যুদ্ধের জন্য মানচিত্র থেকেই বাদ পড়েছিল এই দ্বীপ, এখন এটাই খরগোশদের স্বর্গরাজ্য!


ইন্দ্রাণী মুখোপাধ্যায়, Odd বাংলা: বিশ্বের এমন অনেক দেশ রয়েছেন, যেখানে শাসন চালিয়ে এসেছেন বিশ্বের তাব় তাবড় শাসকেরা। কিন্তু বিশ্বে এমনএক জায়গা রয়েছে যেখানে শাসন চালায় খরগোশরা। শিকারী বা পাচারকারীদের হাত থেকে মুক্ত এইসব খরগোশরা। শুধু তাই নয়, ভাল ভাল খাবারও হাজির হয় তাদের জন্য। কিন্তু জানেন কি কোথায় রয়েছে এই খরগোশের স্বর্গ। 

জাপানের হিরোশিমা প্রদেশ থেকে প্রায় ৫০ কিলোমিটার দূরে ওকুনোশিমায় অবস্থিত এই খরগোশদের স্বর্গরাজ্য। যদিও এই স্থান এখন জাপানে 'উসাগি জিমা' নামে পরিচিত, যার বাংলা অর্থ হল খরগোশের দ্বীপ। আক্ষরিক অর্থেই খরগোশের দ্বীপই বটে। কারণ এখানে এলে যতদূর চোখ যাবে শুধু চোখে পড়বে ছোট-বড় বিভিন্ন আকার এবং বর্ণের খরগোশ। 

        Image Source- Facebook

খরগোশ দ্বীপের অন্ধকারাচ্ছন্ন ইতিহাস-
এতকিছু শুনে আপনার মনে হতেই পারে যে, এতগুলি খরগোশ এই দ্বীপে এল কীভাবে? এর উত্তর দিতে হলে ওকুনোশমা দ্বীপের অন্ধকারাচ্ছন্ন ইতিহাসের কথা বলতে হবে। প্রাচীনকালে ওকুনোশিমা দ্বীপটি ছিল পুরদস্তুর কৃষিক্ষেত্র। কিন্তু দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময়ে জাপান সাম্রাজ্যের সেনারা সেখানে কয়েক হাজার টন বিষাক্ত গ্যাস তৈরি করেছিল। এবং এটিকে একটি গুপ্ত দ্বীপ গড়ে তোলার লক্ষ্যে জাপানের মানচিত্র থেকে গোটা দ্বীপটিকে সরিয়ে দেওয়া হয়েছিল। 

একটি আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যমে প্রকাশিত খবর অনুসারে সেই দ্বীপে মাস্টার্ড গ্যাস, ফসজেন এবং অন্যান্য বিভিন্ন ধরণের বিষাক্ত গ্যাস তৈরি করা হয়েছিল। ১৯৩০ এবং ৪০-এর দশকে চিনের যুদ্ধে চিনা সৈন্য এবং সাধারণ মানুষদের ওপর এই বিষাক্ত গ্যাস প্রয়োগ করা হয়েছিল। যার জেরে সেই সময় আনুমানিক ৮০,০০০ মানুষ প্রাণ হারিয়েছিলেন।  

                                                   Image Source- Facebook

খরগোশদের আগমন হল কীভাবে- 
দ্বীপের অন্ধকারাচ্ছন্ন দ্বীপটির কথা জানলে স্বভাবতই আপনাদের মনে প্রশ্ন জাগবে যে, কীভাবে এমন জায়গায় এল খরগোশরা। তবে এই বিষয়টি ঘিরে কিন্তু সেখানে একাধিক মতবাদ প্রচলিত রয়েছে। ১৯২৯ সালে সেনারা যখন সেখানে বিষাক্ত গ্যাস তৈরির কাজ করত, তখন সেই গ্যাসের কার্মক্ষমতা পরীক্ষা করে দেখারও প্রয়োজন ছিল। তাই সেইসময়ে খরগোশের ওপর সেই বিষাক্ত গ্যাস প্রয়োগ করা হত। সেই থেকেই খরগোশদের বংশোধর হিসাবে তারা এখানে থেকে গিয়েছে। এই মতবাদকে অনেক বিশেষজ্ঞই অস্বীকার করেন। অন্যদিকে অনেকে আবার এও মনে করন যে, ১৯৭১ সালে কয়েকজন স্কুলের শিশু এখানে বেড়াতে এসে কয়্কটি খরগোশ ছেড়ে গিয়েছিল, সেই থেকেই এটাই তাদের উত্তরসূরীদের বাসস্থান হিসাবে রয়ে গিয়েছে। 

বংশবিস্তার- 
বর্তমানে খরগোশ দ্বীপে খরগোশের সংখ্যা প্রায় ১,০০০। এই এলাকায় কোনও কুকুর বা বেড়ালের প্রবেশে নিষিদ্ধ কার হয়েছে, পাশাপাশি চোরাশিকারিদের উৎপাত নেই। ফলে এদের জীবনে সমস্যা সৃষ্টি করার মতো কেউ নেই। আর সেই কারণেই এদের বর্তমার সংখ্যাটা যে খুব তাড়াতাড়ি দ্বিগুণ হয়ে যাবে, সেকথা বলাই যায়। 

                                                       Image Source- Facebook

জনপ্রিয়তার জেরে সমস্যা- 
এখন বিশ্বের প্রায় বেশিরভাগ কোণায় এই খরগোশ দ্বীপের নাম ছড়িয়ে গিয়েছে। একদিকে এর যেমন জনপ্রিয়তা বৃদ্ধি পেয়েছে তেমনই এই বাড়তে থাকা জনপ্রিয়তা খরগোশগুলির স্বাস্থ্যের অবণতির অন্যতম কারণ হিসাবে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা। পর্যটকরা যখনই কোনও খাবার হাতে এই খরগোশ দ্বীপে প্রবেশ করেন, তখনই তাদের আশেপাশে জড়ো হয়ে যায় প্রায় গোটা চল্লিশেক খরগোশ। পর্যটকরাও তাদের কোলে নেন, নানরকমের খাবার খেতে দেন। তেমনই অনেকসময়ে বাঁধাকপির পাতাও দেন। বিশেষজ্ঞদের কথায়, খরগোশদের জন্য বাঁধাকপির পাতা একেবারেই আদর্শ নয়। এর জেরে তাদের শরীর ভারী হয়ে যায় এবং এদের আয়ু ২ বছরের বেশি হয় না। অন্যদিকে আর একটি সমস্যা হল রোদ ঝলমলে দিনে পর্যটকরা এসে এদের প্রচুর পরিমাণে খাবার খাওয়ালেও, বর্ষার দিনে একজন পর্যটকরাও আসেন না, ফলে তারা অভুক্ত থাকে। এই ভারসাম্যের অভাবের কারণে খরগোশদের স্বাস্থ্যের যথেষ্ট অবণতি হয় বলে জানিয়েছেন বিশেষজ্ঞরা। 

কোন মন্তব্য নেই

Blogger দ্বারা পরিচালিত.