পিতৃপক্ষ সম্পর্কে এইসমস্ত গুরুত্বপূর্ণ তথগুলি কি জানতেন?
Odd বাংলা ডেস্ক: হিন্দু শাস্ত্রে যতগুলি পক্ষ রয়েছে তার মধ্যে বিশেষ তাৎপর্যপূর্ণ হল দেবীপক্ষ ও পিতৃপক্ষ। হিন্দুধর্ম মতে, পিতৃপক্ষ হল পূর্বপূরুষের তর্পণাদির জন্য প্রশস্ত এক বিশেষ পক্ষ। যখন মানুষ তাদের পূর্বপুরুষদের স্মরণ করে শ্রদ্ধা জানায় সেটাকেই বলা হয় পিতৃপক্ষ। বিশ্বাস করা হয় যে, যদি এই সময় ঈশ্বরের কাছে প্রার্থনা করা হয় তাহলে স্বর্গত পূর্বপুরুষদের কাছ থেকে আশীর্বাদ পাওয়া যাবে এবং তাঁদের আত্মারা শান্তি পান।
২০২১ সালে, পিতৃপক্ষের শুরু হয়েছে ২০ সেপ্টেম্বর এবং শেষ হবে ৬ অক্টোবর। মহালয়ার দিন গঙ্গায় তর্পণের মাধ্যমেই সমাপ্তি হয় পিতৃপক্ষের। এইবছর মহালয়া পড়েছে ৬ অক্টোবর। স্বর্গত পূর্বপুরুষদের সন্তুষ্ট করার জন্য তর্পণ এবং পিন্ড দান বা শ্রাদ্ধের মতো আচার অনুষ্ঠান করা হয়। তাদেরকে তৃপ্ত করার জন্য তিল, জল দান করা হয় এবং তাহাদের যাত্রাপথকে আলোকিত করার জন্য উল্কাদান করা হয়। সাধারণভাবে মৃত পূর্বপুরুষগণকে জলদান করাকেই তর্পণ বলা হয়। মৃত পূর্বপুরুষ শব্দে যাদের সপিণ্ডীকরণ (বাৎসরিক শ্রাদ্ধ) করা হয়েছে তাদের বোঝাবে। কিন্তু কোনও জীবৎপিতৃক (যার পিতা জীবিত আছে) ব্যক্তি তর্পণ করতে পারবেন না।
মহাভারত অনুসারে, প্রসিদ্ধ দাতা কর্ণের মৃত্যু হলে তাঁর আত্মা স্বর্গে গমন করলে, তাঁকে স্বর্ণ ও রত্ন খাদ্য হিসেবে প্রদান করা হয়। কর্ণ ইন্দ্রকে এর কারণ জিজ্ঞাসা করলে ইন্দ্র বলেন, কর্ণ সারা জীবন স্বর্ণই দান করেছেন, তিনি পিতৃগণের উদ্দেশ্যে কোনওদিন খাদ্য প্রদান করেননি। তাই স্বর্গে তাঁকে স্বর্ণই খাদ্য হিসেবে প্রদান করা হয়েছে। কর্ণ বলেন, তিনি যেহেতু তাঁর পিতৃগণের সম্পর্কে অবহিত ছিলেন না, তাই তিনি ইচ্ছাকৃতভাবে পিতৃগণকে স্বর্ণ প্রদান করেননি। এই কারণে কর্ণকে ষোলো দিনের জন্য মর্ত্যে গিয়ে পিতৃলোকের উদ্দেশ্যে অন্ন ও জল প্রদান করার অনুমতি দেওয়া হয়। এই পক্ষই পিতৃপক্ষ নামে পরিচিত হয়। এই কাহিনির কোনও কোনও পাঠান্তরে, ইন্দ্রের বদলে যমকেও দেখা যায়।
জীবিত ব্যক্তির পিতা বা পিতামহ যে তিথিতে মারা যান, পিতৃপক্ষের সেই তিথিতে তাঁর শ্রাদ্ধানুষ্ঠান অনুষ্ঠিত হয়। তবে এই নিয়মের কিছু ব্যতিক্রমও রয়েছে। পূর্বপুরুষকে যে খাদ্য উৎসর্গ করা হয়, তা সাধারণত রান্না করে রুপো বা তামার পাত্রে কলাপাতার উপর দেওয়া হয়। এই খাদ্যগুলি হল ক্ষীর, লপসি, ভাত, ডাল, গুড় ও কুমড়ো। মহালয়ার দিন পিতৃপুরুষের শ্রাদ্ধ অনুষ্ঠিত হয় দ্বিপ্রহরে নদী বা হ্রদের তীরে বা শ্রাদ্ধকর্তার গৃহে। অনেক পরিবার বারাণসী বা গয়ায় গিয়ে শ্রাদ্ধানুষ্ঠান করেন। শ্রাদ্ধকর্তাকে স্নান করে শুদ্ধ হয়ে ধুতি পরে শ্রাদ্ধ করতে হয়। শ্রাদ্ধের পূর্বে তিনি কুশ ঘাসের আংটি ধারণ করেন। এরপর সেই আংটিতে পূর্বপুরুষদের আবাহন করা হয়। শ্রাদ্ধ খালি গায়ে করতে হয়। শ্রাদ্ধের সময় সিদ্ধ অন্ন ও ময়দা ঘি ও তিল দিয়ে মাখিয়ে পিণ্ডের আকারে উৎসর্গ করা হয়। একে পিণ্ডদান বলে। এরপর দুর্বাঘাস, শালগ্রাম শিলা বা স্বর্ণমূর্তিতে বিষ্ণু এবং যমের পূজা করা হয়। এরপর পিতৃপুরুষের উদ্দেশ্যে খাদ্য প্রদান করা হয়।





Post a Comment