সহবাস ছাড়াই গর্ভবতী হওয়া সম্ভব যেভাবে

Odd বাংলা ডেস্ক: যৌনতা সম্পর্কে যাদের সাধারণ জ্ঞান আছে তারা জানেন যে, অনিরাপদ সহবাসে গর্ভবতী হওয়ার ঝুঁকি রয়েছে। তাই তাদের পক্ষে এটা বিশ্বাস করা কঠিন যে, সহবাস ছাড়াও কেউ গর্ভবতী হতে পারে। কিন্তু অনলাইনে কিছু নারী দাবি করেছেন যে তারা যৌনমিলন ছাড়াই গর্ভধারণ করেছেন।

এ সম্পর্কে সাম্মি ইসাবেল একটি টিকটক ভিডিওতে তার ঘটনা শেয়ার করেছেন। এটা দ্রুত ভাইরাল হয়ে যায়। ইসাবেল জানান যে, তিনি পেটে ব্যথা অনুভব করেন এবং এক সপ্তাহ দেরিতে পিরিয়ড হয়েছে। সেসময় তিনি ভার্জিন থাকলেও কৌতূহলবশত প্রেগন্যান্সি টেস্ট করেন। তিনি রেজাল্ট দেখে বিস্ময়াভিভূত হন- পজিটিভ! তিনি ক্যাপশনে লিখেন, ‘এভাবে (যৌনমিলন ছাড়াই) আমার ৫ বছরের সন্তান রয়েছে।’

পরবর্তীতে টিকটকে ইসাবেল জোর দিয়ে বলেন যে, তিনি জনপ্রিয় হওয়ার উদ্দেশ্যে ভিডিওটি ছাড়েননি। তিনি কেবল মানুষকে জানাতে চেয়েছেন যে, যৌনমিলন ছাড়াও গর্ভধারণের সম্ভাবনা রয়েছে। ইসাবেলই প্রথম নারী নন যিনি এমন ঘটনা দাবি করেছেন। এর আগে লোলোটকস নামক ইউটিউব চ্যানেলে ওয়াথনি আনিয়াসি নামে এক নারী জানান যে, তিনিও ভার্জিন থাকাকালে গর্ভবতী হয়েছেন। ভিডিওটিতে তিনি বলেন, ‘নিজেকে গর্ভবতী জানতে পেরে আমি বেশ অবাক হই। আমি ভাবতে থাকি, এটা কিভাবে ঘটল?’


টিকটক, ইউটিউব কিংবা ফেসবুকের মতো সোশ্যাল মিডিয়াতে কেউ অবিশ্বাস্য কিছু দাবি করলে তা নিয়ে আমাদের সন্দেহ থাকতেই পারে। সাম্মি ইসাবেল ও ওয়াথনি আনিয়াসির কথাও এর ব্যতিক্রম নয়। ওদের দাবিকে আমরা মেনে না নিলেও স্ত্রীরোগ বিশেষজ্ঞদের মতে, তথাকথিত ভার্জিন প্রেগন্যান্সি বা যৌনমিলন ছাড়াই গর্ভধারণের সম্ভাবনাকে একেবারেই উড়িয়ে দেয়া যায় না।


যুক্তরাষ্ট্রের ন্যাশনাল লনগিটুডিনাল স্টাডি অব অ্যাডোলেসেন্ট হেলথের ডাটা অ্যানালাইসিস থেকে জানা গেছে, গবেষণায় অংশগ্রহণকারী ৭,৮৭০ জন নারীর মধ্যে ৪৫ জন জানান যে, তাদের ভার্জিন প্রেগন্যান্সি হয়েছে- যার সঙ্গে ইন-ভাইট্রো ফার্টিলাইজেশন (আইভিএফ) অথবা ইন্ট্রাইউটেরাইন ইনসেমিনেশনের (আইইউআই) মতো সন্তান জন্মদান প্রযুক্তির সম্পর্ক ছিল না। গবেষকরা দেখেছেন যে, এ ধরনের রিপোর্ট তাদের মধ্যে বেশি যারা বিয়ের আগে যৌনতায় জড়াবেন না বিষয়ক পত্রে স্বাক্ষর করেছেন অথবা যাদের পিতামাতা তাদের সঙ্গে যৌনক্রিয়া ও জন্মনিয়ন্ত্রণ সম্পর্কে তেমন কথা বলেননি। গবেষকদের জন্য এটা প্রমাণ করা কঠিন যে, কেউ যৌনমিলনে লিপ্ত না হয়েই গর্ভবতী হয়েছেন। এটা এতটাই স্পর্শকাতর বিষয় যে মুখের কথাকে বিশ্বাস করে গবেষণা এগিয়ে নিতে হয়েছে।



নর্থওয়েস্টার্ন ইউনিভার্সিটির অন্তর্গত ফেইনবার্গ স্কুল অব মেডিসিনের ক্লিনিক্যাল অবস্টেট্রিক্স অ্যান্ড গাইনিকোলজির অধ্যাপক লরেন স্ট্রেইচার বলেন, ‘অনেক চিকিৎসকই এরকম দাবি শুনেছেন- গর্ভবতী নারীরা জানান যে তারা এখনো ভার্জিন এবং হাইমেন অক্ষত।’

হাইমেন হলো অতিরিক্ত টিস্যুর পাতলা পর্দা। এটাকে বাংলায় সতীচ্ছদ পর্দা বলা হয়। হাইমেন নিয়ে কিছু ভুল ধারণা প্রচলিত রয়েছে। প্রাচীনকালে অক্ষত হাইমেনকে সতীত্বের প্রতীক মনে করা হতো, যার রেশ এখনো কিছুটা রয়েছে। চিকিৎসা বিজ্ঞানে ব্যাপক উন্নতির ফলে এখন আমরা জানতে পেরেছি যে, যৌনমিলন ছাড়াও ট্যাম্পনের ব্যবহার, শারীরিক পরীক্ষা, শরীরচর্চা ও অন্যান্য কারণে এই পর্দা ছিঁড়ে যেতে পারে। ডা. স্ট্রেইচারের মতে, ‘যদি কোনো নারীর হাইমেন অক্ষত থাকে এবং তিনি জানান যে কখনো সহবাস করেননি, তাহলে তার ভার্জিন প্রেগন্যান্সি সত্য হওয়ার সম্ভাবনাই বেশি।’

আরেক গাইনি চিকিৎসক (ইয়েল মেডিক্যাল স্কুলের অবস্টেট্রিক্স অ্যান্ড গাইনিকোলজি অ্যান্ড রিপ্রোডাক্টিভ সায়েন্সেসের ক্লিনিক্যাল প্রফেসর) মেরি জেন মিনকিনও সহমত যে, যৌনমিলন ছাড়াও কোনো নারী গর্ভবতী হতে পারেন। টেক্সাসের গাইনি চিকিৎসক ও নারী স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ জেসিকা শেফার্ড বলেন, ‘এভাবে গর্ভবতী হওয়ার সম্ভাবনা খুবই কম, কারণ শরীরের বাইরে শুক্রাণু খুব অল্পসময় বেঁচে থাকতে পারে। তারপরও এটা (ভার্জিন প্রেগন্যান্সি) সম্ভব হতে পারে এবং এরকম ঘটনা ঘটেছেও।’


যৌনমিলন ছাড়াই গর্ভধারণ হতে পারে কীভাবে? আমরা জানি যে গর্ভধারণ সংঘটিত হওয়ার জন্য শুক্রাণু ও ডিম্বাণুর মিলন প্রয়োজন, যা সাধারণত পুরুষাঙ্গ যোনিতে প্রবেশের পর বীর্যপাত হলে হয়ে থাকে। কিন্তু ডা. শেফার্ডের মতে, কখনো কখনো নারী-পুরুষের অন্তরঙ্গ মুহূর্তে যোনির আশপাশে বীর্যপাত হলেও শুক্রাণু-ডিম্বাণুর মিলন ঘটতে পারে। কিংবা পুরুষ হস্তমৈথুন করার পরপরই নারীর গোপনাঙ্গ স্পর্শ থেকেও। ডা. মিনকিন বলেন, ‘প্রথম কয়েক ফোঁটা বীর্যে প্রচুর শুক্রাণু থাকে, যা কোনোমতে জরায়ুমুখে পৌঁছতে পারলেই একজন নারী গর্ভবতী হতে পারেন।’

ডা. মিনকিন আরো বলেন, ‘অল্প বয়সি নারীদের ভার্জিন প্রেগন্যান্সির সম্ভাবনা বেশি, কারণ তারা খুবই উর্বর। নারীদের এটা মনে রাখা ভালো যে, যোনিতে পুরুষাঙ্গের প্রবেশ ছাড়াও বাস্তবিকপক্ষে গর্ভধারণ ঘটে যেতে পারে। পুরুষ সঙ্গী যোনিমুখে বীর্য ফেললেই এরকম ঘটনা ঘটতে পারে, কারণ শুক্রাণুরা ভালো সাঁতার কাটতে পারে।’

কোন মন্তব্য নেই

Blogger দ্বারা পরিচালিত.