Olympics 2020: সোনা পেল দু'জন, ১১৩ বছরে এ এক অনন্য মহত্বের নজির

Odd বাংলা ডেস্ক: তিনজন ২.৩৭ মিটার উঁচুতে লাফ দিয়েছিলেন। কিন্তু সোনা জিতলেন দুজন! কাতারের মুতাজ ঈসা বারশিম ও ইতালির জিয়ানমারকো তামবেরিই জিতলেন সোনা। সমান উচ্চতা লাফালেও আগের চেষ্টায় অন্য দুজনের মতো ভালো না করায় সোনা পেলেন না বেলারুশের মাকসিম নেদাসেকাউ।

এখন আপানদের মনে হতেই পারে, সোনা কীভাবে দুজন পেতে পারেন? এখানেই গড়ে উঠল এক অন্য নজির।ঈসা বারশিম ও তামবেরি ২.৩৭ মিটার উঁচুতে লাফ দিলেও আটকে গেছেন ২.৩৯ মিটার লাফ দিতে গিয়ে। তা–ও আবার দুজনই আটকে গেছেন তিনবার করে। দুজনকে কোনোভাবেই আলাদা করা যাচ্ছিল না। দুজনের কেউই ফাউল করেননি। ফলে সোনার দাবি নিয়ে আসেন দুজনই।

এমন অবস্থায় ট্র্যাকে এসে অলিম্পিকের এক কর্মকর্তা তাঁদের প্রস্তাব দেন ফুটবলে টাইব্রেকের মতো ‘জাম্প অফ’-এর, ‘তোমরা চাইলে আমরা জাম্প অফের ব্যবস্থা করতে পারি।’ অন্তত একটা কিছুর ভিত্তিতে হলেও দুজনকে আলাদা করা হয়। আর এখানেই সবার মন জিতে নিয়েছেন ঈসা বারশিম। তাৎক্ষণিকভাবে সেই কর্মকর্তাকে ঈসা বারশিম জিজ্ঞেস করেন, ‘আমরা দুজন কি দুটি সোনার পদক পেতে পারি না?’ ইঙ্গিতটা পরিষ্কার, তামবেরির সঙ্গে সোনার পদক ভাগাভাগি করে নিতে কোনও আপত্তি নেই তাঁর। ঈসা হয়তো ভেবেছিলেন, তিনি যেমন চার বছর ধরে রক্ত জল করা পরিশ্রমে এই সাফল্য পেয়েছেন, তামবেরিরও তো তা–ই করেছেন! তামবেরির সোনা জেতার যোগ্যতা থাকলে শুধু ‘জাম্প অফের’ ওপর ভিত্তি করে তাঁকে রুপা দিতে হবে কেন? এভাবেই সতীর্থকেও সোনার আনন্দ ছুঁইয়ে দিতে চাইলেন তিনি।

দুজন ব্যাপারটা নিয়ে একবারও কথা বলেননি, আলোচনাও করেননি। কিন্তু ঈসা বারশিম বুঝেছিলেন তামবেরির মনের কথা। বুঝেছিলেন, অলিম্পিকে সোনার পদক একজন অ্যাথলেটের কাছে ঠিক কতটা গুরুত্বপূর্ণ।  এরপর তাঁরা কর্মকর্তার জবাবের অপেক্ষা করছিলেন। 

‘হ্যাঁ, এটাও সম্ভব’, সেই কর্মকর্তার মুখ থেকে এই উত্তর শোনার পরই উল্লাসে মেতে ওঠেন ঈসা বারশিম ও তামবেরি। দুজন একে অপরকে জড়িয়ে ধরে সাফল্য উদ্‌যাপন করা শুরু করেন। আর এর মধ্যেই নিশ্চিত হয়ে যায়, ১১৩ বছর পর অলিম্পিকে সোনা ভাগাভাগি করে জয়ের গৌরব উদযাপিত হচ্ছে।

ঈসা বারশিমের সঙ্গে তামবেরির বন্ধুত্ব যে এই ঘটনার পরই হলো, তা কিন্তু নয়। দুজন দুজনকে অনেক আগে থেকেই চিনতেন। একই প্রতিযোগিতায় অংশ নেওয়ার জন্য দুজনের মধ্যে একটা বন্ধনও গড়ে উঠেছিল। গত অলিম্পিকের পর গোড়ালির চোটে পড়েছিলেন তামবেরি, যা প্রায় তাঁর কেরিয়ারকেই শেষ করে দিচ্ছিল। তা–ও কোনোভাবে প্যারিসের ডায়মন্ড লিগে অংশ নেওয়ার যোগ্যতা অর্জন করেছিলেন।কিন্তু সেখানে ঠিকমতো লাফই দিতে পারছিলেন না। মনের জোরও পাচ্ছিলেন না, আত্মবিশ্বাস হারাতে বসেছিলেন। প্রতিযোগিতার পর সরাসরি নিজের ঘরে গিয়ে মন খারাপ করে বসে ছিলেন। 

পরদিন এই মুসা বারশিমই সাহস জুগিয়েছিলেন তামবেরিকে। তামবেরির ঘরে গিয়ে কথা বলেছিলেন। বলেছিলেন, ‘দেখো, তুমি ঠিক পথেই আছ। মাত্র একটা বড় চোট থেকে ফিরেছ। কেউ ভেবেছিল, তুমি ওই চোটের পর ডায়মন্ড লিগে আসতে পারবে? কিন্তু তুমি এসেছ। যা হচ্ছে, আস্তে আস্তে হতে থাকুক। ঠিকই একসময় নিজের সেরাটা দিতে পারবে।’ তাহলে ভাবুন তো বন্ধুত্বের জোর যদি এমন হয়, তা হলে তো যে কোনও যুদ্ধই এইভাবে হাসিমুখে পার করে ফেলা যায়।

কোন মন্তব্য নেই

Blogger দ্বারা পরিচালিত.