World Plastic Free Day: পাথরের যুগ শেষ, লৌহ যুগও নেই, এটার নাম প্লাস্টিক যুগ


Odd বাংলা ডেস্ক: ১৮৩৪ সাল থেকে ক্যালিফোর্নিয়ার উপকূলের উপর প্লাস্টিকের সর্বশেষ স্তরের পরীক্ষা করে বিজ্ঞানীরা আবিষ্কার করেছেন, প্লাস্টিকের স্তর গত ৭০ বছরে ব্যাখ্যাতীত ভাবে প্লাস্টিক উৎপাদন বৃদ্ধিকে সঠিকভাবে প্রতিফলিত করে। গবেষণায় প্লাস্টিক দূষণের মাত্রা বৃদ্ধি পাওয়ার প্রথম বৃহদাকার বিশ্লেষণ এটি।

বেশিরভাগ প্লাস্টিক অনু ছিল পোশাকে ব্যবহৃত সিনথেটিক কাপড়ের তন্তু। ময়লা জলের সাথে প্লাস্টিক খুব সহজেই সমুদ্রে প্রবাহিত হতে পারে।
গবেষণাটির নেতৃত্ব দিয়েছেন, সান ডিয়াগের ইউনিভার্সিটি অব ক্যালিফোর্নিয়ায় স্ক্রিপস্ ইন্সটিটিউশন অব অশানোগ্রাফির গবেষক জেনিফার ব্র্যান্ডন। তিনি বলেন, ‘ফসিল রেকর্ডের ভেতরও আমাদের প্লাস্টিকের প্রতি ভালবাসার নিদর্শন রয়ে যাচ্ছে। প্লাস্টিক সমুদ্রের তলদেশে যেসব প্রাণী রয়েছে, যেমন প্রবাল প্রাচীর, ঝিনুক, শুক্তি আরো অনেক প্রাণী, এদের জন্য খুবই ক্ষতিকর। কিন্তু প্রকৃত সত্য হচ্ছে প্লাস্টিক আমাদের জীবাশ্ম রেকর্ডের মধ্যে ঢুকে যাচ্ছে, যা অনেক বড় অস্তিত্বের প্রশ্ন হয়ে দাঁড়িয়েছে।’

তিনি আরো বলেন, ‘আমরা সবাই স্কুলে প্রস্তর যুগ, ব্রোঞ্জ যুগ ও লৌহ যুগ সম্পর্কে পড়েছি। বর্তমান যুগটি কী প্লাস্টিক যুগ হিসেবে পরিচিত হতে যাচ্ছে? ভবিষ্যত প্রজন্ম এর ভয়াবহতার শিকার হয়ে আমাদের স্মরণ করবে।’

স্যার ডেভিড অ্যাটেনবরো, ব্লু প্লানেট ২ টিভি সিরিজে সমুদ্রে প্লাস্টিক দূষণের রূপরেখার ব্যাপ্তিকে উত্থাপন করেছেন। তিনি বলেন, জুলাই থেকে এ বিষয়ে ধারণা পরিবর্তিত হচ্ছে। পৃথিবীকে দূষিত করার কর্মকাণ্ডগুলো খুব শীঘ্রই মানব কৃতদাসত্বের চেয়েও ঘৃণিত হিসেবে বিবেচিত হবে।


জার্নাল সায়েন্স অ্যাডভান্স-এ প্রকাশিত গবেষণায় দেখা গেছে, ১৯৪০ সাল থেকে পলি মাটিতে আণুবীক্ষণিক প্লাস্টিকের পরিমাণ প্রতি ১৫ বছরে দ্বিগুণ হচ্ছে। সম্প্রতি ২০১০ সালের বিশ্লেষণে দেখা গেছে, সমুদ্র তলদেশে দূষণ এমন পর্যায়ে পৌঁছেছে যে প্রতি ১০ বর্গ সে.মি. অংশে বছরে প্রায় ৪০টি পর্যন্ত প্লাস্টিকের অনু প্রবেশ করছে। এদের মধ্যে দুই-তৃতীয়াংশ অনু প্লাস্টিক তন্তু, এক-পঞ্চমাংশ প্লাস্টিকের ভাঙা টুকরো এবং এক-দশমাংশ প্লাস্টিকের ঝিল্লি। ব্র্যান্ডন বলেন, এটি দৃশ্যমান সত্য। প্লাস্টিক আবিষ্কৃত হয়েছে এবং খুব শীঘ্রই আমাদের পাললিক রেকর্ডেও এটি দৃশ্যমান হবে।

২০১৬ সালের একটি গবেষণায় দেখা গেছে, মাত্র একবার কাপড় ধোঁয়ায় মাধ্যমে ৭,০০,০০০ পর্যন্ত আণুবীক্ষণিক প্লাস্টিক তন্তু অবমুক্ত হয়ে যায়। ব্র্যান্ডন বলেন, ‘নিশ্চিতভাবেই এদেরকে সঠিকভাবে নষ্ট করা হচ্ছে না। আমরা গৃহস্থালির অথবা বর্জ্য শোধনাগারে এসব প্লাস্টিককে সঠিক মাত্রায় পরিশোধন করছি না। আমাদের কাপড় চোপড় থেকে যে প্লাস্টিক বর্জ্য নির্গত হচ্ছে তা আমরা কি করছি (?)

মিলিয়ন মিলিয়ন টন প্লাস্টিক প্রতিবছর পরিবেশে উন্মুক্ত হচ্ছে। ছোট ছোট অনু এবং তন্তুতে বিভক্ত হলেও পচে মাটির সাথে মিশে যাচ্ছে না। প্লাস্টিকের ক্ষুদ্র কণা সমুদ্রের গভীর থেকে পর্বতের শিখর পর্যন্ত, এমনকি উত্তর মেরুর বাতাস পর্যন্ত সব জায়গাতেই পৌঁছে গেছে।



সামুদ্রিক প্রাণীর জন্য প্লাস্টিক ভক্ষণ বেশ ক্ষতিকর। খাদ্য ও জলের মাধ্যমে মানুষ ৫০০০০ পর্যন্ত প্লাস্টিকের কণা গ্রহণ করতে পারবে বলে ধারণা করা হয়। এর স্বাস্থ্য ঝুঁকি এখনও অজানা কিন্তু প্লাস্টিকের কণা বিষাক্ত পদার্থ নির্গত করে এবং টিস্যুর অভ্যন্তরে প্রবেশ করতে পারে।

লস এঞ্জেলস এর সান্তা বারবারা সমুদ্র তীর হতে এক মাইল দূরে প্রায় ৪০ লক্ষ লোকের বসবাসের এলাকার পাললিক স্তরের উপর সর্বশেষ গবেষণাটি করা হয়েছে। এই গহ্বরটি প্রাকৃতিকভাবে অক্সিজেন শূন্য। যার অর্থ দাঁড়ায় কোনও প্রাণীই মাটির অভ্যন্তরে গর্ত খোড়ে না এবং ভঙ্গুর এ পলি স্তরকে নষ্ট করছে না। এই ৩৬ সে.মি. লম্বা অংশটি প্রকৃতপক্ষে নেয়া হয়েছিল সময়ের সাথে সাথে মাছের সংখ্যা পরিমাপের জন্য। বিজ্ঞানীরা লেজার রশ্মি ব্যবহার করে এতে নির্দিষ্ট ধরনের প্লাস্টিক চিহ্নিত করেছেন এবং তাদের বিশ্লেষণে অল্প পরিমাণে দূষণের অস্তিত্ব পেয়েছেন।

ব্র্যান্ডন বলেন, ‘মাটির এই স্তরটি ২০১০ সালে নেয়া হয়েছিল, কিন্তু এটা ভাবার কোনও অবকাশ নেই যে প্লাস্টিক দূষণ বৃদ্ধিকে তখন থেকে দমানো হয়েছে। প্লাস্টিকের উৎপাদন ক্রমাগত বেড়েই চলেছে।
Blogger দ্বারা পরিচালিত.