হিমাচল প্রদেশের কিছু পাহাড়ি গ্রামে আজও চলে আসছে এক বিস্ময়কর প্রথা, যাকে বলে 'দ্রৌপদী প্রথা' বা 'পলিয়ান্ড্রি'। এই প্রথা অনুযায়ী, একজন নারী একাধিক ভাইয়ের সঙ্গে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হন। মূলত কুলু, কিন্নর, স্পিতি ও লাহৌল জেলার প্রত্যন্ত পাহাড়ি গ্রামগুলিতে এই প্রথার অস্তিত্ব এখনও দেখা যায়।
কী এই দ্রৌপদী প্রথার ইতিহাস?
'মহাভারত' মহাকাব্যের দ্রৌপদীর পাঁচ পাণ্ডব ভাইকে বিবাহ করার কাহিনির সঙ্গে তুলনা করে এই প্রথার নামকরণ হয়েছে। তবে ঐতিহাসিকভাবে এই প্রথার জন্ম হয়েছিল সম্পত্তি ও কৃষিজমি রক্ষার প্রয়োজনেই। পাহাড়ি এলাকায় জমির পরিমাণ কম। তাই জমির ভাগাভাগি যাতে না হয়, সেই কারণেই এক মহিলাকে একই পরিবারের একাধিক ভাইয়ের সঙ্গে বিবাহ দেওয়া হত। এতে পরিবারের সম্পত্তি এক জায়গায় থেকে যেত এবং ভাঙনের শিকার হতো না।
বর্তমানে কি এই প্রথা চলে?
বর্তমানে শিক্ষার প্রসার ও আধুনিকতার কারণে অনেকাংশে এই প্রথার প্রচলন কমেছে। তবে এখনও কিছু গ্রামে এই প্রথার অস্তিত্ব রয়েছে। সরকারিভাবে এমন প্রথা স্বীকৃত নয়, তবে স্থানীয় সমাজের প্রথা হিসেবে এটি মান্যতা পেয়ে এসেছে।
মহিলাদের ভূমিকা ও সমস্যা
এই ধরনের প্রথায় নারীদের সামাজিক অবস্থান জটিল। যদিও সম্পত্তি রক্ষার যুক্তি থাকলেও, মহিলাদের ইচ্ছাকে অনেক সময়ই গুরুত্ব দেওয়া হয় না। ফলে নারীর ব্যক্তিগত জীবনে অসুবিধার সৃষ্টি হয়। সন্তানদের পিতৃপরিচয় নিয়েও অনেক সময় দেখা দেয় জটিলতা।
এই প্রথার বর্তমান পরিস্থিতি
বর্তমানে অনেক তরুণ-তরুণী এই প্রথার বিরুদ্ধে সওয়াল তুলছেন। সরকারি নানা প্রকল্প, শিক্ষা ও সচেতনতার কারণে ধীরে ধীরে পরিবর্তন আসছে। তবে এখনও কিছু বিচ্ছিন্ন এলাকায় এটি দেখা যায়।
দ্রৌপদী প্রথা এক ঐতিহাসিক সামাজিক ব্যবস্থা, যার মূল উদ্দেশ্য ছিল সম্পত্তি রক্ষা। কিন্তু আধুনিক সমাজে এর প্রাসঙ্গিকতা নিয়ে প্রশ্ন রয়েছে। এখন সময় এসেছে নারীর অধিকারকে গুরুত্ব দিয়ে এই প্রথার নতুন ব্যাখ্যা খোঁজার।
Post a Comment