কীটপতঙ্গ থেকে হরেক রকমের রং সংরক্ষণ করাই তার নেশা


Odd বাংলা ডেস্ক: পোরফিরিয়ো গুতিয়ারেজ মেক্সিকোর ওয়াক্সাকার টেওটিটলান ডেল ভেল গ্রামের বাসিন্দা। নিজ গোত্রে তার নাম 'এল মায়েস্ত্রো'। বর্তমানে ক্যালিফোর্নিয়ানিবাসী গুতিয়ারেজ একজন শিল্পী। তবে আরেকটা অন্যরকম কাজ করেন তিনি—রং সংরক্ষণ। শুধু যে সংরক্ষণ করেন তা নয়, প্রয়োজনে নতুন রংও সৃষ্টি করেন তিনি।

তবে হরেদরে সব রং সংরক্ষণ করেন না গুতিয়ারেজ। তার সংগ্রহ করা রং আসে প্রকৃতি থেকে। নতুন-পুরনো নানা প্রজাতির উদ্ভিদ ও কীটপতঙ্গ খুঁজে বের করে সেগুলোকে তিনি রঞ্জকে রূপান্তরিত করেন। 

এসব শুকানো উদ্ভিদ ও কীটপতঙ্গ থেকে হরেক রকমের রং বানিয়ে সেগুলো সংরক্ষণ করা হয় গুতিয়ারেজ ভেঞ্চুরা স্টুডিয়োতে। কৃষকরা যেভাবে বীজ সংরক্ষণ করে, ঠিক সেভাবে বছরের পর পর এসব কীটপতঙ্গ সংরক্ষণ করেন গুতিয়ারেজ। তার সংগ্রহ করা একজাতের পতঙ্গের নাম কোচিনীল। গুতিয়ারেজ তার স্টুডিয়োতে ক্যাকটাসে কোচিনীল 'চাষ করেন'। কোচিনীল ক্যাকটাসের পাতায় পরজীবীর মতো বেড়ে ওঠে। এরা ক্যাকটাসের রস খায়। এই রসের ফলে এদের দেহগহ্বরে কারমিনিক অ্যাসিড তৈরি হয়। কোচিনীল মরে গিয়ে শুকিয়ে যাবার পর গুতিয়ারেজ সেগুলোকে চূর্ণ করে কোমল  গুঁড়োয় পরিণত করেন। এ গুঁড়া থেকে তৈরি হয় লাল রং।

আজকাল আমাদের কাপড়চোপড়ে যে কৃত্রিমভাবে প্রস্তুত রং ব্যবহার করা হয়, সেসবের তুলনায় প্রাকৃতিক রং হাজারগুণ মানসম্পন্ন। গুতিয়ারেজ যে পদ্ধতিতে রং তৈরি করেন, তা সহস্র বছরের প্রাচীন। 

গুতিয়ারেজ অবশ্য চান না যে, বাণিজ্যিকভাবে প্রাকৃতিক পদ্ধতিতে রং তৈরি শুরু হোক। কারণ তাতে প্রাকৃতিক ভারসাম্য হুমকির মুখে পড়তে পারে। রঙের উপাদান সংগ্রহের জন্য প্রকৃতিকে বিপন্ন করে ফেলতে পারে মানুষ। গুতিয়ারেজের উদ্দেশ্য মানুষের জীবনে প্রকৃতির প্রভাব যে কতটা বিস্তৃত এবং প্রকৃতির কাছ থেকে আমরা যে কত কিছু গ্রহণ করি, তা চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দেওয়া। প্রকৃতি থেকে সংগ্রহ করা রঙের মাধ্যমে তিনি আমাদের তা দেখাতে চান। গুতিয়ারেজ দেখাতে চান, তার তৈরি রং-বেরঙের বস্ত্রের সঙ্গে মিশে রয়েছে প্রাচীন জ্ঞান ও পবিত্র প্রজ্ঞা।



গুতিয়ারেজের পূর্বপুরুষরা ছিলেন যাযাবর। এ ঐতিহ্য ধরে রাখার জন্য বিস্তর সংগ্রাম করতে হয়েছে তাকে। ১৮ বছর বয়সে নতুন সুযোগের সন্ধানে আমেরিকায় পাড়ি জমান তিনি। ১০ বছর পর ফিরে যান নিজ গ্রামে। তখনই সিদ্ধান্ত নেন, পূর্বপুরুষের ঐতিহ্য ধরে রেখে সেই ঐতিহ্য ছড়িয়ে দেবেন পরবর্তী প্রজন্মের কাছে। 

সেই থেকে তিনি শুরু করেন প্রাকৃতিক রং সংগ্রহ, সংরক্ষণ ও উৎপাদন। তার সেই উদ্যোগ এখন বড় আকার পেয়েছে। ক্যালিফোর্নিয়ায় নিজের স্টুডিয়োতে সংরক্ষণ করছেন নানা ধরনের বিপন্ন রং।

কোন মন্তব্য নেই

Blogger দ্বারা পরিচালিত.