তিনি ডাক্তার নন, তবুও গাছ দিয়ে সারান ৫০০ রোগ !

Odd বাংলা ডেস্ক: মানুষ আদর করে তাকে ডাকেন বন মাতাসাঁই বা জঙ্গলের ঠাকুমা। বয়স তার ৭৭ বছর পেরিয়েছে। ঠাকুমা তো তিনি বটেই, তবে জঙ্গলের কেন? কারণ জঙ্গলই তার কাছে সন্তানের মতো। তিনি জঙ্গলের বিভিন্ন লতা পাতা লেকে গাছ-গাছালি সবই চেনেনে। সব গাছগাছালির বিস্ময়কর গুণ তার নখদর্পণে। 

গাছ-গাছালি ব্যবহার করেই তিনি আবিষ্কার করেছেন এমন ওষুধ যা ৫০০ রোগ সারাতে পারে। পিঁপড়ার কামড় থেকে খোগরো সাপের বিষ এসব চিকিৎসার জন্যই মানুষ আসে। তিনি প্রায় ৩৫০ মানুষের জীবন বাঁচিয়েছেন, যাদের বিষাক্ত সাপ দংশন করেছিল। এইসব রোগীকেও ভালো করে তুলতে পারে তার ওষুধ। এ কাজের জন্য তিনি পদ্মশ্রী সম্মানেও ভূষিত হয়েছেন।

এই নারী কেরলে সুপরিচিত। নাম তার লক্ষ্মীকুট্টি। তিরুবনন্তপুরম জেলার কল্লর অঞ্চলের বাসিন্দা তিনি। চারিদিকে ঘন জঙ্গল। তবে জঙ্গল ছেড়ে তিনি চলে আসেননি। বরং জঙ্গলকে কী করে মানবসভ্যতার কাজে লাগানো যায়, সেই চেষ্টায় ব্রতী হয়েছেন।

সবরকম সাপের বিষ থেকে মুক্তির ওষুধই তার জানা আছে। শুধু তাই নয়, তিনি চেনেন লতা-পাতাও। গাছগাছালির বিস্ময়-গুণ তার নখদর্পণে। আর তা ব্যবহার করেই বিগত প্রায় ৪৯ বছর ধরে এভাবেই মানুষের সেবা করে চলেছেন তিনি।

কেরলের ওই জঙ্গল এলাকার আদিবাসীদের মধ্যে তিনি প্রথম ১৯৫০ সালে স্কুলে পড়তে এসেছিলেন। বয়স ৭৭ হলেও এখনো তিনি দক্ষিণের বিভিন্ন নামকরা শিক্ষণ প্রতিষ্ঠানে লতা পাতার গুণাগুণ নিয়ে বক্তৃতা দিয়ে যান ঘণ্টার পর ঘণ্টা। এর পাশাপাশি কেরালার কল্লর অঞ্চলের কেরালা ফল্ক লোর একাডেমির শিক্ষিকা হিসেবে যুক্ত রয়েছেন।

তিনি বলেন, আমি ২৮ বছর বয়স থেকে মানুষের চিকিৎসা শুরু করেছি। প্রায় ৪৯ বছর এ কাজ করছি। বনে আমি যা দেখেছি বা পেয়েছি সেটির উপর ভিত্তি করে আমি একটু স্কুল প্রতিষ্ঠা করেছি। 

যাকে ঘিরে এত কথা সেই লক্ষী কুট্টি নিজে কখনো ভাবেননি জঙ্গলের লতা-পাতা আর গাছ-গাছড়া দিয়ে তার নিজস্ব আবিষ্কার দিয়ে এভাবে মানুষের সেবা করে পদ্মশ্রী সম্মান পাবেন। তাই তো সম্মানের খবর জানার পর তিনি হতবাক। কোনোরকমে বলে ওঠেন, মানুষের কাজে আসতে পেরেই তার সবচেয়ে বেশি আনন্দ। 

পদ্মশ্রী বা অন্য কোনো পুরষ্কার পাব কখনো এই আশা করে ওষুধ তৈরি করে মানুষের সেবা করতে যাইনি। লক্ষ্মীকুট্টি জানান, আজও তার গ্রামে কোনো রাস্তা নেই। সেই ১৯৫২ সালে অনুমোদন মিলেছিল। তবে বাস্তবে আর সে রাস্তা হয়নি। সঠিক সময়ে হাসপাতালে নিয়ে যেতে না পারায় নিজের সন্তানকে হারিয়েছিলেন। তবে সেদিনই পণ করেছিলেন, আর কারো কোল যেন খালি না হয়। 

গাছ-গাছালি যে বহু রোগ ভালো করতে পারে, তা তিনি জানতেন। সন্তান হারানোর পর তা নিয়েই চর্চা করতে শুরু করেন। সে চর্চাই মানবসভ্যতার কাছে আশীর্বাদ হয়ে দেখা দিয়েছে। গাছ-গাছড়া ব্যবহার করে নিজের জ্ঞান আর স্মৃতি থেকে প্রায় ৫০০ রকমের ওষুধ তৈরি করেছেন তিনি। যার মধ্যে আছে সাপের বিষ নামানোর ওষুধও। অর্থাৎ সাপে কাটা রোগীকেও তিনি সারিয়ে তুলতে পারেন লতা-পাতার গুণে।

কোন মন্তব্য নেই

Blogger দ্বারা পরিচালিত.