জার্নি লন্ডন টু কলকাতা, একসময়ে বিশ্বের দীর্ঘতম এই রুটে বাস পরিষেবা দিত 'অ্যালবার্ট'


Odd বাংলা ডেস্ক: নিজের দেশেই দূরপথে ভ্রমণের জন্য আজকাল বেশিরভাগই আকাশপথেই স্বচ্ছন্দ। তবে রেলপথ এবং সড়কপথেও যাতায়াতের ব্যবস্থা রয়েছে। প্রতিবেশি দেশ ভারত, বাংলাদেশ এবং পাকিস্তানের সঙ্গে সড়কপথে যাতায়াতের বন্দোবস্ত রযেছে। কিন্তু জানলে অবাক হবেন যে এক সময় কলকাতা থেকে লন্ডনে যেত সড়কপথে বাসে চেপে! অবিশ্বাস্য মনে হলেও, এটাই সত্যি যে লন্ডন থেকে কলকাতা পর্যন্ত বাস পরিষেবা ছিল, যা বিশ্বের সবচেয়ে দীর্ঘ বাস রুট বলে বিবেচিত। 

ইংল্যান্ডের রাজধানী লন্ডন থেকে কলকাতা পর্যন্ত এই বাসটি ২০ হাজার ৩০০ মাইল দূরত্ব পেরত। বাসটির নাম ছিল 'অ্যালবার্ট' সম্প্রতি লন্ডনের ভিক্টোরিয়া কোচ স্টেশনের ১৯৫০-এর দশকের সেই বাসের ছবি সোশ্যাল মিডিয়ায় ভাইরাল হয়েছে। ছবিতে বিশ্বের দীর্ঘতম এই রুটের বাসে ওঠার আগে যাত্রীদের ছবি ক্যামেরাবন্দি করা হয়। ৬০-এর দশকে বিশ্বের দীর্ঘতম এই রুটে চলাচলকারী এই বাসটি সেই সময়ে ১১টি দেশের মাটি দিয়ে যেত।   

জানা যায় ১৯৪৭ সালে নির্মিত একটি এলবিন ডাবল ডেকার বাস। এর আগের নম্বর ছিল ২০০৪ সিডনি। ২১ বছর ধরে যাত্রী পরিষেবা দেওয়ার পর একটি দুর্ঘটনার কবলে পড়ে অ্যালবার্ট। পরবর্তীতে এটি মেরামত করে একটি বিলাসবহুল বাসের রূপ দেওয়া হয়। ১৯৬৮ সালের ৮ অক্টোবর সিডনির মার্টিন প্যালেসের জিপিও থেকে প্রথম যাত্রা শুরু করে ১৩২ দিন পর ১৯৬৯ সালের ১৭ ফেব্রুয়ারি লন্ডন পৌঁছায়।  ১৯৬৮ সাল থেকে ১৯৭৬ সাল পর্যন্ত ১৫ বার লন্ডন থেকে কলকাতা যাতায়াত করেছিল 'অ্যালবার্ট'। লন্ডন থেকে কলকাতা হয়ে আস্ট্রেলিয়ার সিডনি পর্যন্ত যাতায়াত করেছিল ৪ বার। কলকাতা থেকে লন্ডন পর্যন্ত ভাড়া ছিল ৮৫ পাউন্ড। ভারতীয় মুদ্রায় প্রায় ৮ হাজার টাকা। বাস যাত্রার ক্ষেত্রে এই মূল্য নিঃসন্দেহে খুবই ব্যয়বহুল।


ব্রিটিশ পর্যটক অ্যান্ডি স্টুয়ার্ট পরে থেকে বাসটি কিনে নেন। এরপর তিনি এটিকে নিজের ভ্রাম্যমান বাড়ি ও গাড়ি হিসেবে গড়ে তোলেন। তিনি বাসটিতে পর্যাপ্ত সুবিধা রেখেছিলেন যাত্রীদের জন্য ও নিজেদের জন্যও। স্টুয়ার্ট এরপর একটি অভিনব পরিকল্পনা করেন। তিনি বাসে চড়ে আস্ট্রেলিয়ার সিডনি থেকে লন্ডনে নিজ বাড়ি যাওয়ার পরিকল্পনা করেন। এই দীর্ঘ পথ তিনি একা না গিয়ে সঙ্গে কয়েকজন যাত্রী নেওয়ার ব্যবস্থা করেন। সেইমতো তিনি ১৩ জন যাত্রী নিয়ে সিডনি থেকে রওনা দিয়ে ভারত হয়ে লন্ডনে পৌঁছান। এই যাত্রায় তিনি ১৬ হাজার কিলোমিটার পথ অতিক্রম করেছিলেন। 

বাসটি লন্ডন থেকে কলকাতায় আসার জন্য যাত্রা শুরু করে বেলজিয়াম, জার্মানি, অস্ট্রিয়া, যুগোশ্লোভিয়া, বুলগেরিয়া, তুরস্ক, ইরান, আফগানিস্তান, পাকিস্তান হয়ে অমৃতসর দিয়ে ভারতে প্রবেশ করত। এদেশে দিল্লি, আগ্রা, বেনারসে থেমে তারপর কলকাতা পৌঁছত। ভারত থেকে বার্মা, থাইল্যান্ড মালয়েশিয়া সিঙ্গাপুরের মধ্য দিয়ে জাহাজ কিংবা ফেরিতে পার হয়ে অস্ট্রেলিয়ায় প্রবেশ করে সিডনিতে পৌঁছত। বাসটির একটি শিডিউল অনুসারে, লন্ডন থেকে ১৯৭২ সালের ২৫ জুলাই যাত্রা শুরু করে ১১ সেপ্টেম্বর কলকাতায় পৌঁছোয়। এ যাত্রায় সময় লেগেছিল ৪৯ দিন, যা নিঃসন্দেহে বিস্ময়কর। 

যাত্রা পথে ১৫০ টিরও বেশি সীমান্ত অতিক্রম করত 'অ্যালবার্ট'। তবে কখনও কোনও আইনি জটিলতায় পড়েনি বাসটি। কখনও চেকিং বা নজরদারির আওতায়েও পড়েনি। এমনকি বাসের যাত্রীদেরও কখনও সন্দেহের চোখে দেখা হয়নিষ এমনকি এই দীর্ঘ পথ পাড়ি দিতে বাসের যাত্রীরা কখনওই একঘেয়ে বোধ করতেন না, কারণ তাঁদের সময় কাটানোর বেশ ভালো ব্যবস্থা ছিল। ডাবল ডেকার বাসের নিচের ডেকে খাওয়া এবং পড়ার জায়গা ছিল। ঘুমানোর জন্য ছিল আলাদা স্লিপিং বাঙ্ক। ঠাণ্ডা আবহাওয়ায় বাসের ভিতর গরম রাখতে ছিল হিটারও। তবে ১৯৭৬ সালে ইরানে রাজনৈতিক সঙ্কট দেখা দিলে অবরোধের কারণে বাস পরিষেবাটি বন্ধ হয়ে যায়। এরপর থেকে কেটে গিয়েছে অনেকখানি সময়। অবশেষে ২০১২ সালে বাসটি অস্ট্রেলিয়ায় ফিরিয়ে আনা হয়। 

ছবি সৌজন্যে- সোশ্যাল মিডিয়া
Blogger দ্বারা পরিচালিত.