মুর্শিদাবাদে ব্যাপক ভাঙন, ভীটে-মাটি ছাড়া ২০০টি পরিবার

Odd বাংলা ডেস্ক:  সোমবার সন্ধ্যায় সামশেরগঞ্জের শিবপুরে ভয়ঙ্কর ভাঙন শুরু হয়। কিছু বুঝে ওঠার আগেই নিমেষের মধ্যেই ন’টি পাকা বাড়ি গিলে খায় গঙ্গা। সারা রাত জেগেই কাটান এলাকার বাসিন্দারা। যতটুকু সম্ভব শেষ সম্বল অন্যত্র সরিয়ে নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা চলে। সবকিছু হারিয়ে নিরাশ্রয় বাসিন্দারা স্থানীয় স্কুলে আশ্রয় নেন। আতঙ্কে ভুগতে থাকেন পার্শ্ববর্তী হিরানন্দপুরের বাসিন্দারাও।

গত কয়েকদিন ধরেই জলস্তর বিপদসীমার উপর দিয়ে বইছে, ফুঁসছে গঙ্গা। গতবছরও এই এলাকায় রীতিমতো তাণ্ডব চালিয়েছিল গঙ্গা। প্রায় শতাধিক পাকা বাড়ি গিলে খেয়েছিল রাক্ষুসে গঙ্গা। এখনও গঙ্গার ভাঙন রোধের কাজ শুরু না হওয়ায় ক্ষোভে ফুঁসছেন ভুক্তভোগী বাসিন্দারা। এলাকাবাসীর দাবি, অবিলম্বে গঙ্গা ভাঙন রোধের কাজ শুরু হোক। যদিও, গতবছর গৃহহীনদের পুনর্বাসন দিয়েছে সরকার। সেচ প্রতিমন্ত্রী সাবিনা ইয়াসমিন বলেন, গৃহহীনদের নিরাপদ আশ্রয়ে নিয়ে যাওয়া হয়েছে। এছাড়া এলাকার লোকজনকে সতর্ক করা হয়েছে। বিষয়টি ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানানো হয়েছে। ওই এলাকায় ভাঙন রোধের কাজের জন্য টাকা বরাদ্দ করা হয়েছে। বর্ষার পরই কাজ শুরু হবে। 

স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, ওইদিন সন্ধ্যা থেকেই ভাঙন শুরু হয়। রাত বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে গঙ্গা ভয়ঙ্কর রূপ ধারণ করতে থাকে। এক এক করে তলিয়ে যেতে থাকে পাকা বাড়িগুলি। শিবপুরের অন্তত ন’টি পাকা বাড়ি তলিয়ে যায়। ঘরের আসবাবপত্রও তলিয়ে গিয়েছে। চোখের সামনে ভিটেমাটি নদীগর্ভে তলিয়ে যেতে দেখে আর্তনাদ করতে থাকেন অনেকে। খাদের কিনারায় ঝুলছে আরও বেশ কয়েকটি পাকা বাড়ি। যে কোনও মূহূর্তে আরও প্রায় ২০টি বাড়ি তলিয়ে যাওয়ার আশঙ্কা করছেন স্থানীয়রা। বেশকিছু পরিবার বাড়ি ভেঙে অন্যত্র সরে যাচ্ছেন। রাতের অন্ধকারে যে যতটুকু পারেন তা সরিয়ে নেওয়ার চেষ্টা করেন। স্থানীয় বাসিন্দা সুকচাঁদ মণ্ডল বলেন, বিকেল থেকে নদীতে প্রচণ্ড স্রোত ছিল। সন্ধ্যা থেকে ভাঙন শুরু হয়। ঘণ্টাখানেকের মধ্যে সব শেষ। আমরা কেউ জিনিসপত্র সরানোর সুযোগটুকু পর্যন্ত পেলাম না। মুহূর্তের মধ্যে সব তলিয়ে গেল। 

শিবপুরের ভাঙনের খবর পার্শ্ববর্তী হিরানন্দপুরে ছড়িয়ে পড়তেই সেখানেও আতঙ্ক ছড়ায়। এলাকায় শোরগোল পড়ে যায়। ঘর থেকে জিনিসপত্র সরিয়ে নিতে শুরু করেন বাসিন্দারা। পরে পুলিস বাসিন্দাদের বাসুদেবপুর হাইস্কুল ও প্রাথমিক স্কুলে সরিয়ে নিয়ে যায়। এলাকার বাসিন্দা ফারুক শেখ বলেন, নদী আমাদের বাড়ির কাছে চলে এসেছে। ভাঙনের আতঙ্কে আমরা জিনিসপত্র সরিয়ে নিয়েছি। প্রসঙ্গত, গতবছর বর্ষায় ধানঘরা, শিবপুর, হিরানন্দপুর ও ধুসরিপাড়ায় ব্যাপক ভাঙন হয়েছিল। প্রায় ২০০টি পরিবার আশ্রয়হীন হয়ে পড়ে। গত সোমবার সেই আশ্রয়হীন পরিবারগুলিকে পুনর্বাসনের জন্য জমি দেওয়া হয়।

রঘুনাথগঞ্জের শ্রীধরপুর, রামপুরায়ও ভাঙন দেখা দিয়েছে। এছাড়া, রঘুনাথগঞ্জের পদ্মায় জলস্তর বাড়ার ফলে মিঠিপুর গ্রাম পঞ্চায়েতের রায়চক বোলতলায় ভাঙন শুরু হয়। কয়েক মিটার দূরে বসতবাড়ি থাকায় স্থানীয়দের মধ্যে আতঙ্ক ছড়ায়। রঘুনাথগঞ্জ-২ ব্লক প্রশাসন শ্রীধরপুরে বালির বস্তা ফেলে অস্থায়ীভাবে ভাঙনরোধের কাজ শুরু করেছে। 

কোন মন্তব্য নেই

Blogger দ্বারা পরিচালিত.