পরিবেশ বাঁচাতে তৈরি হচ্ছে ৪৭৫০ মাইল দীর্ঘ গাছের সারি, 'গ্রেট গ্রিন ওয়াল' প্রকল্পে যোগ দিয়েছে আফ্রিকার ২১টি দেশ


ইন্দ্রাণী মুখোপাধ্যায়, Odd বাংলা: গোটা মানবজাতি যখন একটু একটু করে তলিয়ে যাচ্ছে, তার মাঝেই এল সুখবর। আফ্রিকার প্রায় দু'ডজন দেশ একজোট হয়ে 'গ্রেট গ্রিন ওয়াল' তথা সবুজের দেওয়াল তৈরির সংকল্প গ্রহণ করেছে। সাহারা মরুভূমির দক্ষিণ প্রান্তের (সাহেল নামে পরিচিত) সমগ্র বনাঞ্ল এবং অরণ্য-এর একটা শৃঙ্খল তৈরি করতে এবং তার রক্ষণাবেক্ষণ করতে সংকল্পবদ্ধ হয়েছে। প্রাথমিকভাবে এই ভাবনার সূত্রপাত ২০০৭ সালে, প্রথমে ১১টি দেশ এই কাজে এগিয়ে এসেছিল। বর্তমানে এই প্রকল্পে আরও ১০টি দেশ এগিয়ে এসেছে। রাষ্ট্রসঙ্ঘের এনভায়রনমেন্ট প্রোগ্রামের তরফে এটিকে বিশ্বের বৃহত্তম বাস্তুতন্ত্র পুনরুদ্ধার প্রকল্প (cosystem restoration project)।  

এই প্রকল্পটি আফ্রিকা মহাদেশের একাধিক চ্যালেঞ্জের মোকাবিলা একাই করতে সক্ষম। আফ্রিকা মহাদেশের সামনে এখন অন্যতম চ্যালেঞ্জ হল সাহারা মরুভূমির বিস্তার। এই বৃক্ষ শৃঙ্খলা তৈরি হলে সাহারা মরুভূমির বিস্তার রোধ করা যাবে। সাহারা ধীরে ধীরে দক্ষিণের দিকে অগ্রসর হচ্ছে, যার ফলে বহু মানুষের জীবিকার ওপরেও থাবা বসাচ্ছে। পাশাপাশি জলবায়ু পরিবর্তন এই গোটা প্রক্রিয়াটিকে আরও তরান্বিত করেছে, যার ফলে মহাদেশটি অর্থনৈতিক এবং পরিবেশগত হুমকির মুখে পড়েছে। যা সাহেলের মতো দেশগুলি যা ইতিমধ্যে খুব গরিব এবং সল্পোন্নত দেশ, সেগুলিকে আরও উল্টোপথে চালিত করছে। 

আগামী ২০৩০ সালে এই প্রকল্পটি ২৪৭ মিলিয়ন একর জমি অধিকার করে নেবে। যার ফলে অর্থনৈতিক উন্নতি যেমন আরও ভাল কৃষিকাজ, প্রাণীসম্পদের উন্নয়ন হবে। পাশাপাশি যত বেশি গাছ, তত বেশি বৃষ্টিপাত হবে। এরফলে গোটা সম্প্রদায় তথা বাস্তুতন্ত্রে আরও বেশি করে জলের যোগান মিলবে। শুধু তাই নয় নতুন গাছগুলি প্রতি বছর ২৫০ মিলিয়ন মেট্রিকটন কার্বন গ্রহণ করবে, যা ৩ বছর ক্যালিফোর্নিয়ার রাস্তায় গাড়ি না নামলে যে বিশুদ্ধ বাতাস তৈরি হবে তার সমতুল্য। আর এই বৃক্ষরোপণের প্রক্রিয়াটি আগামী কয়েক বছর ধরে কয়েক হাজার মানুষের জীবিকা নির্বাহ করবে। সুতরাং বোঝাই যাচ্ছে, সবদিক থেকেই লাভবান হওয়া যাবে। 

আর এই গোটা প্রচেষ্টায় ব্যয় হবে প্রায় ৮ বিলিয়ন মার্কিন ডলার। বর্তমানে ১৫ শতাংশ কাজ শেষ হয়েছে। আশা করা হচ্ছে ২০৩০ সালের মধ্যে বাকি কাজ সম্পন্ন হবে। মনুষ্য প্রজাতি যখন এমন একটা সংকটকালীন পরিস্থিতির মধ্যে দিয়ে যাচ্ছে যখন জলবায়ু পরিবর্তন হচ্ছে, অজানা ভাইরাসের প্রাদুর্ভাব বাড়ছে, দাবানলের জেরে বনাঞ্চল ধ্বংসের মুখে তখন প্রকৃতিতে ভারসাম্য রক্ষার জন্য এমন প্রকল্প নিঃসন্দেহে অভিনব।
Blogger দ্বারা পরিচালিত.