আজকের বিশেষ গল্প: উপলব্ধি

আমাদের পাড়ার সুন্দর গোলাপি বাড়িটা আজ রকমারি আলোকসজ্জায় সজ্জিত। আজ আমাদের পাড়াটা যেন কোনোও মায়াবী পরীর স্পর্শে বদলে গিয়েছে। চারিদিকে কেবল আলোর ঝলকানি আর উচ্চ সানাইয়ের শব্দ। আজ পাড়ার সকলের নিমন্ত্রণ ওই গোলাপি বাড়িতে কারণ আজ আমাদের প্রতিভা দিদির বিয়ে। আমি যখন খুব ছোট ছিলাম এই প্রতিভা দিদির সাথে প্রচুর খেলা করতাম। তারপর ধীরে ধীরে দিদি বড় হয়ে গেল আমারও ইস্কুলের সূচনা হল ব্যাস ধীরে ধীরে হারিয়ে গেল আমাদের সেই শৈশবের খেলাগুলো। এখন মাঝে মাঝে পাড়ার মোড়ে দেখা হলে দুজনে একটু ঠাট্টা তামাশা করি।অতীতের সেই সম্পর্কটা এখন হারিয়ে গিয়েছে। কিন্তু আজ সেই প্রতিভা দিদির বিয়ে তাই পাড়ার সকলের সাথে আমিও নীল পাঞ্জাবী পড়ে নিমন্ত্রণ রক্ষা করতে যাচ্ছি। আমি যখন বিয়ে বাড়িতে উপস্থিত হলাম ততক্ষণে বরযাত্রী এসে হাজির হয়ে গেছে। অন্যদের মত আমিও বর দেখতে হাজির হলাম। বরকে দেখতে বেশ সুন্দর , মুখের আদলে একটা লাজুক ভাব। লম্বা , উজ্জ্বল গৌরবর্ণ ,চেহারায় একটুও মেদ নেই একদম সুন্দর জিম করা কাঠামো। লোকের মুখে শুনতে পেলাম চাকরিটাও নাকি খুব উঁচু দরের করে সেইসাথে মাইনে নাকি লাখ দুয়েকের কম নয়। পুনেতে না বোম্বেতে কোথায় যেন সেটেল।

আমি মনে মনে ভাবলাম যাক বেশ ভালো। প্রতিভা দিদির ভালো জীবনসঙ্গী জুটেছে। প্রতিভা দিদি আদতে অনেক সুন্দরী কিন্তু সেই সৌন্দর্যের বিন্দুমাত্র অহংকার তার নেই। যেমন তার বাইরের সৌন্দর্য তেমনি অন্তরের। কিন্তু জীবনটা অনেক অনেক কঠিন পরিস্থিতির মধ্যে দিয়ে কাটিয়ে উঠতে হয়েছে দিদিকে। ছোটবেলা থেকে দেখেছি কীভাবে কঠিন জীবনসংগ্রামের কাছে হেরে না গিয়ে মাথা উঁচু করে সে লড়াই করেছে। ছোটবেলায় মা হারানো মেয়েটা বাবা এবং ছোটভাইয়ের জীবনের মূল স্তম্ভ হয়ে নিজের জীবনটাকে উজার করে দিয়েছে। জীবনটা মাঝে দিদির ভালই চলছিল কাকু ভালো ফার্মে চাকরি করছেন , ভাই মাধ্যমিকে ভালো নম্বর পেয়ে সায়েন্স নিয়েছে। কিছু মানুষের কপালে সুখ জোটে না প্রতিভা দিদি ঠিক সেই মানুষগুলোর মধ্যে একজন। ঠিক সেই সময় কাকুর চাকরিটা আচমকা চলে গেল। প্রতিভা দিদির জীবনে গভীর অন্ধকার নেমে এলো। দিদি তখন অনার্স করে মাস্টার্স করার চিন্তাভাবনা করছে অগত্যা মাস্টার্স ছেড়ে একটা প্রাইমারি ইস্কুলে চাকরী নিল। সেখান থেকেই সংসারের হালটা দিদি নিজের কাঁধে তুলে নিল। সংসারে কাজ সামলে ইস্কুল তারপর সেখান থেকে বাড়ি ফিরে আবার টিউশনি ,এইভাবেই সে কঠোর পরিশ্রম করে সংসার চালাতে লাগল। বছর খানেক বাদে কাকু আবার চাকরি পেলেন কিন্তু মাইনে ছিল খুব কম তবুও দিদি খানিক একটু শান্তি পেল। তারপর দিদির ভাই  বড় হয়ে এখন সিভিল ইঞ্জিনিয়ারিং পড়ছে। শুনেছি একটা ভালো কম্পানিতে চাকরিও নাকি পাকা হয়ে গেছে তাই কাকু দিদির বিয়ে দিয়ে নিজেকে খানিক নিশ্চিন্ত করছেন।

এরপর আমি সোজা গেলাম দিদির কাছে। লাল বেনারসি শাড়ীতে কনের বেশে সজ্জিতা প্রতিভা দিদিকে আজ মায়াবী লাগছে। কোনো এক অজানা জাদু কাঠির স্পর্শে যেন তার রূপের মহিমা আরও বহুগুন বেড়ে গেছে। আমাকে দেখেই হাতটা বাড়িয়ে দিয়ে বলল “অভয় ভাই তুই এসেছিস খুব খুশি হয়েছি আমি। ভালোভাবে খেয়ে দেয়ে যাবি।“

আমি আলগা হাসি হেসে বললাম “তোমার বর দেখলাম খুব সুন্দর হয়েছে।“

-“তোর খালি খুনসুটি…………………।“

দিদি কিছু একটা বলতে যাচ্ছিল তখনই বিয়ের মণ্ডপ থেকে দিদির ডাক পড়ল তাই কথাটা আর শেষ হল না। দিদি দ্রুত বিয়ের মণ্ডপের দিকে চলে গেল। খানিক চিকেন পকোড়া আর কফি খেয়ে আমিও বিয়ের মণ্ডপের দিকে এগিয়ে গেলাম। অগ্নিকুণ্ডের সামনে দাঁড়িয়ে সাতপাকে বাঁধা পড়ল ওরা দুজনে , হাতে হাত রেখে শুরু হল ওদের দুজনের নতুন জীবনের পথচলা।

পরের দিন সকালে দিদির সাথে যখন দেখা হল তখন ওর মুখের আদলটা সম্পূর্ণ বদলে গিয়েছে। আমি দিদির কান্না মাখা মুখটার দিকে তাকিয়ে ভাবলাম সত্যি মেয়েদের জীবনটাই সংগ্রামের , সময়ের সাথে কেবল সংগ্রামের ক্ষেত্র পরিবর্তিত হয় কিন্তু সংগ্রাম সেটা একই থেকে যায়। যাওয়ার বেলা দিদি আমাকে কেবল জড়িয়ে ধরে খানিক কেঁদেছিল সেই কান্নার তীব্রতা দেখে আমারও চোখের কোণে জলের ছিটে জমে উঠেছিল। আমাকে যাওয়ার বেলা বলেছিল “অভয় বাবা আর ভাইকে একটু দেখিস। আমি এতদূরে চলে যাচ্ছি হুটপাট ইচ্ছা হলেই ছুটে আসতে পারব না।“

-“হ্যাঁ দিদি তুমি চিন্তা করো না। আমরা এখানে সবাই আছি।“

আমার হাত ধরে বিশ্বাস আর ভরসায় বুক বেঁধে প্রতিভা দিদি চলে গেল।প্রতিভা দিদি চলে যেতেই পাড়াটা কেমন যেন ম্লান পরে গেল। মনে হল যেন কালো আকাশের সমস্ত অন্ধকার আমাদের পাড়াটাকে গ্রাস করেছে। একফালি শূন্যস্থান হয়ে রয়ে গেল কেবল ওই গোলাপি বাড়িটা আর ওই বাড়ির অন্দরের দুজন অধিবাসীর মনগুলো।

তারপর কেটে গেছে প্রায় মাস ছয়েক। প্রতিভা দিদি আর কলকাতা আসেনি কিন্তু কাকু আর দাদা গিয়ে পুনেতে ঘুরে এসেছে। ওখানে নাকি জামাইয়ের কাজের খুব চাপ তাই ছুটি নিয়ে আসতে পারবে না অগত্যা ওরাই গিয়ে ওখানে ঘুরে এসেছে। ওখান থেকে ফেরার পর থেকেই কাকুর হাবভাব বদলে গিয়েছে। বাবার মুখে শুনলাম সন্ধ্যের আড্ডায় আজকাল নাকি কাকু নিয়মিত আসেন না। আমিও দেখেছি রাস্তাঘাটে মুখটা কেমন যেন ম্লান পরে গেছে। কিন্তু প্রথম দিন পুনে থেকে ফিরে কাকুর মুখের হাসিটা ছিল দেখার মতন। কত কত পুনের গল্প আর দিদির গল্প যে করলেন তার ইয়ত্তা নেই। তারপর হঠ্যাৎ যে কি হল!!? যত দিন যাচ্ছে কাকুর মুখের ভাবটা কেমন যেন বদলে যাচ্ছে। সেদিন বাজারে যাওয়ার সময় দেখলাম মুখে একাধিক কালো মেঘের ঘনঘটা। যেন যে কোনো মুহূর্তে মেঘ গর্জন করে তীব্র বৃষ্টির সূচনা হতে পারে। মাঝে মাঝে ভাবি কাকুর সাথে গিয়ে সোজাসুজি কথা বলি কিন্তু মায়ের স্পষ্ট নিষেধ আছে যেচে কোনো মানুষের জীবনের অন্দরে উঁকিঝুঁকি মারা চলবে না। আমি মায়ের বাধ্য ছেলে নই কিন্তু কিছু কিছু কথা আমাকেও মায়ের শুনতে হয়। তাই এই ব্যাপারে আমাকে মায়ের কথাটা মেনে নিতে হয়েছে। কিন্তু আমার মনটা ঠিক মানছে না , বারবার প্রতিভা দিদির মুখটা আমার চোখের সামনে ভেসে উঠছে। বারবার মনে পরে যাচ্ছে সেই কান্না মাখা দিদির মুখটা আর আমার তাকে দেওয়া প্রতিশ্রুতিটা। একদিকে মায়ের তীব্র নিষেধ অপরদিকে আমার দিদিকে দেওয়া প্রতিশ্রুতি , দুইয়ের মাঝে আমি চাপা পরে যখন প্রায় হাল ছেড়ে দিয়েছি তখনই একটা টেলিপ্যাথির জোড়ে আমার কঠিন সংগ্রামটা বদলে গেল। কিন্তু এই বদলে যে আমার স্বস্তি বাড়ল ব্যাপারটা তেমন নয়। শামুখ যেমন খোলস বদলায় তেমনি আমার সংগ্রাম কেবল তার খোলস ছাড়ল।

রাতের খাওয়াদাওয়া সেরে বিছানায় সবে শুয়েছি। চোখটা সবে একটু বুজে বুজে আসছে তখনই আচমকা মায়ের ডাকে আমার তন্দ্রা ফিরল। মায়ের মুখে শুনতে পেলাম কাকুর নাকি আচমকা হার্ট-অ্যাটাক হয়েছে। দাদা আর কিছু লোকজন মিলে এম্বুলেন্সে করে হাসপাতাল নিয়ে যাচ্ছে। আমি দ্রুত রেডি হয়ে প্রতিভা দিদির বাড়ির দিকে ছুটলাম। আমি যখন সেখানে পৌঁছলাম ততক্ষণে কাকুকে এম্বুলেন্সে তোলা হয়ে গেছে। দাদা আর পাড়ার একজন জেঠু মিলে এম্বুলেন্সে করে বেড়িয়ে পড়ল। আমি আর বাকি কয়েকজন মিলে তিনটে বাইক নিয়ে ওদের পিছন পিছন এগিয়ে গেলাম। সেদিন সারারাত কাকুর অবস্থা ছিল আশঙ্কাজনক তারপর ভোরের আলোর সাথে সাথে কাকুর জীবনটা আবার নতুন করে আশার আলো দেখল। সারারাত হাসপাতালে কাটিয়েছি ঠিকমত ঘুম হয়েনি শরীরটা তাই কেমন যেন ম্যাজম্যাজ করছে। বাকিরা সকালে বাড়ি ফিরে গেছে এখন রয়েছি শুধু আমি আর বিকাশদা। তাই দুজনে বাইরে চায়ের দোকানে চা খেতে গেলাম। সেখানে চায়ের কাপে চুমুক দিতে দিতে জানতে পারলাম আসল কাহিনীটা। চায়ের সাথে সাথে একটা করে সিগারেট ধরিয়েছি আমি আর বিকাশদা।  

বিকাশদা খানিকটা আফসোসের সুরে বলল “দিদি বলছে কলকাতা ফিরে আসবে।“

আমি বললাম “সে কাকুর শরীর খারাপ এখন না এসে কি দিদির মন টিকবে ওখানে!!?”

দাদা একটা দীর্ঘনিঃশ্বাস ফেলে বলল “না রে ভাই অভয় , দিদি আর ওখানে ফিরে যাবে না বলছে।“

কথাটা শুনে আমার বুঝতে বাকি রইল না কাকুর হার্ট অ্যাটাকের মূল কারণটা। এই জন্যই আজকাল কাকুর মুখটা বদলে গেছে। কাকুর মনের অন্দরে চাপা উত্তেজনাটা যে এতটা কঠিন হবে আমি সেটা আন্দাজ করতে পারিনি।

-“দিদি শুনেছে হার্ট-অ্যাটাকের ব্যাপারে!!?”

-“হ্যাঁ শুনেছে। দুপুরের ফ্লাইটে আসছে।“

-“একটা কথা বলব বিকাশদা!!?”

বিকাশদা আমার দিকে একদৃষ্টে তাকিয়ে আছে। ঘাড়টা আলতো করে হেলিয়ে আমার কথাটায় সম্মতি জানাল।

-“দিদির সাথে জামাইবাবুর সমস্যাটা কি কোনভাবে মিটিয়ে ফেলা যায় না!!?”

-“জানিনা রে ভাই। বাবাও তোর কথাটাই বলছিলেন কিন্তু দিদির জেদ তুই জানিস।“

-“কিন্তু প্রতিভা দিদির মত ভালো মানুষের সাথে কীভাবে কোনো মানুষের মন না মিলে থাকতে পারে !!?”

-“সবটাই আমার বাবার ভুল এখন আমার মনে হয় দিদিকে জোর করে আমরাই এই পরিস্থিতির মুখে ঠেলে দিয়েছি।“ কথাটা বলেই বিকাশদা একটা লম্বা সিগারেটের ধোঁয়ার সাথে দীর্ঘশ্বাস ফেলল।

তারপর আমরা দুজনে বাড়ি ফিরে এলাম। বিকেলে হাসপাতাল থেকে কাকুকে ছেড়ে দিল। ব্যাপারটা তেমন গুরুতর কিছু হয়নি আসলে ভিতরের চাপা একটা উত্তেজনা থেকে মাইনর একটা আটাক মাত্র। বিকেলে কাকুকে নিয়ে আমরা যখন ফিরলাম বাড়িতে প্রতিভা দিদি আমাদের আগেই এসে পৌঁছে গেছে।

দিদিকে দেখে প্রথমে আমি চিনতে পারিনি। সেই ফর্সা ধপধপে রঙটা কেমন যেন তামাটে হয়ে গেছে। চোখের কোণে কালি পড়েছে সেইসাথে চেহারাটাও কেমন যেন অর্ধেক হয়ে গেছে। কাকুর সাথে একাকী কিছুক্ষণ কথা বলে প্রতিভা দিদি যখন দাদার ঘরে এলো তখন আমি আর বিকাশদা ছাড়া বাকিরা চলে গেছে। বিকাশদা প্রশ্ন করল “জামাইবাবু এলেন না!!?”

দিদি একটা ব্যাঙ্গাত্মক হাসি হেসে বলল “ওর সাথে সব বন্ধন ছিন্ন করে আমি চলে এসেছি আর কোনদিন আমাদের দেখা হবে না।“

-“একবার চেষ্টা করে……………।“

কথাটা শেষ হওয়ার আগেই প্রতিভা দিদি মুখটা গম্ভীর করে বলল “তুই কি চাস ওখানে ফিরে গিয়ে আমি অন্তর থেকে একেবারে শেষ হয়ে যাই!!!? ”

বিকাশদা ম্লান মুখে শুধু বলল “বাবাকে ডাক্তার উত্তেজনা থেকে দূরে রাখতে বলেছে , বাবাকে এই কথাগুলো প্লিজ বলিস না।“

তারপর বেশ কিছুক্ষণ কোনো কথা আমরা কেউ বলিনি। নিস্তব্ধতার মাঝেও যে এতো কথা লুকিয়ে থাকতে পারে সেটা আমি সেইদিন উপলব্ধি করলাম।

নিস্তব্ধতা ছাপিয়ে কঠিন বাস্তবতা যখন ফিরে এলো তখন দরজার বাইরে দাঁড়িয়ে কাকু বললেন “মা দোষটা আমার ,আমাকে তুই ক্ষমা করে দে।“

আমরা দৌড়ে গিয়ে কাকুকে ঘরে নিয়ে এসে বিছানায় শুইয়ে দিলাম।

বিকাশদা বলল “বাবা আজকে থাক না পরে এই নিয়ে কথা………………।“

-“না না আজকেই এখনই হবে এই কথাগুলো।“

আমি মনে মনে ভাবছি ওনাদের ফ্যামিলির ব্যাপারে আমার এইভাবে জড়িয়ে পড়াটা কি ঠিক হবে। তখনই আমার মনের ভাবটা বুঝতে পেরে কাকু বলল “বাবা অভয় তুমিও আমার ছেলে তুমিও শোন।“

আমরা তিনজন মিলে কাকুর দিকে তাকিয়ে আছি। তিনি বললেন “মা প্রতিভা তোর কলেজের ওই ছেলেটা কি যেন নাম!!?”

প্রতিভা দিদি ম্লান মুখে বলল “অম্লানদা।“

-“অম্লান ছেলেটা তোকে ভালবাসত প্রকৃতই তোর জন্য ওর মনে ভালোবাসা ছিল। কিন্তু ছেলেটির ভবিষ্যৎ নিয়ে তেমন ভাবনা ছিল না। কলকাতা শহরে এখন তাও প্রাইভেট একটা ব্যাঙ্কে চাকরি করে ,তখন সে ছিল সম্পূর্ণ বেকার।“

-“তুমি আমাদের সম্পর্কটার ব্যাপারে জানতে বাবা!!?”

-“হ্যাঁ মা আমি সবই জানতাম। কিন্তু ছেলেটার সাথে তোর সুন্দর ভবিষ্যৎ আমি দেখতে পাইনি তাই একদিন ওকে ডেকে বললাম “তুমি আমার মেয়েকে ভালো রাখতে পারবে না তোমার কাছে সুন্দর ভবিষ্যতের উপযুক্ত পরিকল্পনা নেই। আমি চাই তুমি আমার মেয়ের জীবন থেকে দূরে সরে যাও।“

ছেলেটি আমার কথা মেনে নিয়েছিল। তারপর………।“

কথাটা শেষ হওয়ার আগেই প্রতিভা দিদি চোখের কোণে জলের ছিটে নিয়ে বলল “আজও আমার কানে ওর সেই কথাগুলো ভেসে ওঠে “প্রতিভা আমি বেকার যুবক আমার সাথে নিজের জীবন জড়িয়ে নিজের জীবন নষ্ট করার কোনো মানে নেই। তাছাড়া আমি একজন নতুন মানুষের প্রেমে পড়েছি ,আমার মত মানুষ কেবল বারবার মানুষের প্রেমে পরে কিন্তু বিয়ে করে সংসার করতে পারে না। আমি তোমাকে মুক্তি দিয়ে গেলাম তুমিও আমাকে মুক্তি দাও।“

-“ছেলেটা আমার কথা রেখেছিল মা। আমি ভেবেছিলাম সুন্দর জীবন সুন্দর ভবিষ্যতের মানদণ্ড হল ভালো মাইনের চাকরি। আমি ভুল করেছি মা , আমি ভুল করেছি।“

কথাটা বলেই কাকু কান্নায় ভেসে গেল।

প্রতিভা দিদি চোখের জলটা মুছে বলল “জানো বাবা অনির্বাণ আমাকে প্রতিটা পদে পদে ছোট করে। আমাকে নিয়ে হেয় করে। আমার ভাবনা আমার দর্শনকে বারে বারে অপমান করে। আমার শরীর নিয়ে ও অযান্ত্রিকের মত হিংস্র লীলাখেলা করে। কথাগুলো তোমাকে আর ভাইকে কোনদিন বলিনি আজ বললাম কারণ বাবা আমি ভালোভাবে বাঁচতে চাই। আমি সুন্দর ভবিষ্যৎ নয় আমি শান্তির বর্তমান চাই বাবা।“

-“মা আমাকে তোর অম্লানদা বলেছিল “ভালো থাকতে গেলে জামাইয়ের শুধু ভালো মাইনে নয় ভালো মানসিকতাও প্রয়োজন।“

তারপর কাকুকে জড়িয়ে ধরে প্রতিভা দিদি কান্নায় ভেঙ্গে পড়ল। আমি দূরে জানলার বাইরের দিকে তাকিয়ে মনে মনে ভাবলাম “অম্লানদা খুব অল্প কথায় জীবনের কঠিন বাস্তবতা বুঝিয়ে দিল , সত্যি ভালো থাকতে গেলে ভালো মাইনে নয় ভালো মানসিকতা প্রয়োজন।“  

কোন মন্তব্য নেই

Blogger দ্বারা পরিচালিত.