তেনাদের ভয়ে গ্রামছাড়া মানুষজন, ৪৫ বছর ধরে নিষিদ্ধপুরী এই গ্রাম

Odd বাংলা ডেস্ক: গ্রাম আছে, গ্রামে বাড়িও আছে। নেই শুধু মানুষ। চার দশক পার হলেও গ্রামের মানুষজন আর গ্রামে ফেরেননি। জনমানবহীন হয়ে পড়ে আস্ত একটা গ্রাম। গ্রামবাসীরা ফিরতে যে চান না তা নয়। ফিরতে চান, তবে তেনাদের ভয়ে আর ফেরা হয়না। ভুত প্রেত নয়, ডাকাতের উপদ্রব।

কথা হচ্ছে বাংলাদেশের বগুড়ার সাজাহানপুর উপজেলার গোহাইল ইউনিয়নের পিচুলগাড়ী গ্রাম নিয়ে। সেই গ্রামে এখন সার দিয়ে দাঁড়িয়ে জরাজীর্ণ বাড়ি। গ্রামটিতে একসময় তাণ্ডব চালাত ডাকাত দল। নগদ টাকা থেকে শুরু করে বাড়িতে থাকা জিনিসপত্র সবই লুট করত তারা। অত্যাচার থেকে বাদ পড়তেন না বাড়ির মহিলারাও। দিন দিন অত্যাচার বাড়তে থাকায় গ্রামবাসীরা আতঙ্কে গ্রামছাড়া হন। এরপর থেকে ৪৫ বছর অতিক্রান্ত হলেও আর গ্রামে ফেরেননি তারা।

গ্রামবাসীরা জানান, ১৯৭৪ সালের ঘটনা। পিচুলগাড়ী গ্রামের মাতব্বর নান্নু মোল্লার থেকে ডাকাতরা টাকা চায়। কিন্তু তিনি টাকা দিতে রাজি  না হওয়ায় ডাকাতরা তাঁকে খুন করে। এই ঘটনার পর থেকেই ধীরে ধীরে ভয় আর আতঙ্কে গ্রাম ছেড়ে চলে যেতে থাকেন গ্রামবাসীরা। প্রায় ৮ বছর পর একেবারে শুনশান হয়ে যায় গ্রাম। তবে গ্রামের বাসিন্দারা না থাকলেও গ্রামে থেকে গিয়েছে এই সব পরিবারের বসতবাড়ি ও জমি।

বগুড়া থেকে প্রায় ২০ কিলোমিটার দূরের এই গ্রামে নেই কোনও যোগাযোগ ব্যবস্থা, নেই কোনও আলো। গ্রামে যাতায়াতের একমাত্র পথ বলতে কেবল একটা আলপথ। এই গ্রামের মোট ১৬টি বাড়িতে একসময় প্রায় শতাধিক মানুষ বসবাস করতেন।  তাঁদের অনেকেই মারা গিয়েছেন, কেউ কেউ এখনও বেঁচে আছেন। অন্যগ্রামে স্থায়ীভাবে বাস করতে শুরু করেছেন তাঁরা। কিন্তু বর্তমান প্রজন্মের অনেকেই এখন ফিরতে চান গ্রামের ভিতে মাটিতে। তারা জানান, গ্রামে রাস্তা, আলো হলেই ফিরে আসবেন।

হাদিসুর নামের যুবক বলেন, "গ্রাম লাগোয়া জঙ্গলে আমাদের জমি আছে। সেখানেই একটা মুরগির খামার করেছি। সারাদিন সেখানেই থাকি, কখনও কখনও রাতেও থেকে যাই সেখানে। তবে রাতে শেয়াল ও অন্যান্য পশুর ডাকে ভয় লাগে। তবে যদি গ্রামে রাস্তা, আলোর ব্যবস্থা হয় তাহলে গ্রামের বাড়িতে থাকতে কোনও অসুবিধা হবে না।" গ্রামের মসজিদের ইমাম আব্দুর রহমান বলেন, "আমাদের ইচ্ছা হয় আবার গ্রামে ফিরে যেতে। রাস্তা ও আলোর ব্যবস্থা হলে অনেকেই হয়ত বসবাস শুরু করবে।" স্থানীয় সংসদ সদস্য রেজাউল করিম বাবলু বলেন, "এই গ্রামের বিষয়টি জানি। এখন স্থানীয় জনপ্রতিনিধিরা লিখিতভাবে আবেদন করলে পেচুলগাড়ী থেকে পার্শ্ববর্তী গ্রামের সঙ্গে সংযোগ রাস্তা করা এবং অন্যান্য পদক্ষেপ নেওয়া হবে।"

কোন মন্তব্য নেই

Blogger দ্বারা পরিচালিত.