এই নগ্ন নারী মূর্তির নাম 'আশাবরী', ভগবান শিবের সমতুল্য এই দেবীর আজ আর পুজো হয় না


Odd বাংলা ডেস্ক: বিয়ে করে কৈলাসে এসেছেন পার্বতী। স্বামী ভূতনাথ। সংসার নিয়ে তাঁর কোনও মাথা ব্যথাই নেই। কার্যত একাকীত্বেই জীবন কাটে। স্বামী শিব ছাড়া তাঁর সঙ্গী নন্দী-ভৃঙ্গি। শিবের এই দুই চ্যালাই সারাক্ষণ পার্বতীকে বিভিন্ন কাজে সাহায্য করে থাকে। কিন্তু, একজন মহিলা এরকম পুরুষসঙ্গে কাঁহাতক থাকতে পারেন? কৈলাসে যদি দ্বিতীয় কোনও নারী থাকতেন, তাহলে মেয়েলি আড্ডাটা বেশ জমে যেত। শিব ঘরে এলে মনের কথা পাড়লেন পার্বতী। যদি বোনের মতো কেউ তাঁর সঙ্গে থাকত তাহলে কত না ভাল হত! শিবকে বললেন পার্বতী। শিব বললেন, তাহলে সরস্বতীকে ডেকে নিতে। কারণ, সরস্বতীকে নিজের বোন বানিয়ে বিয়ের পর কৈলাসে নিয়ে এসেছিলেন পার্বতী। কৈলাসমাতা খেয়াল করিয়ে দেন, সরস্বতীর সাংসারিক জীবন কতটা দায়িত্বের! তার উপর সরস্বতী আবার ব্রহ্মার স্ত্রী। সংসারের ব্যস্ততা সামলে তাঁর পক্ষে এসে কৈলাসে পার্বতীকে সঙ্গ দেওয়া সম্ভব নয়। পার্বতী আবদার করলেন, যদি শিবের কোনও বোন থাকত তাহলে কত না ভাল হত। শিব বললেন, ভাল করে বিষয়টি ভেবে দেখতে। পার্বতীর গোঁ। শিবকে প্রতিশ্রুতি দিলেন, তিনি ননদ পেলে তাঁকে পরম আদর যত্নে রাখবেন। তাঁর কোনও অসুবিধা হতে দেবেন না। খাওয়ানো-পরানো সব তিনি করে দেবেন বলে শিবকে জানালেন পার্বতী। উপায় না পেয়ে শিব বসলেন ধ্যানে। নিজের পবিত্র শক্তিকে কাজে লাগিয়ে হুবহু তাঁর মতো দেখতে এক নারীকে তৈরি করলেন শিব। সেই নারীর নাম আশাবরী। ইনিই শিবের বোন।

গায়ে কোনও বস্ত্র ছিল না আশাবরীর। দীর্ঘ কেশ আর সুডৌল নাক। তবে, পায়ের গোড়ালিতে বিশাল ফাটল। পরনে তাঁর শুধু বাঘছাল। পার্বতী ননদকে পেয়ে আপ্লুত। আশাভরীকে ভাল করিয়ে স্নান করিয়ে নতুন বস্ত্র পরিয়ে খেতে দেন তিনি। কিন্তু, আশাবরীর খিদে দেখে চমকে যান পার্বতী। যত জনের রান্না পার্বতী করেছিলেন এক লহমায় তার সবটাই খেয়ে ফেলেছেন আশাবরী। তাঁর আরও খাবার চাই। পার্বতী জানালেন, আর খাবার নেই। শুনবেন না আশাবরী। পার্বতী ছুটলেন শিবের কাছে। পার্বতী সবিস্তারে সমস্ত কথাই জানালেন। কিন্তু শিব স্মরণ করিয়ে দিলেন, পার্বতী-ই বলেছিলেন আশাবরীর যত্নের কোনও ত্রুটি হবে না। পার্বতী ফিরে গেলেন কৈলাসে। একদিন আশাবরীর আচরণে বিরক্ত ছিলেন পার্বতী। এই নিয়ে বউদি-ননদে খটাখটি। পরিণামে দুষ্টু আশাবরী তাঁর গোড়ালির ফাটলে পার্বতীকে বন্দি করে রাখলেন। পার্বতীর বিপদের কথা বুঝতে পেরে উদ্ধারে আসেন শিব। তিনি আশাবরীকে পার্বতীর ঠিকানা সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করেন। কিন্তু, আশাবরী বলেন তিনি জানেন না। ক্ষিপ্ত শিব এরপর আশাবরীকে ভর্ৎসনা করেন। আশাবরী, গোড়ালি ঝেড়ে পার্বতীকে মুক্তি দেন।

ননদের আচরণে রেগে যান পার্বতী। তিনি শিবের কাছে ক্ষমা চেয়ে পরিস্কার করে বলেন, এমন মেয়ের সঙ্গে সংসার করা কঠিন। আশাবরীর আচরণ যে তাঁকে পীড়া দিয়েছে, তাও জানান পার্বতী। কৈলাসে আশাবরীকে রাখতে পারবেন না বলেও শিবকে জানিয়ে দেন। শিব ঠিক করলেন আশাবরীর ত্রুটিগুলি মোচন করে সরিয়ে কিছু ভাল গুণ দিয়ে তাঁকে পুনর্জন্ম দেবেন। কিন্তু, পার্বতী বলে বসেন, আশাবরী যদি তাঁর চরিত্রে নমনীয়তা আনতে পারেন এবং তাঁকে সম্মান দিতে পারেন তবেই তিনি তাঁকে কৈলাসে থাকতে দেবেন। পার্বতীর এহেন ভাবনার কথা জেনে আশাবরীর পুনর্জন্মের পরিকল্পনা ত্যাগ করেন শিব। তিনি পার্বতীকে জানান, কখনই কেউ কারোর মনের মতো হতে পারে না। তার একটা স্বাধীন সত্তা থাকে। সেই সঙ্গে শিব এ-ও বলেন যে, দুই ভিন্ন রক্তের সম্পর্কের নারী একই ছাদের তলায় চিরটাকাল সুখী থাকতে পারেন না। তাই আশাবরীকে কৈলাস থেকে সরিয়ে দেন শিব।
Blogger দ্বারা পরিচালিত.