ফিনল্যান্ডে ৪৪০০ বছরেরও বেশি পুরনো সাপের লাঠির সন্ধান

Odd বাংলা ডেস্ক: সারাবিশ্বে প্রাচীন জিনিস পত্র আবিষ্কারের নেশায় দিনরাত পার করছেন হাজার হাজার প্রত্নতাত্ত্বিক। বেশিরভাগ সময় এটি তাদের পেশার চেয়ে নেশাই বেশি বলা যায়। তাদের এই আবিষ্কার বিশ্ববাসীকে হতবাক করছে। সেইসঙ্গে ইতিহাসে লেখা হচ্ছে নতুন পাতা। এবার সেই তালিকায় যুক্ত হলো প্রায় সাড়ে চার হাজার বছরের পুরনো সাপের লাঠিটি।

এটি দেখে নিশ্চয় সেই প্রবাদটিই মনে পরছে, ‘সাপও মরবে, লাঠিও ভাঙবে না’। উত্তর ইউরোপে ওই সময়ের যেসব প্রত্নবস্তু পাওয়া গেছে, সেগুলোর চেয়ে একেবারেই ব্যতিক্রমধর্মী এই সাপ আকৃতির কাঠের লাঠি। এটি ২০২০ সালে আবিষ্কৃত হলেও এ–বিষয়ক গবেষণাপত্রটি বিখ্যাত কেমব্রিজ ইউনিভার্সিটি প্রেসের এন্টিকুইটি ম্যাগাজিনে ছাপা হয় এ বছরের ২৯ জুন। 

গবেষণাপত্রের লেখক ফিনল্যান্ডের তুর্কু বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষক সাতু কোইভিস্ত। তিনি বলেন, ‘এটি প্রমাণ আকারের একটি সাপের মতো দেখতে চমৎকার এক লাঠি। জলাভূমির প্রত্নতাত্ত্বিক হিসেবে আমি বহু প্রত্নবস্তু দেখেছি, কিন্তু এই লাঠি পাওয়ার পর আমি পুরোপুরি হতবাক হয়ে যাই।’

ধারণা করা হচ্ছে, শামানবাদীরা তাদের ধর্মানুষ্ঠান পালনে লাঠিটি ব্যবহার করত। শামানবাদ হলো একটি প্রাচীন ধর্মবিশ্বাস। শামানেরা পৃথিবী ও আধ্যাত্মিক জগতের মধ্যে সংযোগ স্থাপন করতে পারত বলে বিশ্বাস করা হতো। ফিনো-ইউগ্রিক ও সামি সম্প্রদায়ের (উত্তর মেরু, ফেনো-স্ক্যান্ডিনেভিয়ার উপ-সুমেরু এবং রাশিয়ায় বসবাসকারী) লোকজনের কাছে সাপ প্রতীকী অর্থ বহন করে। তারা বিশ্বাস করতেন, শামানেরা নিজেদের সাপে রূপান্তর করতে পারত। শামানবাদীরা মনে করতেন, পানির নিচেই পরকালের অবস্থান। লাঠিটিও পাওয়া গেল জলাভূমিতেই। 

সাতু কোইভিস্ত বলছেন, এই জলাভূমি থেকে পাওয়া বিভিন্ন প্রত্নবস্তু আমাদের প্রাচীনকালের মানুষকে বুঝতে সাহায্য করে। সে সময়ের ভূদৃশ্য সম্পর্কেও আমরা ধারণা পাই, যেখানে তারা জাগতিক ও ইহজাগতিক চর্চা করতেন। প্রাগৈতিহাসিক লাঠিটি ৫৩৫ মিলিমিটার লম্বা এবং ২৫ থেকে ৩০ মিলিমিটার পুরু। এক টুকরা কাঠ দিয়ে লাঠিটি তৈরি করা হয়েছিল। তবে কী কাঠ দিয়ে তৈরি, তা জানতে পরীক্ষা–নিরীক্ষা চলছে। লাঠির একদিক সাপের হাঁ করা মুখ এবং অন্য দিকটা সাপের লেজের মতো করে তৈরি করা।

গবেষণাপত্রে উল্লেখ করা হয়েছে, সাপটি দেখতে ঘেসো সাপ বা ইউরোপীয় অ্যাডারের মতো। লাঠিটি ভাস্কর্য ছিল নাকি কোনো শামানবাদীর হাতে থাকত, নাকি দুটোই, তা এখনো নিশ্চিত করে বলা যাচ্ছে না। আবার হতে পারে জাদুবিদ্যা কিংবা ভূতপ্রেত তাড়াতে ব্যবহার হতো এই লাঠি। এমন বিশ্বাস এখনো  স্ক্যান্ডিনেভিয়ার, ইউরোপ এবং এশিয়ার প্রত্যন্ত অঞ্চলে বিশ্বাস করে। তবে বিজ্ঞানে এর কোনো ভিত্তি নেই বলে জানান গবেষকরা। 

কোন মন্তব্য নেই

Blogger দ্বারা পরিচালিত.