পথের পাঁচালীর ৬৬ বছর পূর্ণ হল

Odd বাংলা ডেস্ক: লেখক অন্নদাশঙ্কর রায় বলেছিলেন, বাংলা উপন্যাসের ছোট একটা তালিকা করলেও ‘পথের পাঁচালী’কে বাদ দেওয়া অসম্ভব। দশখানার মধ্যে একখানা তো বটেই, পাঁচখানার মধ্যেও একখানা!

‘পথের পাঁচালী’, ‘অপরাজিত’ এবং ‘অপুর সংসার’ মূলত বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়ের পথের পাঁচালী ও তার পরের উপন্যাস অপরাজিতকে কেন্দ্র করে নির্মিত।

সত্যজিৎ রায় পরিচালিত এই তিনটি বাংলা চলচ্চিত্রে একত্রে অপুত্রয়ী হিসেবে পরিচিত। এই ত্রয়ীর প্রথম কিস্তি, সাড়া জাগানো চলচ্চিত্র ‘পথের পাঁচালী’ মুক্তি পায় ১৯৫৫ সালের ২৬ আগস্ট যার মাধ্যমে উপমহাদেশের চলচ্চিত্র বিশ্বমহলে নতুন এক পরিচিতি পায়।  

বিশ্ববিখ্যাত নির্মাতা জ্যাঁ রেঁনোয় ১৯৪৯ সালে কলকাতায় যান ‘রিভার’ চলচ্চিত্রের শুটিংয়ে। সেখানে সত্যজিৎ রায় তাকে চলচ্চিত্রের লোকেশন খুঁজতে সাহায্য করেন। সে সময়ই সত্যজিৎ রায় রেঁনোয়াকে ‘পথের পাঁচালী’র কথা বলেন, তখন রেঁনোয়া তাকে এটি নির্মাণে উৎসাহ দেন। ১৯৫০ সালে লন্ডন সফরে ছয় মাসে ৯৯টি চলচ্চিত্র দেখেন সত্যজিৎ রায়। এরমধ্যে ইতালীয় পরিচালক ভিত্তোরিও ডি সিকারের ‘বাইসাইকেল থিভস’ চলচ্চিত্রটি তাকে ভীষণ অনুপ্রাণিত করে। প্রেক্ষাগৃহ থেকে বেরিয়েই সত্যজিৎ রায় সিদ্ধান্ত নেন, তিনি চলচ্চিত্র পরিচালনা করবেন। এরপরই শুরু হয় সত্যজিৎ রায়ের চলচ্চিত্র অভিযান।

কোনো এক চলচ্চিত্রপাঠ অনুষ্ঠানে জিজ্ঞাসা করা হয়েছিল, ‘পথের পাঁচালী’ চলচ্চিত্রে একটি খলচরিত্র আছে সেটি কে (কি)? অনেক ভাবনার পর উত্তর এলো। ‘পথের পাঁচালী’ চলচ্চিত্রের খলচরিত্র অন্য কিছুই না, সেটি হলো দারিদ্র! প্রখ্যাত সাহিত্যিক বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায় পথের পাঁচালী উপন্যাসটি প্রকাশ করেন ১৯২৯ সালে। চিরায়ত বাংলার গ্রামে দুই ভাইবোন অপু আর দুর্গার বেড়ে ওঠার ঘটনা নিয়ে লেখা উপন্যাসের ছোটদের জন্য সংস্করণটির নাম আম আঁটির ভেঁপু।  

১৯৪৩-৪৪ সালের দিকে সত্যজিৎ রায় যখন এক নামকরা প্রকাশনী সংস্থার মালিক ডি কে গুপ্তর অফিসে প্রচ্ছদের কাজ করতেন। সে সংস্থায় কাজ আসে পথের পাঁচালী উপন্যাসের একটি কিশোর সংস্করণ আম আটির ভেঁপু প্রকাশের। সেই বইয়ের তিনি যখন প্রচ্ছদ আঁকতে যান, তখনই তিনি প্রথম উপন্যাসটি পড়েন এবং নিজের প্রথম চলচ্চিত্র হিসেবে এটিকেই নির্মাণের জন্য বেছে নেন। ‘পথের পাঁচালী’ চলচ্চিত্রের আসলে কোনো চিত্রনাট্য লেখা হয়নি। সত্যজিৎ তার আঁকা ছবি ও টীকাগুলি থেকে এই চলচ্চিত্রটি নির্মাণ করেন। তিনি অফিসের কাজে ১৯৫০ সালে লন্ডনের উদ্দেশ্যে সমুদ্রযাত্রার সময় জাহাজে বসে কালজয়ী চলচ্চিত্রের সমস্ত নোটগুলো লেখেন।

কোন মন্তব্য নেই

Blogger দ্বারা পরিচালিত.