যৌন মিলনের দুই মাস পরেই মারা যায় পুরুষ অক্টোপাস

 


ODD বাংলা ডেস্ক:  আট পায়ে সমুদ্র দাপিয়ে বেড়ানো মলাস্কা পর্বের এক পরিচিত জীব অক্টোপাস। শত্রুর চোখে ধুলো দিতে ওস্তাদ এই প্রাণী। অক্টোপাস গবেষণায় বিজ্ঞানীদের আগ্রহের কোনো অন্ত নেই।

মানুষসহ অন্যান্য অনেক প্রাণীর হৃৎপিণ্ড থাকে একটি। তবে, অক্টোপাসের হৃৎপিণ্ড তিনটি। দুইটি হৃৎপিণ্ড প্রাণীটির ফুলকায় রক্ত সঞ্চালনে সহায়তা করে। আর তৃতীয়টি নিয়োজিত থাকে শরীরের বাকি অঙ্গগুলোতে রক্ত সঞ্চালনের কাজে। অক্টোপাসের রক্তে হিমোগ্লোবিনের পরিবর্তে হিমোসায়ানিন উপস্থিত থাকে। তিনটি হৃৎপিণ্ড একটি হৃৎপিণ্ডের তুলনায় তিনগুণ রক্তচাপ তৈরি করতে সক্ষম। ফলে এগুলো রক্ত সঞ্চালনের মাধ্যমে দেহে অক্সিজেনের সরবরাহ বজায় রাখে। অক্টোপাসের তিনটি হৃৎপিণ্ড থাকলেও এগুলো যে সবসময় কাজে লাগে, ব্যাপারটা এরকম নয়। যখন সাঁতার কাটে, তখন যে হৃৎপিণ্ড পুরো শরীরে রক্ত সরবরাহ করছিল, তা কাজ করা বন্ধ করে দেয়। সে কারণেই অক্টোপাস সাঁতার কাটার বদলে হামাগুড়ি দিয়ে চলাফেরাকেই অধিকতর গুরুত্ব দেয়।


একটি অক্টোপাসের নিউরন সংখ্যা প্রায় ৫০০ মিলিয়ন, যা একটি কুকুরের নিউরন সংখ্যার সমান। অক্টোপাসের শরীরে কোনো হাড়ের অস্তিত্ব নেই। তাই তাদের বাহুগুলো যেকোনো আঘাতে শরীর থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে যেতে পারে।


তবে অন্যসব প্রাণীর মতো তাদের মিলন প্রকৃয়া নয়। আছে কিছু ভিন্নতা। মিলনের সময় পুরুষ অক্টোপাসটি স্ত্রী অক্টোপাসের গহ্বরের মধ্যে স্পার্মাটোফোর জমা করে। হেক্টোসোটাইলাস হলো পুরুষ অক্টোপাসের একটি রূপান্তরিত বাহু, যা দিয়ে সে স্ত্রী অক্টোপাসে শুক্রাণু স্থানান্তর করে। এই মিলন প্রক্রিয়া স্থায়ী হতে পারে প্রায় কয়েক ঘণ্টা। যৌন মিলনের দুই মাস পরেই মারা যায় পুরুষ অক্টোপাসটি। আর স্ত্রী অক্টোপাসকে মৃত্যুবরণ করতে হয় ডিম ফুটার কিছুদিন পর। স্ত্রী অক্টোপাসটি ডিমে তা দিতে ব্যয় করে সাধারণত আট থেকে দশ মাস। প্রজাতিগত ভিন্নতা বা তাপমাত্রার পার্থক্যের জন্য এর খানিকটা তারতম্যও ঘটতে পারে। এ সময় মা অক্টোপাস নাওয়া-খাওয়া সবকিছু ছেড়ে দিয়ে ডিম রক্ষার কাজে মন দেয়।


অক্টোপাস সবচেয়ে বেশি খাওয়া হয় উত্তর ও পশ্চিম আফ্রিকায়। এছাড়াও পূর্ব এশিয়া, স্পেন, গ্রিস এবং আমেরিকাতেও খাদ্য হিসেবে অক্টোপাস জনপ্রিয়। জীবন্ত অক্টোপাস বা স্যান-ন্যাক-জি, দক্ষিণ কোরিয়াতে একটি সুস্বাদু এবং জনপ্রিয় খাবার হিসেবে বিবেচনা করা হয়। তারা বিশ্বাস করে গ্রীষ্মকালে এটি শক্তি বর্ধক হিসেবে দারুণ কাজ করে। আবার কেউ কেউ মনে করেন, জীবন্ত অক্টোপাস খেলে রক্তের শর্করার পরিমাণ নিয়ন্ত্রণে থাকে। জাতিসংঘের খাদ্য ও কৃষি সংস্থার এক জরিপ অনুযায়ী, বিভিন্ন দেশে প্রতিবছর প্রায় দুই লক্ষ সত্তর হাজার টন অক্টোপাস আমদানি করা হয়ে থাকে।


সাগরের প্রাচীন এই প্রাণী নিয়ে গবেষণা করতে গিয়ে প্রতিনিয়তই অবাক বনে যাচ্ছেন বিজ্ঞানীরা। শুধু বুদ্ধি কিংবা চাল চলনই নয়, প্রাণীটির মস্তিষ্ক আর জিন পরীক্ষা করেও গবেষকদের বিস্মিত হতে হয়েছে। মানুষের চাইতেও অক্টোপাসের জিনের সংখ্যা ১০ হাজার বেশি। এই জিনের বৈচিত্র্যের কারণেই হাজার হাজার বছর ধরে টিকে আছে সাগরের রহস্যপূর্ণ এই প্রাণীটি।

কোন মন্তব্য নেই

Blogger দ্বারা পরিচালিত.