১৯৪৭ সালে আজকের দিনেই কলকাতায় ছিলেন জাতির জনক মহাত্মা গান্ধী, কিন্তু কেন?


ইন্দ্রাণী মুখোপাধ্যায়, Odd বাংলা: রক্তক্ষয়ী সংগ্রামের পর অবশেষে ভারতমাতার পায়ে পরানো পরাধীনতার শিকল ভেঙে ১৯৪৭ সালের ১৫ অগাস্ট স্বাধীন স্বতন্ত্র সার্বভৌম দেশ হিসাবে উঠে এল ভারতবর্ষ। সেই ভারতবর্ষ যাকে স্বাধীন রূপ দিতে গিয়ে আত্মবলিদান দিয়েছিলেন তামাম দেশপ্রেমীরা। ভারতের আকাশে মাথা উঁচু করে উড়েছিল ভারতের গর্বের প্রতীক তেরঙ্গা জাতীয় পতাকা। 

তবে ভারতের স্বাধীনতা আন্দোলনে জাতির জনক মহাত্মা গান্ধীর অবদান কতখানি তা ইতিহাসের পাতায় স্বর্ণাক্ষরে লেখা রয়েছে। তাঁর নেতৃত্বে অসহযোগ এবং ভারতছাড়ো আন্দোলন সারা দেশজুড়ে ব্রিটিশদের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তুলেছিল। বহু বছরের কাঙ্খিত স্বাধীনতা দিবসের দিল্লিতে যখন উৎসবের আবহ সেই সময়ে কলকাতায় ছিলেন গান্ধীজি। অর্থাৎ ১৯৪৭ সালের ১৫ অগাস্ট ক্ষমতা হস্তান্তরের দিন খাস তিলোত্তমাকেই বেছে নিয়েছিলেন গান্ধীজি। 

সারা দেশে এ এক উৎসবমুখর দিন হলেও স্বাধীনতা দিবসে দিন সাম্প্রদায়িক দাঙ্গার সাক্ষী ছিল গোটা বাংলা। স্বাধীনতার এসেছিল ভারত এবং পাকিস্তান দুটি আলাদা রাষ্ট্রের উৎপত্তির হাত ধরে। তামাম দেশের মানুষ যখন স্বাধীনতার আনন্দে আত্মহারা তখন সীমান্তের কাঁটাতার কাঁটা হয়ে বিঁধেছিল বাঙলার মানুষের বুকে। 

স্বাধীনতা লাভের আগে ১৯৪৭ সালের ১৫ অগাস্ট, গান্ধীজি এসেছিলেন কলকাতায়(কলকাতাকে তখন যথেষ্ট পরিচিত) ও নোয়াখালিতে (বর্তমানে বাংলাদেশে অবস্থিত)- সেসময়ে সেখানে একটি সাম্প্রদায়িক গণহত্যা এবং সহিংসতায় জর্জরিত হয়ে উঠেছিল। কলকাতার শীর্ষস্থানীয় ব্যক্তিত্বরা গান্ধীকে পূর্ববঙ্গে না থাকার জন্য অনুরোধ করেছিলেন। তাঁরা অনুভব করেছিলেন যে, গান্ধীজি কলকাতায়, তিনি হয়তো কলকাতায় শান্তি ফিরিয়ে আনতে পারবেন, এইভাবে সমগ্র বাংলায় একটা শান্তির বাতাবরণ তৈরি হবে।
এরপর ১৩ অগাস্টের পরে, গান্ধীজি ব্যক্তিগতভাবে সমস্ত সম্প্রদায়ের মানুষকে শান্ত করার এবং তাদের সহিংসতা বন্ধ করার আহ্বান জানানোর প্রচেষ্টা শুরু করেন। অনেক সময়, বিক্ষুব্ধ জনতা মাথা নত করতে অস্বীকারও করেছিলেন, কিন্তু গান্ধীজি তাঁর প্রচেষ্টা চালিয়ে যান। কয়েক দিনের মধ্যে, ফলাফলটি সকলের সামনে প্রকট হয়ে ওঠে। 




এরপর অবশেষে সেই মাহেন্দ্রক্ষণ। ১৯৪৭ সালের ১৫ অগাস্ট গান্ধীজি ২৪ ঘন্টা উপবাস রেখেছিলেন। দিনভোর প্রার্থনায় মগ্ন ছিলেন এবং চড়কায় সুতো কেটেছেন। স্বাধীন ভারতের প্রথম গভর্নর জেলারেল চক্রবর্তী রাজা গোপালাচারী যখন গান্ধীজিকে শহরে শান্তি ফিরিয়ে আনার জন্য অভিনন্দন জানান, তখন গান্ধীজি তাঁর উত্তরে বলেছিলেন যে, তিনি ততক্ষণ সন্তুষ্ট হবেন না, যতক্ষণ না হিন্দু ও মুসলমানরা একে অপরের সাহচর্যে সুরক্ষিত না বোধ করে এবং আগের মতোই যে যার নিজের ঘরে ফিরে যান। 

এরপর গান্ধীজি দিল্লি ভ্রমণের পরিকল্পনা করেন এবং তারপরে পঞ্জাব এবং সেখান থেকে লাহোরে। এইভাবে সারা দেশে ধীরে ধীরে শান্তির বাতাবরণ এল। কিন্তু দুঃখের বিষয় এই যে, গান্ধীজি প্রবর্তিত অহিংসার অবসান ঘটল তাঁর সহিংস হত্যাকাণ্ডের মধ্যে দিয়ে। 
Blogger দ্বারা পরিচালিত.