বুলগেরিয়ার পথে পথে দেখা মিলবে এমন ‘বইয়ের বেঞ্চ’

Odd বাংলা ডেস্ক: একেক দেশের মানুষের সংস্কৃতি, জীবনদর্শন একেক রকম। যা অন্য দেশ বা জাতির কাছে বিস্ময়ের খোঁড়াক জোগায়। বুলগেরিয়ার বুরগাস শহরে প্রথম দর্শনে আপনি বিস্মিত হতে পারেন। মনে প্রশ্ন জাগতে পারে—ফুটপাতে বই খুলে রেখেছেন কেন? কারা খুলে রেখেছেন বই—এই প্রশ্ন জাগতে পারে মনে। পরখ করে কিছুক্ষণ পরই আপনার ভুল ভাঙবে। এ—তো বই নয়, বইয়ের আকৃতির মতো বেঞ্চ। 

বুরগাস শহরে গেলে নজরে পড়বে এই বইয়ের বেঞ্চ। শহরটির বিভিন্ন এলাকার ফুটপাতে তৈরি করা হয়েছে এই বেঞ্চ। অবসরে ঘুরতে বেরোনো মানুষ কিংবা পথিক ক্লান্ত বোধ করলে সেখানে বসে বিশ্রাম নিতে পারেন। রাতে সেখানে শুয়ে থাকেন গৃহহীন মানুষ। আমাদের দেশের মানুষ ধর্মগ্রন্থের পরই বইকে পবিত্র মনে করেন। তাই বইয়ের উপর বসার কথা ভাবতেই পারবেন না কেউ। 

জাতি হিসেবে খুবই শান্ত প্রকৃতির বুলগেরিয়ার মানুষ। দক্ষিণ-পূর্ব ইউরোপ মহাদেশের একটি রাষ্ট্র। দেশটি বলকান উপদ্বীপের পূর্ব পার্শ্বে ইউরোপ ও এশিয়ার ঐতিহাসিক সঙ্গমস্থলে অবস্থিত। এর পূর্বে কৃষ্ণ সাগর, দক্ষিণে গ্রিস ও তুরষ্ক, পশ্চিমে সার্বিয়া ও মন্টিনেগ্রো এবং ম্যাসিডোনিয়া, এবং রোমানিয়া অবস্থিত। এখানে প্রায় ৭৭ লাখ লোকের বাস। সোফিয়া বুলগেরিয়ার রাজধানী ও বৃহত্তম শহর।

বুলগেরিয়া পর্বত, নদনদী ও সমভূমির দেশ। উত্তর বুলগেরিয়ার পূর্ব-পশ্চিম বরাবর বলকান পর্বতমালা প্রসারিত। বলকান পর্বতমালার নামেই অঞ্চলটির নাম হয়েছে বলকান।  ইউরোপ ও এশিয়ার মধ্যস্থলে অবস্থিত হওয়ায় বুলগেরিয়াকে নিয়ে বহু শক্তির প্রতিদ্বন্দ্ব্বিতা হয়েছে। বহু শতাব্দী ধরে এটি একটি স্বাধীন রাজ্য ছিল। 

তবে প্রকৃতির অপার এক সৌন্দর্যের দেশ বুলগেরিয়া। উন্নত প্রযুক্তিসম্পন্ন অর্থনৈতিক ব্যবস্থার এ দেশটিতে ২০০৭ সাল থেকে পর্যটন খাত ব্যাপক প্রসার লাভ করছে। বুলগেরিয়ার পূর্বে কৃষ্ণ সাগরের উপকূল উত্তরে খাড়া পার্বত্য ঢাল থেকে দক্ষিণে বালুকাময় সৈকতে নেমে এসেছে। এখানকার পর্যটন কেন্দ্রগুলো সারা বিশ্ব থেকে লোক বেড়াতে আসে। উত্তরের পর্বতমালাতে শীতকালে ঘন তুষারে ঢেকে যায়। ফলে শীতকালে এখানে স্কি কিংবা আইস হকির মতো উইন্টার স্পোর্টসের জমজমাট আসর বসে।

দেশের প্রাচীন ইতিহাসের কারণে সাম্প্রতিক সময়ে দেশটির প্রায় নয়টি স্থান ইউনেস্কোর "ওয়ার্ল্ড হেরিটেজ সাইড" হিসেবে ঘোষিত হয়েছে।এ সকল স্থানের মধ্যে পিরিন ন্যাশনাল পার্ক, ঐতিহাসিক শহর নেসেবার এবং মাদারা নদী উল্লেখযোগ্য। এছাড়াও প্রাচীনকালে বিভিন্ন স্থানে পুঁতে রাখা সোনার ভাণ্ডার পাওয়া গেছে। বর্তমানে যাকে সবচেয়ে পুরাতন সোনার ভাণ্ডারগুলোর মধ্যে অন্যতম মনে করা হচ্ছে। ভারনা নামক স্থানে অবস্থিত মিউজিয়ামগুলোতে এর কিছু নিদর্শন পাওয়া যায়। কিছু লোককথা অনুযায়ী আগুনের প্রভাব সে দেশের প্রাচীন সংস্কৃতিতে দেখা যায় যেখানে বলা হচ্ছে যে আগুনের প্রভাবে না কি দুষ্ট আত্মা এবং অশুভ প্রভাব থেকে মুক্তি পাওয়া যায়।

তবে এদেশের বইয়ের বেঞ্চগুলো পর্যটকদের বেশ নজরে এসেছে। মূলত বিখ্যাত সব লেখকদের চমৎকার সব বইয়ের সঙ্গে দেশের মানুষকে পরিচয় করিয়ে দিতে এই অভিনব কাজটি তারা করেছিলেন। 

কোন মন্তব্য নেই

Blogger দ্বারা পরিচালিত.