বিশ্বে সাড়া জাগানো দুর্ধর্ষ ছয় নারী !

Odd বাংলা ডেস্ক: যুগে যুগে পৃথিবীর বিভিন্ন প্রান্তে ভয়ঙ্কর সব অপরাধীর বিচরণ ছিল বা আছে। বহু কুখ্যাত নারীই আজ পুরুষদের পেছনে ফেলে দিয়েছে নানা অসামাজিক কাজকর্মের দ্বারা। তবে এমন অনেক নারী আছেন যারা বিপজ্জনক বিভিন্ন সন্ত্রাসী অভিযানে অংশ নিয়ে বিশ্বজুড়ে সাড়া ফেলে দিয়েছেন। এখানে এমন ছয়জন নারীর কথা বলা হচ্ছে, যাদের কর্মকাণ্ডের বিবরণ শুনলে পুরুষদের বুকেও কাঁপন ধরতে বাধ্য। 

এবাদো

এবাদো নয় সন্তানের মা জননী। ৭০ এর দশকে আফগানিস্তানে সোভিয়েত বিরোধী লড়াইয়ের একজন সক্রিয় কর্মী ছিলেন। তিনি যুদ্ধে স্বামীকে হারিন। তবে স্বামীকে হারিয়ে থামেননি। দেখতে নিষ্পাপ মনে হলেও এবাদোকে সমঝে চলতেন সেরা মুজাহিদ যোদ্ধারাও।

আন্না চ্যাপম্যান ওরফে আনা কুশচেনকো

আন্না চ্যাপম্যান ওরফে আনা কুশচেনকো ছিলেন রাশিয়ান গুপ্তচর। নিজের কাজে আন্না ছিলেন খুবই দক্ষ। তার কাজের ধরন থ্রিলার গল্পকেও হার মানায়। তার ক্ষিপ্ততা সম্পর্কে মার্কিন গোয়েন্দা সংস্থা সিআইএ’র এইচ.কেইথ মিল্টন বলেছেন, আন্না যদি আরো ছয়মাস তার মিশন চালিয়ে যেতে পারতো, তাহলে যুক্তরাষ্ট্রের ইতিহাসে তিনিই হতেন সবচেয়ে বিপজ্জনক গুপ্তচর। আরো নয়জন গুপ্তচরের সঙ্গে আন্নাকে গ্রেফতার করে যুক্তরাষ্ট্র। আন্নার কাজ ছিল শীর্ষ স্থানীয় মার্কিন সংস্থার ভেতরের খবর বের করে রাশিয়ার কাছে পৌঁছে দেওয়া।  

কর্নেল ফানেট উমুরাজা ওরফে নাম্বার ওয়ান কুইন

কর্নেল ফানেট উমুরাজা ওরফে নাম্বার ওয়ান কুইন কঙ্গোর সেনাবাহিনীর সক্রিয় সদস্য ছিলেন। কঙ্গো সেনাবাহিনীর এমটুয়েন্টিথ্রি দলের অন্যতম সদস্য ফানেট উমুরাজার বিরুদ্ধে ধর্ষণ, খুন আর জোর করে শিশুদের সামরিক কাজে নিয়োগসহ যুদ্ধাপরাধের অভিযোগ রয়েছে। 

এনেডিনা আরেলানো ফেলিক্স

২০০৮ সালে মেক্সিকোর কুখ্যাত মাদকচক্র টিজুয়ানা কার্টেলের প্রধান ছিলেন এনেডিনা আরেলানো ফেলিক্স। যুক্তরাষ্ট্রের ড্রাগ ইনফোর্সমেন্ট অ্যাডমিনিস্ট্রেশন (ডিইএ) তাকে বিশ্বের প্রথম নারী মাফিয়া প্রধান হিসেবে ঘোষণা করে। এনেডিনার নেতৃত্বে টিজুয়ানা কার্টেল হত্যার চেয়ে বেশি অপহরণে জড়িয়ে যায়।

মারিয়া লিসিয়ার্ডি

৭০ বছর বয়সী মারিয়া স্পেনে তার মেয়ের কাছে ছদ্মবেশে যাচ্ছিলেন। এ সময় রোমের চাম্পিনো বিমান বন্দরে লাকেজ ড্রপ করার সময় পুলিশ তাকে গ্রেফতার করে। রোমের চাম্পিনো বিমান বন্দর পুলিশ জানায়, লেডি মাফিয়া বস মারিয়া ইতিপূর্বে আট বছর জেল খেটেছেন। ২০০৯ সালে ক্রিসমাস উপলক্ষে সাধারণ ক্ষমায় জেল থেকে মুক্তি পেয়েছিলেন তিনি। কিন্তু আট বছর পর জেল থেকে মুক্ত হয়ে তিনি সংশোধন হননি। পুরোদমে আগের চেয়ে আরো বেশি আগ্রাসী সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড ও কুখ্যাত কাজে জড়িয়ে পড়ে।

 তিনি নাপলি এলাকায় পিকসিরেলা নামক একটি ছোট ডাকাতদের সংগঠন গড়ে তোলেন। হয়ে উঠেন ডাকাত দলের সর্দার। তার সংগঠনের ডাকাত সদস্যরা এত বেশি চালাক যে তারা সহজেই ধরা পড়ত না পুলিশের হাতে। তিনি ২০১০ সাল থেকে ২০২১ সাল পর্যন্ত প্রায় ১১ বছর পুলিশের চোখ ফাঁকি দিয়ে চলতে সক্ষম হয়েছিলেন। পুলিশের কাছে তার বিরুদ্ধে অনেকগুলো মামলা চলমান। এর আগে তিনি তার ভাইয়ের সঙ্গে কাজ করতেন। যৌবনে কালো কেশী মারিয়া লিসিয়ার্ডি ছিলেন অত্যন্ত সুন্দরী। এতে খুব সহজেই পুরুষদের তিনি রূপের জালে জড়িয়ে ফেলতেন। তার ভাই জেনারো লিসিয়ার্ডি ছিলেন নাপোলি তথা ইতালির বিখ্যাত গডফাদার বস।

২০০১ সালে মারিয়াকে গাড়ি চালানো অবস্থায় পুলিশ গ্রেফতার করে। সেই সময় তিনি ছিলেন ইতালির মোস্ট ওয়ান্টেড অপরাধীদের মধ্যে অন্যতম। প্রসিকিউটরদের বর্ণনায়, মারিয়া নাপোলির একজন গডমাদার। তিনি তার বংশ পরম্পরায় চলমান পারিবারিক ধারাবাহিকতায় শেষ গডমাদার। নব্বই দশকের মাঝামাঝি সময়ের আগ পর্যন্ত, নাপোলি অঞ্চলে প্রতিদ্বন্দ্বী মাফিয়া গ্রুপগুলোর লাশ পরে থাকতে দেখা যেতো রাস্তায়। এই ক্ষেত্রে মারিয়া লিসিয়ার্ডিকে ভাগ্যবান বলে ধরা যায়, কারণ তার সেই ধরনের প্রতিদ্বন্দ্বী গ্রুপের হাতে মরতে হয়নি।

মারিয়ার বিরুদ্ধে অভিযোগগুলো হলো, তার গ্রুপের মাধ্যমে স্থানীয় ব্যবসা প্রতিষ্ঠান থেকে চাঁদাবাজি, মাদক ব্যবসা ও নিলাম কারচুপি করা। সরকারি বা ব্যাংকের নিলাম সম্পত্তিতে মারিয়ার বিরুদ্ধে কেউ প্রতিদ্বন্দ্বিতায করতে সাহস করত না। ইতালীয় সরকারের পরিকল্পনা ও প্রচেষ্টায় নাপোলি অঞ্চলে চলমান শত শত বছর ধরে গড়ে ওঠা পারিবারিক মাফিয়াতন্ত্র গত দুই দশকে প্রায় শূন্যের কোঠায় নেমে এসেছে। ইতালির স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী লুসিয়ানা লামর্গেজে মারিয়ার গ্রেফতারে ইতালির ক্রিমিনাল পুলিশ কেরাবিনিয়ারির দক্ষতার প্রশংসা করেছেন।

সামান্থা লেউথওয়েট ওরফে হোয়াইট উইন্ডো

হোয়াইট উইন্ডো হিসেবে পরিচিত সামান্থা লেউথওয়েটের জন্ম উত্তর আয়ারল্যান্ডে। লন্ডনে বেড়ে ওঠা সামান্থা ২০১১ সালে কেনিয়ার একটি অবকাশ যাপন কেন্দ্রে বোমা হামলার মূল পরিকল্পনাকারী ছিলেন। বিবিসির সাংবাদিকরা তাকে 'পৌরাণিক চরিত্র’হিসেবে আখ্যা দিয়েছিলেন।  এখনো ধরা ছোঁয়ার বাইরেই আছেন সামান্থা। তার সন্তানরাও মায়ের মতো সন্ত্রাসের পথেই হাঁটছে বলে ধারণা করা হয়।

কোন মন্তব্য নেই

Blogger দ্বারা পরিচালিত.