কম খরচে প্লাস্টিক সার্জারির দেশ, বিচ্ছেদ সেখানে সুখকর বিষয়


Odd বাংলা ডেস্ক: একটি দেশ আছে, যে দেশের মানুষের হাতে থাকে অস্ত্র, পেটে থাকে ক্ষুধা আর কোমরে থাকে নাচ। এই দেশটিতে একটি গরুর পা ভাঙাকে নিয়ে মারামারি করে নয় জনের মৃত্যুর ঘটনা যেমন ঘটেছে, তেমনি কোনো একটি উপলক্ষ পেলেই এখানকার মানুষেরা ঢোল বাদ্য বাজনা নিয়ে মেতে ওঠে নাচে গানে। আবার আপনি যদি পৃথিবীতে সবচেয়ে কম খরচে প্লাস্টিক সার্জারি করাতে চান তাহলে আপনার অবশ্যই যেতে হবে এই দেশটিতে। তাছাড়া দেশটিতে বিচ্ছেদের পর নারীদের জন্য বিশেষ উৎসবমুখর অনুষ্ঠানের আয়োজন করে থাকে তার পরিবার।

আপনাদের সবারই হয়তো মনে হচ্ছে, এমন কোন দেশ? যেখানে এসব অদ্ভুত বিষয়গুলো বিদ্যমান। আফ্রিকায় অবস্থিত এই দেশটির নাম মৌরিতানিয়া। দেশটি আফ্রিকা মহাদেশে হলেও দেশটিতে প্রায় ৯৯ শতাংশ লোক মুসলমান। দেশটি ১৯৬০ সালে ফ্রান্সের কাছ থেকে স্বাধীনতা লাভ করে। আয়তনে দেশটি আমাদের দেশের চেয়ে প্রায় ৯ গুণ বড় হলেও দেশটির জনসংখ্যা মাত্র ৪৪ লাখের একটু বেশি। আর এই আয়তনের তিনভাগের দুইভাগই বালুতে ঘেরা। কেননা দেশটির অধিকাংশ জায়গায় সাহারা মরুভূমির বালুতে আচ্ছাদিত। 

আমাদের দেশে বিয়ের আগে মোটা মেয়েরা শুকানোর জন্য উঠেপড়ে লাগে। আর এই দেশটিতে চিকন নারীর থেকে মোটা নারীদের বেশি সুন্দরী মনে করা হয় এবং বিবাহের ক্ষেত্রেও মোটা নারীদের বেশি প্রাধান্য দেয়া হয়। এমনকি একজন মেয়ে বিবাহের যোগ্য কিনা তা নির্ধারণ করা হয় তার ওজন দেখে। সেজন্যই মেয়েরা কম বয়স থেকেই ওজন বাড়ানোর জন্য বেশি বেশি খাওয়া দাওয়া করে। এই দেশে বিয়ের পর একটি মেয়ের ভুঁড়ির স্তরের সংখ্যা যত বেশি হয়, তাকে ততটা সুখী মনে করা হয়।

বিবাহবিচ্ছেদ একজন নারীর জন্য শোকের একটি বিষয়। তবে মৌরিতানিয়া দেশটিতে বিচ্ছেদ নারীদের জন্য সুখকর বিষয়। এই দেশে বিচ্ছেদের পর নারীদের জন্য বিশেষ উৎসবমুখর অনুষ্ঠানের আয়োজন করে থাকে তার পরিবার। যেখানে তাদের আত্মীয়-স্বজন, পাড়া-প্রতিবেশীসহ সব তালাকপ্রাপ্ত নারীরাও আমন্ত্রিত থাকে। অপরদিকে যে ছেলের ডিভোর্স হয় তার কাছ থেকে মেয়েরা দূরে দূরে থাকে।

পৃথিবীর প্রায় সব দেশেই ধর্ষণ একটি গুরুতর অপরাধ হলেও এই দেশটিতে কোনো নারী ধর্ষিত হলে সেই দোষ নারীর উপরেই আসে। কেননা ধর্ষণের পর নারীকে প্রমাণ করতে হয় যে, তার ইচ্ছার বিরুদ্ধে শারীরিক সম্পর্ক হয়েছিল। আর তা প্রমাণ করা একটু কঠিনই বটে। 


মৌরিতানিয়া দেশটির রাস্তায় কোনো মালবাহী গাড়ি যদি নষ্ট হয়ে যায়, তবে আশেপাশের সবাই তাকে সৃষ্টিকর্তার উপহার মনে করে। এখানে তারা যুক্তি দেখায় এটা যে কোনো জায়গায় নষ্ট হতে পারতো। যেহেতু এটা আমাদের কাছে এসে নষ্ট হয়েছে, তাই এটা আমাদের কাছে উপহার। তাই কোনো মালবাহী গাড়ি নষ্ট হলে সবাই এসে সাহায্য করার বদলে গাড়ির মাল লুটপাট শুরু করে দেয়। এটা আমাদের কাছে অবাক করা লাগবে। তবে এটাই বাস্তব। 

আরো মজার একটি বিষয় হলো কোনো যানবাহন নষ্ট হলে তাকে উদ্ধার বা ঠিক করার মতো কোনো মানুষ বা যন্ত্র এই দেশে নেই। গাড়িতে ছোট কোনো সমস্যা হলেও গাড়ির পাশে তাঁবু টানিয়ে বসে থাকতে হয় তিন থেকে চারদিন। কারণ সে গাড়ি ঠিক করতে প্রতিবেশী দেশ থেকে মিস্ত্রি এনে দেখাতে হয়। তবে মজার বিষয় হলো কোন গাড়ি যদি মিস্ত্রি মেরামতে ব্যর্থ হয় তবে সেই গাড়ি রাস্তার পাশে ফেলে রেখে দেয়া হয়। 

এই দেশটির মানুষের প্রধান খাদ্য হচ্ছে কাসাভা নামের আলু। এটি একটি এক ধরনের শক্ত কান্ডওয়ালা গাছ। মাটির নিচে হওয়া এই আলুকে নানা উপায়ে প্রক্রিয়াজাত করে মানুষ খাওয়ার উপযোগী করে তোলে। তারা এটি থেকে এক ধরনের ময়দা তৈরি করে থাকেন। যা কাসাভা ময়দা নামেই পরিচিত। 

এই দেশটিতে চুনা পাথরের তৈরি একটি কাঠামো আছে। যা দেখতে চোখের মতো হলেও একে আফ্রিকার চোখ বা সাহারার চোখ বলা হয়ে থাকে। ধারণা করা হয়, হাজারো বছর আগে উল্কাপিন্ডের আঘাতের উৎপত্তি হয়েছিল। সাহারা মরুভূমির প্রায় ৫0 কিলোমিটার জুড়ে ব্যপ্ত এই বৃত্তাকার কাঠামোটি মহাকাশ থেকেও দেখা যায়। 


পৃথিবীর সবচেয়ে দীর্ঘতম রেল গাড়িটি এই দেশের সাহারা মরুভূমির ভেতর দিয়ে চলাচল করে। এই ট্রেনটি এতটাই লম্বা যে এটি দৈর্ঘ্য প্রায় তিন কিলোমিটার ছাড়িয়ে যায়। পৃথিবীর শেষ দেশ হিসেবে ১৯৮১ সালে এই দেশটির দাস প্রথা নিষিদ্ধ করেন। কিন্তু অনেকেই মনে করেন দেশটিতে এখনো দাস প্রথা প্রচলিত আছে।

কোন মন্তব্য নেই

Blogger দ্বারা পরিচালিত.