গঙ্গা, ফুলহারের জল কমলেও দুর্গত এলাকায় ত্রাণ নিয়ে বিক্ষোভ বাড়ছে

Odd বাংলা ডেস্ক: গঙ্গা, ফুলহার নদীর জল কমতে শুরু করলেও দুর্গত এলাকায় পর্যাপ্ত ত্রাণ নিয়ে ক্ষোভ বাড়ছে। এলাকায় সরকারি ভাবে ত্রিপল বিলি করা হলেও শুকনো খাবার কার্যত অমিল বলে অভিযোগ। শিশুদের বেবি ফুডও দেওয়া হচ্ছে না। ফলে দুর্গতদের মধ্যে ক্ষোভের পারদ চড়ছে। দুই সপ্তাহের বেশি সময় ধরে জলবন্দি অবস্থায় অনেকে অসহায় ভাবে দিন কাটাচ্ছেন। এদিকে মাঝেমধ্যে বৃষ্টিতে ত্রাণ শিবিরগুলি আরও বেহাল হয়ে পড়ছে। স্বাভাবিকভাবেই কালিয়াচক থেকে মানিকচক ও রতুয়ার দুর্গতদের ভোগান্তি বেড়ে গিয়েছে। যদিও জেলা প্রশাসনের দাবি, দুর্গত এলাকায় প্রয়োজনীয় ত্রাণ ও ওষুধ সরবরাহ করা হচ্ছে। 

বৈষ্ণবনগরের চর সুজাপুরের বাসিন্দা অপূর্ব মণ্ডল বলেন, এলাকায় সরকারিভাবে পর্যাপ্ত ত্রাণ পৌঁছয়নি। বাড়ির চারপাশে জল। আমাদের মতো অনেকেই দুর্ভোগে রয়েছেন। এবিষয়ে আরএসপি’র মালদহ জেলা সম্পাদক সর্বানন্দ পাণ্ডে বলেন, জেলায় যেসব ব্লকে বন্যা পরিস্থিতি হয়েছে এবং ভাঙনে বাসিন্দারা সর্বস্ব খুইয়েছেন তাঁদের পর্যাপ্ত ত্রাণ ও পুনর্বাসনের ব্যবস্থা করা হোক। বহু পরিবার ত্রাণ পাচ্ছে না। চরম অসহায় অবস্থায় তারা দিন কাটাচ্ছে। যেটুকু ত্রাণ দেওয়া হয়েছে তাতে স্বজনপোষণ চলছে। অনেকেই বঞ্চিত থেকে যাচ্ছে। তাই পর্যাপ্ত ত্রাণ সরবরাহ এবং পুনর্বাসনের দাবি জানিয়ে মঙ্গলবার আমরা জেলাশাসককে স্মারকলিপি দিয়েছি। 

বৈষ্ণবনগরের বিধায়ক তৃণমূল কংগ্রেসের চন্দনা সরকার বলেন, পারলালপুর, বাখরাবাদ, কৃষ্ণপুর এসব এলাকা প্লাবিত হয়েছে। সেখানকার ৪০০ পরিবার স্থানীয় ত্রাণ শিবিরে রয়েছে। পরিবারের সদস্যদের নিয়ে তাঁরা খুব কষ্টে কোনওরকমে মাথা গুঁজে রয়েছেন। আমরা তাঁদের পাশে দাঁড়িয়েছি। প্রশাসন সহযোগিতা করেছে। পর্যাপ্ত ত্রিপল ও চাল দেওয়া হয়েছে। ত্রাণ নিয়ে ক্ষোভ থাকতে পারে না। কেউ যদি বলে থাকে তাহলে সেটা রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত। 

এবিষয়ে জেলার ডিজাস্টার ম্যানেজমেন্টের  দায়িত্বে থাকা আধিকারিকরা বলেন, দুর্গত এলাকায় ত্রিপল, চাল পর্যাপ্ত সরবরাহ করা হয়েছে। প্রকৃত দুর্গতদের তালিকা তৈরি করে আমরা প্রয়োজনীয় ত্রাণসামগ্রী পৌঁছে দিচ্ছি। মঙ্গলবার গঙ্গা নদীর জল চূড়ান্ত বিপদসীমা থেকে নেমে বিপদসীমায় বইতে শুরু করেছে। ফুলহার নদীরও একই অবস্থা। এদিন ফুলহারের জল কমে ২৮.৩০ মিটারের উপর দিয়ে বইছিল। গত কয়েকদিনে  প্রায় এক মিটার জল নেমেছে গঙ্গার। মহানন্দার জলস্তর অবশ্য উদ্বেগ বাড়িয়েছে। দু’টি নদীর বন্যা পরিস্থিতির কিছুটা উন্নতি হলেও মহানন্দার জল ধীরে ধীরে বাড়ছে। এদিন  সকালে মহানন্দার জলস্তর দাঁড়ায় ২০.৫০ মিটারে। 

এদিকে, নদীর জল কমলেও বৃষ্টি দুর্গত এলাকায় দুর্ভোগ বাড়িয়ে দিয়েছে। এমনিতেই কয়েক হাজার বাসিন্দার মাথার উপর ছাদ নেই। পর্যাপ্ত  ত্রাণ নিয়ে হাহাকার পরিস্থিতি রয়েছে। তার উপর মাঝেমধ্যে বৃষ্টি দুর্গতদের আরও অসহায় করে তুলেছে। রতুয়ার নাকাট্টি সেতু এলাকায় অস্থায়ী ত্রাণ শিবিরে প্রায় শতাধিক পরিবার বৃষ্টির মধ্যে দিন যাপন করছে। কালিয়াচকের বৈষ্ণবনগরেও একই দুর্দশা  রয়েছে। পারলালপুর এলাকার রাধাগোবিন্দ মন্দির, উঁচু জমিতে  অনেকে ত্রিপল টাঙিয়ে রয়েছেন। জলকাদায় সেখানে দুর্ভোগ বেড়েছে। তাঁরা  বৃষ্টিতে  গবাদিপশু, ছোট শিশুদের নিয়ে কষ্টেব মধ্যে দিন কাটাচ্ছেন। বৃষ্টির কারণে অস্থায়ী ত্রাণশিবিরে জলকাদা জমে অস্বাস্থ্যকর পরিবেশ তৈরি হয়েছে। অনেকেরই জ্বালানি ও মাটির উনুন ভিজে যাচ্ছে। খোলা আকাশের নীচে থাকায় তাঁরা ঠিকমতো রান্না করতে পারছেন না। শিশুদের বেবি ফুড অমিল থাকায় মাড় ভাত খেয়ে তাদের দিন কাটছে। তাই দুর্গতরা শুকনো খাবার ও পর্যাপ্ত ত্রাণের দাবিতে সরব হয়েছেন। 

কোন মন্তব্য নেই

Blogger দ্বারা পরিচালিত.