গা শিহরানো হত্যাকাণ্ড : কোলে সন্তান, স্যুটকেসে স্ত্রীর দেহ!

Odd বাংলা ডেস্ক: করোনার ডেল্টা ভেরিয়েন্টে স্ত্রীর মৃত্যু হয়েছে। নিজের বাড়ি ও শ্বশুরবাড়িতে এমনটাই বলেছিলেন ভারতের অন্ধ্রপ্রদেশের কাদাপারের এক যুবক। কিন্তু দেশটির এসভিআরআর সরকারি হাসপাতালের কাছে পাওয়া একটি স্যুটকেসেই জানা গেল আসল ঘটনা। স্যুটকেস থেকেই যেন বেরিয়ে এলো এক লোমহর্ষক ঘটনা!

ভারতের স্থানীয় গণমাধ্যমের খবরে বলা হয়, স্যুটকেস দেখে সন্দেহ হওয়ায় পুলিশে খবর দেওয়া হয়। পরে সেটির ভেতর থেকে এক তরুণীর দগ্ধ দেহ উদ্ধার করে পুলিশ। এরপরেই ঘটনার তদন্তে যাচাই করা হয় সিসিটিভি ফুটেজ। দেখা যায়, এক ট্যাক্সিচালকের সঙ্গে হাসপাতালের সামনে স্যুটকেসটি ফেলে চলে গেল এক ব্যক্তি।

পুলিশ বরাত দিয়ে টাইমস অব ইন্ডিয়া বলছে, ভুবনেশ্বরী নামের ওই নারী হায়দরাবাদে একটি কম্পানিতে সফটওয়্যার ইঞ্জিনিয়ার হিসেবে কাজ করতেন। ২০১৯ সালে শ্রীকান্ত ও ভুবনেশ্বরীর বিয়ে হয়। গত তিন মাস ধরে তিরুপতিতে বাস করছিলেন।

হিন্দুস্তান টাইমস বাংলার খবরে বলা হয়, তদন্তে নেমে জানা যায় দেহটি চিত্তুরের রামসমুন্দ্রমের বাসিন্দা ভুবনেশ্বরী নামের এক তরুণীর। যার নামে থানায় ডায়েরি করা আছে। এর আগে ভুবনেশ্বরীর স্বামী হঠাৎই শ্বশুরবাড়িতে জানিয়েছিল যে ভুবনেশ্বরী করোনার ডেল্টা ভেরিয়েন্টে মারা গেছেন। নিয়মমাফিক দেহও দেওয়া হয়নি। হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ দাহের ব্যবস্থা করেছে। কিন্তু করোনার পজিটিভ হওয়ার খবর এলো না, হঠাৎ মৃত্যুর খবর পেয়ে সন্দেহ হয় শ্বশুরবাড়ির সদস্যদের। বিভিন্ন হাসপাতালে খোঁজ করেও ভুবনেশ্বরীর ভর্তির রেকর্ড না পেয়ে থানায় অভিযোগ দায়ের করেন তাঁরা।

পরিবারের সদস্যরা পুলিশকে জানান যে, করোনার ডেল্টা ভেরিয়েন্টে ভুবনেশ্বরীর মৃত্যু হয়েছে। এমনটাই জানিয়েছেন তার স্বামী। এরপরেই শ্রীকান্ত রেড্ডি নামে ওই যুবককে জেরা করা হয়। জেরায় জানা যায়, ২০১৯ সালে শ্রীকান্ত ও ভুবনেশ্বরীর বিয়ে হয়। তাদের একটি দেড় বছরের মেয়েও আছে। শ্রীকান্ত মাদকাসক্ত ছিল। আর্থিক দুর্নীতিতেও জড়িত। এই নিয়ে প্রায়শই ঝগড়া হতো দম্পতির মধ্যে। গত ২২ জুন ঝগড়ার পর স্ত্রীকে খুন করেন শ্রীকান্ত। তারপর তিনি একটি বড় স্যুটকেস কিনে আনেন। দেহ স্যুটকেসে ভরে লোপাটের চেষ্টা করেন।

তিরুপতি পুলিশের প্রধান কর্মকর্তা জানিয়েছেন, দেহটি ৯০ শতাংশ পুড়ে গিয়েছিল। জানা যায়, শ্রীকান্ত রিলায়েন্স মার্ট থেকে একটি বড় স্যুটকেস কিনেছিলেন। মৃতদেহ ভরে ফেলে দেওয়ার জন্যই এই পদক্ষেপ। খুন করার পর দেহটি পোড়ানোর চেষ্টা করেন শ্রীকান্ত। মৃতদেহটি ময়নাতদন্তের জন্য পাঠানো হয়েছে।

এদিকে, গা শিউরে ওঠা ওই ভিডিও ফুটেজ দেখা গেছে, কোলে শিশু সন্তান নিয়ে লাল রঙের একটি সুটকেস নিয়ে লিফটে ওঠেন শ্রীকান্ত। এরপর তার ফ্ল্যাটে নামেন। সন্তানকে করিডোরের এক পাশে রেখে সুটকেসটি ফ্ল্যাটের দরজার সামনে রাখেন। এরপর সন্তান ও সুটকেস নিয়ে রুমে প্রবেশ করেন। কিছুক্ষণ পর ভারী সুটকেস নিয়ে লিফট দিয়ে নিচে নামেন। ফ্ল্যাট থেকে বের হওয়ার সময় প্রতিবেশী এক নারী তার শিশু সন্তানকে আদর করেন। শ্রীকান্তের সঙ্গে ওই নারীর কথা বলতেও দেখা যায়। কিন্তু তাকে দেখে বোঝার উপায় নেই স্ত্রীর পোড়া লাশ বহন করে নিয়ে যাচ্ছেন! তবে শ্রীকান্তের হিসাবে একটু ভুল হয়ে যায়। তিনি যে সরকারি হাসপাতালের কাছে সুটকেসটি ফেলে এসেছিলেন, সেই হাসপাতালের সিসিটিভি ক্যামেরায় ধরা পড়ে সেই দৃশ্য। সেই ফুটেজে দেখা যায়, ক্যাব চালকের সহায়তায় এক যুবক সুটকেসটি ফেলে চলে যান।

ফুটেজ থেকে ক্যাবের নম্বর নিয়ে চালককে খুঁজে বের করে পুলিশ। সেই সূত্র ধরে শ্রীকান্ত রেড্ডিকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। পুলিশের বরাত দিয়ে টাইমস অব ইন্ডিয়া জানায়, রাগান্বিত হয়ে জুনের ২৩ তারিখ শ্রীকান্ত ওই নারীকে হত্যা করেন ১৮ মাস বয়সী কন্যার সামনে।

কোন মন্তব্য নেই

Blogger দ্বারা পরিচালিত.