প্রতিদিন সমুদ্রের বুক চিরে জেগে ওঠে এই শিবমন্দির, যার নির্মাণ রহস্য আজও অধরা!


Odd বাংলা ডেস্ক: ঈশ্বরের বাস তো সব জায়গায়- অন্তত এমনটাই মনে করেন ভক্তরা। কিন্তু তাই বলে মন্দির সব জায়গায় থাকতে পারে এমনটা সচরাচর আপনার বিশ্বাস নাও হতে পারে। তাতে অবশ্য অস্বাভাবিকতার কিছুই নেই। মানে কেউ যদি আপনাকে বলে যে, সমুদ্রের তলদেশে রয়েছে ঈশ্বরের মন্দির। তাহলে কি আপনি তা বিশ্বাস করবেন? 


এমনিতে ভারতবর্ষে পাহাড়, পর্বত, জঙ্গল, গুহা, সমুদ্রতট এবং জলপ্রপাত সংলগ্ন এলাকায় হিন্দু মন্দিরের একাধিক নিদর্শন পাওয়া গিয়েছে। তবে আজ আপনাদের এমন এক মন্দিরের সন্ধান দেব যা সমুদ্রের তলদেশে অবস্থিতি। গুজরাতের ভাবনগরে আরব সাগরের নীচে নিষ্কলঙ্ক মহাদেব মন্দির নিয়ে ভক্তদের মনে রহস্যের শেষ নেই। সমুদ্রতট থেকে প্রায় ১.৫ কিলোমিটার দূরত্বে গেলে দর্শণ মেলে এই শিবলিঙ্গের। 


জোয়ারের সময় সম্পূর্ণ জলে নিম্মজিত হয়ে যায়। আর যখন ভাটা চলে তখন ফের জেগে ওঠেন মহাদেব। জানা যায়, দুপুর একটা থেকে রাত দশটার মধ্যে কেবল দেখা মেলে মহাদেবের। তারপর বাকি সময়টা জলের নিজেই নিমজ্জিত থাকেন তিনি। কেবল মন্দিরের মাথার ওপরের পতাকাই চোখে পড়ে তখন। জলস্তর কমে গেলেই একমাত্র মন্দিরের কাছে যাওয়া যায়। জলস্তর যখন ধীরে ধীরে কমতে থাকে তখন মনে হয় মহাদেব যেন সমুদ্র ফুঁড়ে উঠছেন। 


ভক্তরা সাধারণত জোয়ারের জল চলে যাওয়ার জন্য অপেক্ষা করেন, মহাদেবকে দর্শনের জন্য। পূরাণতত্ত্ববিদরা বলেন, এই মন্দিরটি কুরুক্ষেত্র যুদ্ধের পর পাণ্ডবরা নির্মাণ করেছিলেন।  মন্দিরটির স্থাপত্যকার্য সত্যিই বিস্ময়কর। আধুনিককালে ইঞ্জিনিয়ার এবং প্রযুক্তিবিদদের কাছে এই স্থাপত্যকার্যের কৌশলটি এখনও অমীমাংসিত এবং রহস্য হিসাবেই থেকে গিয়েছে। 


মহাভারতে পাণ্ডবরা কৌরবদের হত্যা করে কুরুক্ষেত্রের যুদ্ধে জয়লাভ করেছিল। এই হত্যাকাণ্ডের পর তাঁরা চরম পাপবোধে ভোগেন। তাই তাদের পাপস্খালন করার জন্য শ্রীকৃষ্ণ পাণ্ডবদের একটি কালো পতাকা এবং একটি কালো গাভী দিয়ে বলেছিলেন যে যখন ওই পতাকা এবং গাভী সাদা হয়ে যাবে, তখনই তাদের ক্ষমা মিলবে। সেইসঙ্গে ভগবান শ্রীকৃষ্ণও তাঁদের মহাদেবের কাছে ক্ষমা চাইতে বলেছিলেন। কিন্তু বহু দিনে কেটে গেলেও গাভী এবং পতাকার রঙ বদলায়নি। এরপর ওই কালো গাভীকে অনুসরণ করতে রতে কলিয়াক সমুদ্রতটে এসে উপস্থিত হন। সেখানে আসতেই পতাকা এবং গাভীর রঙ বদলে যায়। এরপর সেখানেই পাণ্ডবরা ধ্যানে মগ্ন হন এবং ভগবান শিবের কাছে ক্ষমা চেয়ে নেন। পাঁচ ভাইয়ের দ্বারা মুগ্ধ হয়ে মহাদেব তাঁদের প্রত্যেকের কাছে লিঙ্গরূপে আবির্ভূত হন। পঞ্চপাণ্ডব নিষ্কলঙ্ক মহাদেব নামে তাঁদের পুজো করেছিলেন। নিষ্কলঙ্ক অর্থে দাগহীন, নির্মল, নির্দোষ ইত্যাদি বোঝায়। তাই এই মন্দিরের দর্শণে সকলের সকল পাপ ধুয়ে-মুছে যায় বলেই মনে করেন ভক্তরা। 
Blogger দ্বারা পরিচালিত.