২০০০ বছরের পুরনো মমির মুখে সোনার জিহ্বা এলো যেভাবে

Odd বাংলা ডেস্ক: মিশর ও মমি নিয়ে বিশ্ববাসীর কৌতূহল তুঙ্গে। প্রাচীনকালে মিশরীয়রা অদ্ভূত সব রীতি-নীতি মানত। তার পুনর্জন্মে বিশ্বাসী থাকায় মরার পরেও শরীর মমি করে রাখত। এ ছাড়াও মমির সঙ্গে তারা বহুমূল্যবান সামগ্রী রেখে দিত সমাধিতে।

মিশরীয়দের সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য কারিশমা হলো পিরামিড। যা নিয়ে যুগ যুগ ধরে গবেষণা করছেন বিজ্ঞানীরা। তারা বিভিন্ন সময়ে অদ্ভুত সব নিদর্শনও খুঁজে পাচ্ছেন। কখনো তারা পিরামিড নিয়ে গবেষণা করছেন, কখনো আবার মমি নিয়ে। 

মিশরীয় রাজা তুতেনখামেনের মমি আটটি সোনার কফিনে বন্দি অবস্থায় পাওয়া গিয়েছিল। এছাড়াও তার শরীর জুড়ে ছিল অসংখ্য মণি-মুক্তা ও সোনার অলংকার। ঠিক তেমনি সম্প্রতি প্রত্নতাত্ত্বিক গবেষকরা ক্লিওপেট্রার মন্দিরে এক দুর্লভ মমি খুঁজে পেয়েছেন।

প্রত্নতত্ত্ববিদরা পশ্চিম আলেকজান্দ্রিয়ার তাপোসিরিস মাগনা মন্দিরে মমিটি সন্ধান পান। গত সপ্তাহে উদ্ধারকৃত এই মমি দেখে গবেষকরা তাজ্জব বনে গিয়েছিলেন। দেখা যায়, মমির মুখের মধ্যে একটি সোনার জিহ্বা লাগানো রয়েছে। এর রহস্য এখনো উদঘাটন করা সম্ভব হয়নি।

তবে বিশেষজ্ঞরা ধারণা করছেন, মৃত্যুর পরেও যাতে মৃত ব্যক্তি দেবতাদের সঙ্গে কথা বলতে পারেন এজন্যই না-কি এমনটি করা হয়েছিল। প্রত্নতাত্ত্বিকরা অনুমান করেন, সোনার জিহ্বার মমিটি ৩০ থেকে ৩৪০ খ্রিস্টপূর্বে টলেমির (৩০ খ্রিস্টপূর্বে ক্লিওপেট্রার মৃত্যুর পর যখন রোমান সম্রাজ্য মিশর শাসন শুরু করে) শাসনকালে সমাধিস্থ হয়েছিল।

যে মন্দির থেকে মমিটি উদ্ধার করা হয়েছে। সেখানে আরও ১৫টি সমাধির আবিষ্কার করেছেন প্রত্নতাত্ত্বিকরা। জানা যায়, তাপসিরিস ম্যাগনার মন্দিরে দেবতা ওসিরিস ও তার স্ত্রী আইসিসের প্রতি ভক্তিস্বরূপ তৈরি করা হয়েছিল। এ মন্দির থেকেই প্রাচীন সমাধিসহ আরও মূল্যবান বস্তুও পাওয়া গিয়েছে।

বাকি ১৫টি সমাধিতেও অবাক করা বিষয় পরিলক্ষিত হয়েছে। সেখানকার এক মমির মাথায় পাওয়া গেছে মিশরীয় দেবতা আতেফের মুকুট। এর কপালে শিং এবং একটি কোবরা সাপের নকশা করা। আরেকটি মমির মুখ ঢাকা ছিল মার্বেল বসানো মুখোশ দিয়ে। গ্রীক ও রোমান যুগের প্রাচীন শাস্ত্রীয় নিয়ম মেনেই না-কি এ মমিগুলোকে সমাধি দেয়া হয়েছিল।

উদ্ধারের পর পরীক্ষা-নীরাক্ষা করে গবেষকরা মমিগুলোর মুখ তৈরির চেষ্টা করেন। দেহগুলো এতটাই ভালো অবস্থায় ছিল যে, তাদের চুলের স্টাইলও ঠিকঠাক ছিল। তবে বিশেষজ্ঞরা এখনো এ মমিগুলো সম্পর্কে জানার চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন।

প্রত্নতাত্ত্বিক দলের নেতৃত্বে ছিলেন ক্যাথলিন মার্টিনেজ। তিনি বিগত ২০ বছর ধরে মিশরীয় নিদর্শন উদ্ধারের কাজে নিয়োজিত রয়েছেন। সর্বশেষ এই সমাধিগুলোর আগে ২৭টিরও বেশি সমাধির উদ্ধারকাজ করেছেন তিনি। এই প্রত্নতাত্ত্বিকের মতে, তাপসিরিস ম্যাগনার মন্দিরেই সম্ভবত রানি ক্লিওপেট্টাও শায়িত রয়েছেন!

মিশরের মমি রহস্য দিন দিন যেন আরো ঘনীভূত হচ্ছে। রহস্য উন্মোচন করতে ঘাম ঝরাচ্ছেন বাঘা বাঘা গবেষকরা। প্রাচীন মিশরের মমি এবং এদের পিরামিড পুরো বিশ্বের মানুষকেই যেন দ্বিধার মধ্যে ফেলে রেখেছে। তবে সেসময় সাধারণ প্রজাদের মৃতদেহ মমি করা হত না। শুধু মাত্র ফারাও এবং অভিজাত ব্যক্তিদের মৃতদেহ মমি করার চল ছিল। মিশরীয়দের ধারণা ছিল, মৃত্যুর পর তাদের আরেক জীবন শুরু হবে। সেখানেও তারা শাসন করবেন তাই তাদের দেহ সংরক্ষণ করা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। তার এজন্যই মমির সঙ্গে দিয়ে দেয়া হত তার ব্যবহার্য জিনিসপত্র। 

এমনকি পোষা পশু, পাখি, খাদ্য, শস্য, টাকা-পয়সা, স্বর্নালঙ্কার, পোশাকসহ নানান জিনিসপত্র। আর যে যত বেশি অভিজাত ছিল জীবদ্দশায় তার মমির সঙ্গে তত বেশি মূল্যবান বস্তু থাকত। কফিন তৈরি করা হত দামি কাঠ, পাথর কিংবা সোনা দিয়ে। সম্প্রতি পাওয়া মমির সোনার জিহ্বা পাওয়া তেমনি কারণ হতে পারে। এছাড়াও অন্যান্য মমির সঙ্গে থাকা দামি মুকুটের পেছনে এখই যুক্তি দাঁড় করান যায়। 

কোন মন্তব্য নেই

Blogger দ্বারা পরিচালিত.