ছোটবেলায় মোটেও ভাল ছিল না গানের গলা! তারপর একদিন ঘটে গেল মিরাকল...

Odd বাংলা ডেস্ক: কিশোর কুমারের জন্ম হয় মধ্যপ্রদেশের খান্ডওয়াতে। ভালো নাম আভাস কুমার গাঙ্গুলী‚ ডাক নাম ছিল কিশোর। বাবা কুঞ্জলাল গাঙ্গুলি ছিলেন পেশায় আইনজীবী আর মা গৌরী দেবী গৃহবধূ। চার ভাই-বোনের মধ্যে কিশোর ছিলেন সবার ছোট। সবচেয়ে বড় অশোক কুমার‚ তারপর দিদি সতী দেবী‚ আর এক দাদা অনুপ কুমার আর সব শেষে কিশোর।

ছোট থেকে মোটেই ভালো ছিল না কিশোরের গানের গলা।শোনা যায় অত্যন্ত কর্কশ আর হেঁড়ে গলায় নাকি গান গাইতেন কিশোর। শোনা যায়, ছোটবেলায় একবার পায়ে চোট লাগার পর প্রায় এক মাস ধরে চেঁচিয়ে কান্নাকাটি করেছিলেন কিশোর। আর তার পরই নাকি ভোল বদলে যায় গলার।

গুরু বলে মানতেন তিনজনকে। কে এল সায়গল‚ হলিউডি গায়ক-অভিনেতা ড্যানি কে এবং রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরকে| তাঁর বাড়িতে ঝোলানো ছিল এই তিনজনের বড় বড় পোট্রেট। রোজ সকালে উঠে এই তিনজনকে প্রণাম করতেন কিশোর কুমার।

ভারতবর্ষে পুরুষ প্লেব্যাক সিঙ্গার হিসেবে সবচেয়ে বেশি ফিল্ম ফেয়ার অ্যাওয়ার্ড জেতার রেকর্ড আজও রয়েছে কিশোর কুমারের দখলে। মোট আটবার এই পুরস্কার জিতেছিলেন তিনি। গানগুলি হল- ‘রূপ তেরা মস্তানা (১৯৬৯)’‚ ‘দিল অ্যায়সা কিসি নে মেরা (১৯৭৫)’‚ ‘খাইকে পান বনারসওয়ালা (১৯৭৮)’‚ ‘হাজার রাহে মুড়কে দেখি(১৯৮০)’‚‘পগ ঘুঙরু বাঁধ(১৯৮২)’‚‘অগর তুম না হোতে(১৯৮৩)’‚‘মঞ্জিলে আপনি জগহ (১৯৮৪ )’‚ ‘সাগর কিনারে (১৯৮৫)’|

উদ্ভট কাজকর্মের জন্য তাঁর খ্যাতি কিছু কম ছিল না। ওয়ার্ডেন রোডে তাঁর ফ্ল্যাটের বাইরে বোর্ড ঝোলানো থাকত ‘Beware Of Kishore Kumar’। একবার এক প্রযোজক তাঁর প্রাপ্য টাকা মিটিয়ে দেওয়ার পর হ্যান্ডশেক করতে চাইলে তাঁর হাত নিজের মুখের মধ্যে নিয়ে কামড়ে দিয়েছিলেন কিশোর। মনে করিয়ে দিয়েছিলেন বাইরে টাঙানো বোর্ডের কথা। আবার একবার এক প্রযোজক বেশ কিছুদিন ধরে তাঁর টাকা বাকি রেখে দিয়েছিলেন। সিনেমার নায়ক-গায়ক ছিলেন কিশোর কুমার। তাই রোজ খানিকটা করে গোঁফ আর চুল কামাতে শুরু করেন তিনি। অবশেষে পুরো টাকা মিটিয়ে দেওয়াতে ক্ষান্ত হন কিশোর।

আর একবার একটি দৃশ্যে তাঁর গাড়ি চালিয়ে ফ্রেম থেকে বেরিয়ে যাওয়ার কথা। সেই মতো ফ্রেম থেকে তো বেরিয়ে গেলেন কিশোর‚ কিন্তু গাড়ি না থামিয়ে সোজা পানভেল অব্দি চলে গিয়েছিলেন তিনি। কারণ হিসেবে বলেছিলেন ডিরেক্টর তো ‘কাট‘ বলেননি।

যত বড় পরিচালকই হোক না কেন, সম্পূর্ণ পারিশ্রমিক না পাওয়া পর্যন্ত গান রেকর্ডিং করতেন না। কিন্তু লতা মঙ্গেশকরের অসম্ভব ভক্ত ছিলেন। তাঁর সম্মানে সব সময় পারিশ্রমিক লতার চেয়ে ১ টাকা কম নিতেন।

হৃষিকেশ মুখার্জ্জির ডেব্যু ছবি ‘মুসাফির’ (১৯৫৭)-এ দীলিপ কুমার ও সুচিত্রা সেনের সঙ্গে অভিনয় করেছিলেন কিশোর কুমারও। পরবর্তীকালে তাঁরই নির্দেশনায় ‘আনন্দ’-এও অভিনয় করার কথা ছিল কিশোরের। আর সঙ্গে থাকার কথা ছিল মেহমুদের। কিন্তু কোনো কারণে এক ঝামেলায় জড়িয়ে পড়ায় ‘আনন্দ’-এ আর কাজ করা হয়নি কিশোর কুমারের। সেই দুটি চরিত্রে শেষমেশ অভিনয় করেন অমিতাভ বচ্চন ও রাজেশ খান্না।

কিশোর কুমারের অন্যতম সুপার হিট ছবি ‘চলতি কা নাম গাড়ি ‘(১৯৫৮)-র অনুপ্রেরণা ছিল তাঁরই বাবার পুরনো একটা ক্রাইশলার গাড়ি। কিশোর ভেবেছিলেন কমার্শিয়ালি ফ্লপ হবে এই ছবি আর তা তিনি ইনকাম ট্যাক্স লস হিসেবে দেখাতে পারবেন। কিন্তু তাঁকে অবাক করে দিয়ে এই ছবি সে বছরের দ্বিতীয় বৃহত্তম হিট হিসেবে সাফল্য পায়। এই ছবিতে ছিলেন তাঁর স্ত্রী মধুবালা এবং বাকি দুই ভাই অশোক কুমার ও অনুপ কুমার।

কিশোর কুমার নির্দেশিত ১৯৭৪ সালে মুক্তি পাওয়া ‘বড়তি কা নাম দাড়ি‘ দেখে সত্যজিত রায় বলেছিলেন নিজের সময়কালের থেকে ২৫ বছর এগিয়ে ছিল সে ছবি। 

চারটি ছবিতে ডিরেক্টর‚প্রোডিউসার‚গল্পকার‚ চিত্রনাট্যকার‚ লিরিসিস্ট‚ মিউজিক ডিরেক্টর‚ অভিনেতা এবং গায়ক এই সবকটি ভূমিকায় একসঙ্গে একা হাতে কাজ করেছেন কিশোর কুমার। সেই ছবিগুলি হলো – ‘দূর গগন কি ছাঁও মে‘(১৯৬৪)‚ ‘দূর কা রাহি‘ (১৯৭১)‚ ‘বড়তি কি নাম দাড়ি’ (১৯৭৪) এবং ‘সাবাশ ড্যাডি‘ (১৯৭৮)।

পেশাগত জীবনের মতো কিশোর কুমারের ব্যক্তিগত জীবনও ছিল ততটাই রঙিন। মধুবালাকে বিয়ে করার জন্য ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করেন কিশোর কুমার এবং তাঁর নাম হয় করিম আবদুল।

কোন মন্তব্য নেই

Blogger দ্বারা পরিচালিত.