মহালয়ার দিন কেন করা হয় তর্পণ? নেপথ্যে রয়েছে কোন পৌরাণিক মাহাত্ম্য



Odd বাংলা ডেস্ক: মহালয়ার দিনে পিতৃপক্ষের অবসান হয়। আর এই পিতৃপক্ষের অবসানের সঙ্গে সঙ্গে সূচনা হয় দেবীপক্ষের। আজকের ভোরটা অন্যান্য দিনের চেয়ে একেবারেই অন্যরকম। রেডিওতে মহিষাসুরমর্দিনী শুনতে শুনতে দিনের শুরু।  আর আজ এই পিতৃপক্ষের শেষ দিনে অনুষ্ঠিত হয় তর্পণ।  

কিন্তু কেন অনুষ্ঠিত হয় তর্পণ?

হিন্দু পুরাণ অনুযায়ী, জীবিত ব্যক্তির তিন পূর্বপুরুষ পর্যন্ত স্বর্গ ও মর্ত্যের মাঝামাঝি অবস্থিত লোক পিতৃলোকে বাস করেন। পিতৃলোকের শাসক মৃত্যুর দেবতা যম। তিনিই সদ্যমৃত ব্যক্তির আত্মাকে মর্ত্য থেকে পিতৃলোকে নিয়ে যান। পরবর্তী প্রজন্মের একজনের মৃত্যু হলে পূর্ববর্তী প্রজন্মের একজন পিতৃলোক ছেড়ে স্বর্গে গমন করেন এবং পরমাত্মায় বিলীন হয়ে যান। এই প্রক্রিয়ায় তিনি শ্রাদ্ধানুষ্ঠানের ঊর্ধ্বে উঠে যান। এই কারণে, কেবলমাত্র জীবিত ব্যক্তির পূর্ববর্তী তিন প্রজন্মেরই শ্রাদ্ধানুষ্ঠান হয়ে থাকে।


মহাভারতে বলা আছে যে, কর্ণের আত্মা স্বর্গে গেলে সেখানে তাঁকে খেতে দেওয়া হল শুধুই সোনা আর ধনরত্ন। কর্ণ প্রশ্ন করলেন ইন্দ্রকে 'ব্যাপার কী?' ইন্দ্র বললেন, 'তুমি সারাজীবন সোনাদানাই দান করেছ, পিতৃপুরুষকে জল দাও নি। তাই তোমার জন্যে এই ব্যবস্থা।' কর্ণ বললেন, 'আমার কী দোষ? আমার পিতৃপুরুষের কথা তো আমি জানতে পারলাম যুদ্ধ শুরুর আগের রাতে। মা কুন্তী আমাকে এসে বললেন, আমি নাকি তাঁর ছেলে। তারপর যুদ্ধে ভাইয়ের হাতেই মৃত্যু হল। পিতৃত্বর্পণের সময়ই তো পেলাম না।'  ইন্দ্র বুঝলেন, কর্ণের দোষ নেই। তাই তিনি কর্ণকে ১৫দিনের জন্য মর্ত্যে ফিরে গিয়ে পিতৃপুরুষকে জল ও অন্ন দানের অনুমতি দিলেন। ইন্দ্রের কথা মতো এক পক্ষকাল ধরে কর্ণ মর্ত্যে অবস্থান করেন এবং পিতৃপুরুষকে অন্নজল দিলেন। তাঁর পাপ স্খলন হলো এবং যে পক্ষকাল কর্ণ মর্ত্যে এসে পিতৃপুরুষকে জল দিলেন সেই পক্ষটি পিতৃপক্ষ নামে পরিচিত হল।

তর্পণ কোথায় করা হয়?

মহালয়ার দিন পিতৃপুরুষের শ্রাদ্ধানুষ্ঠান অনুষ্ঠিত হয় দ্বিপ্রহরে নদী বা হ্রদের তীরে বা শ্রাদ্ধকর্তার বাড়িতে। অনেক পরিবার বারানসি এমনকি গয়ায় গিয়েও এই শ্রাদ্ধানুষ্ঠান করে থাকেন। এদিন পূর্বপুরুষকে ক্ষীর, ভাত, ডাল, গুড় ও কুমড়ো উৎসর্গ করা হয়। আর এটি সাধারণত রান্না করে রুপো বা তামার পাত্রে কলাপাতার উপর দেওয়া হয়।
Blogger দ্বারা পরিচালিত.