিমবঙ্গের এসব ভুতুড়ে স্থানগুলি ইতিহাস, লোককাহিনি এবং ভৌতিক অভিজ্ঞতার মিশেলে তৈরি। যদিও এসব স্থানগুলির ভৌতিক ঘটনাগুলি বৈজ্ঞানিকভাবে প্রমাণিত নয়, তবে স্থানীয় লোকজনের বিশ্বাস এবং অভিজ্ঞতা এগুলিকে রহস্যময় এবং ভীতিকর করে তুলেছে। যারা রহস্য এবং ভৌতিক কাহিনির প্রতি আগ্রহী, তারা এই স্থানগুলি পরিদর্শন করতে পারেন। তবে সতর্কতা অবলম্বন করা অবশ্যই প্রয়োজন।
Post a Comment